সৈয়দপুরে স্ত্রীকে নির্যাতন করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়ার অভিযোগ

  তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :

“যদি যৌতুক নিতে না পারিস, তাহলে তোকে সন্তান জন্ম দিতে দিব না ”। এই বলে পাষন্ড স্বামী তার গর্ভবর্তী স্ত্রী মাহজাবিনের তলপেটে লাথি মারে। আর এতে তাঁর প্রচুর রক্তরক্ষণ হয়। পরবর্তীতে ওই গৃহবধূর ৪৫ দিনের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে সৈয়দপুর শহরের গার্ডপাড়া মহল্লায় গত বুধবার সকালে। যৌতুকের দুই লাখ টাকার জন্য স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতন করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া  হয়েছে। নির্যাতিত নববধূ নিজেই গত ২০ আগস্ট (রবিবার) রাতে সৈয়দপুর থানায় ওই লিখিত অভিযোগ করেন।
থানায় দেওয়া অভিযোগে জানা গেছে, সৈয়দপুর শহরের রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা ঊর্দূ কবি মৃত. মেরাজুল আরেফিনের মেয়ে মাহ্জাবিন। চলতি বছরের গত ৫ মে শহরের গার্ডপাড়া মৃত. কলিমের ছেলে মো. মতিনের সঙ্গে এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় তাঁর (মাহজাবিন)। মেয়ে মাহজাবিনের বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্রসহ তাঁর অসহায় মা ধারদেনা করে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বিদায় দেয়। যদিও বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়া নেওয়ার বিষয়ে কোন রকম দাবি কিংবা কথাবার্তা ছিল না। কিন্তু বিয়ের সপ্তাহখানেক যেতে না যেতে পাষন্ড স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের জন্য নববধূ মাহজাবিনের ওপর বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৬ আগস্ট সকালে মতিন ও তাঁর বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জোটবদ্ধ হয়ে মাহজাবিনের কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে বসে।
 মাহজাবিন বলেন, আমার তাঁর বাবা নেই, মাও একজন বৃদ্ধা অসহায় মানুষ। অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে অনেক কষ্ট করে টাকা -পয়সা যোগাড় করে আমাকে বিয়ে দেন। এ অবস্থায় তাঁর মায়ের পক্ষে যৌতুকের ২ লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে  স্বামীকে সাফ জানিয়ে দেয়। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর স্বামী মতিন ও বোন, বোন জামাইসহ দূরাত্মীয়রা। “যদি যৌতুক নিতে না পারিস, তাহলে তোকে সন্তান জন্ম দিতে দিব না ” এই বলে পাষন্ড স্বামী মতিন প্রথমে তার গর্ভবর্তী স্ত্রী মাহজাবিনের তলপেটে সজোরে লাথি মারে। আর  এ সময় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গৃহবধূ মাহজাবিনের ওপর চড়াও হয়ে কিলঘুষি ও এলোপাতাড়ি মারডাং করে। এতে গৃহবধূর শরীরে  ফোলা জখমসহ প্রচুর রক্তরক্ষণ হয়। এ সময় প্রচন্ড ব্যাথায় কাতর মাহজাবিনের চিৎকারে আশপাশে লোকজন ও মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে বৃদ্ধা মা মোছা. শাহজাহা  দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্টের ঘোষণা দেন। পর দিন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
গত রবিবার রাতে সেখান থেকে সৈয়দপুর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেন মাহজাবিন। পুলিশ অভিযোগটি গ্রহন করলেও তা মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করেননি।
নির্যাতিতা মাহজাবিনের বৃদ্ধা মা মোছা. শাহজাহা বেগমের সঙ্গে গত রবিবার রাতে সৈয়দপুর থানা চত্বরে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ওর  (মেয়ে) বাবা নেই। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। তারপরও অনেক কষ্ট করে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে মেয়ে বিয়ে দেয়। আশা করেছিলাম মেয়েটি আমার সুখে-শান্তিতে স্বামীর ঘর সংসার করবে। এখন দেখি যৌতুকের টাকার জন্য জামাতা মেয়ের ওপর নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেছে। আমি যৌতুকের দাবিকৃত এতোগুলো টাকা কোথায় পাব বলেন ?
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত মতিনের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের বিষয়ে সহকারি উপ-পরির্দশক (এএসআই) মো. জুয়েল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
 সৈয়দপুর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, ব্যস্ততার কারণে বিষয়টি তদন্তে যেতে পারেনি। তবে অভিযোগকারী সঙ্গে আমার মুঠোঠোনে কথা হয়েছে।  আজই সময় করে বিষয়টি তদন্তে ঘটনাস্থলে যাব।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1858463944613057044

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item