সৈয়দপুরে বানভাসী দূর্গতরা দিশেহারা : জনপদ জুড়ে বন্যার ক্ষতচিহ্ন

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

 সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বন্যার তান্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। বাড়ি-ঘর, পথঘাট ও ক্ষেত-খামারের বিধ্বস্ত রূপ নতুন করে দুর্ভোগে ফেলেছে বানভাসী মানুষদের। দূর্গত মানুষ ক্ষতবিক্ষত বাড়ি-ঘরে ফিরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল সরকারি ত্রাণ সহায়তায় অসন্তোষ বিরাজ করছে দূর্গতদের মধ্যে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
 গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার  ৪ নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ ৪, ৫ ও ৯নং ওয়ার্ডের তেলিপাড়া,ভুল্লিপাড়া, প্রামানিকপাড়া,বকপাড়া, ঘোনপাড়া, জামবাড়ি, সাতপাই ও জানেপাড় এলাকার গ্রাম বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। রোপা আমন ক্ষেতের ৮০ ভাগ রোপার গোড়া পঁচে বিনষ্ট হয়েছে। কোথাও রোপা আমনের বীজ চারা না থাকায় এসব জমিতে নতুন করে রোপা আমন লাগানো সম্ভব হবে না। বসতভিটার মেঝের মাটি প্রবল ঢলে ধুয়ে গেছে, ঘরের ধান-চালও কাঁদা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট বন্যার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। খড়খড়িয়া নদীর ১০০ ফুট বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে, জানেরপাড় এলাকায় নদী পারাপারের একমাত্র সাঁকো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শহরে আসতে কয়েক মাইল ঘুর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের। ইউনিয়নের ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের তেলীপাড়ায় কথা হয় সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, তার দেড় একর আমন ক্ষেত পানি খেয়ে ফেলেছে। ঘরে এবার ধান উঠবে না। একই কথা বলেন লুৎফর। ৯নং ওয়ার্ডের বকপাড়ার খয়রাত হোসেন, শাহাজাহান ও অছির উদ্দিন জানান, বন্যা তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন তারা।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল হেলাল চৌধুরী জানান, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। খড়খড়িয়া নদী তীরবর্তী এ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩টি ওয়ার্ডের সর্বত্র বন্যায় ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতচিহ্ন। পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর রোপা আমনের ক্ষেত। পানির তোড়ে ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিণত হয়ে গ্রামের ১০ কিলোমিটার রাস্তা। ভুল্লি পাড়ায় খড়খড়িয়া নদীর ১০০ ফুট বাঁধ ভেঙ্গে বিধ্বস্ত হয়েছে। গ্রামের একমাত্র পারাপারের সাঁকো ভেসে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তার ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৯নং ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই নাজুক। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় দূর্গতদের ত্রাণ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই তিন ওয়ার্ডের প্রায় ৭ হাজার মানুষ সর্বশান্ত হয়ে গেছে। বন্যায় প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা, ২ হাজার একর রোপা আমন ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার গবাদিপশু ও শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি ত্রাণ সহায়তা মিলেছে ৪ মেট্রিক টন চাল ও ৪০ প্যাকেট খাদ্যপণ্য। তবে নগদ অর্থ মেলেনি। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছি। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না মেলায় দূর্গত মানুষের কাহিল অবস্থা চলছে। বড় ধরনের ত্রাণ সহায়তা না পেলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাহিদামত ত্রাণ ও নগদ অর্থ বরাদ্দের কোন নিশ্চয়তা মিলছে না। তিনি তার ইউনিয়নের দূর্গত মানুষের পুনর্বাসনে বিশেষ সরকারি ত্রাণ সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।
 সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন জানান, পাঁচ ইউনিয়নই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যা জনপদ জুড়ে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে। এলাকায় ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের পুনর্বাসনে সম্ভাব্য সবকিছুই করা হবে।       

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4060885213591894242

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item