পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলা প্লাবিত : পানিবন্দী কয়েক হাজার মানুষ

সাইদুজ্জামান রেজা পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ-

টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে পঞ্চগড় শহরসহ পাঁচ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। শহরের করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, ভেরসাসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী পাড়ের মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
 জেলা শহরসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ বিভিন্ন স্কুল কলেজে আশ্রয় নিচ্ছে। আকষ্মিক এই বন্যায় ডুবে যাওয়ায় ঘরে মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখেই অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসছে। রাত থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিস্কাশন ও আলোর ব্যবস্থা না থাকায় শিশু নারীসহ লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করতে পারে। অনেক বসতবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জরুরি ত্রাণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। গত চারদিন ধরে অবিরাম বর্ষণে ভাসমান, দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পঞ্চগড় সদর ও তেতুলিয়া উপজেলা। করতোয়া ও মহানন্দা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, আমন ক্ষেত, রাস্তাঘাট। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি উঠেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্লাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলার তেতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ভেরসা নদীর ওপর নির্মিত ভেরসা প্রকল্পের একটি গেট ভেঙ্গে গেছে। গেটগুলো না খোলায় আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।জেলা শহরের পৌর এলাকার নিমনগর, খালপাড়া, রামেরডাঙ্গা, রাজনগর, তুলারডাঙ্গা, সদর উপজেলার ধাক্কামারা, কামাত কাজলদিঘী, চাকলাহাট, পঞ্চগড় ইউনিয়ন, তেতুলিয়া উপজেলার শালবাহান, দেবনগর, তীরনইহাট, বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন, বোদা উপজেলার পৌরসভা, বেংহারী বনগ্রাম, কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ, মাড়েয়া ইউনিয়নেও করতোয়া নদীর বেশ কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার লোকজন অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন। পঞ্চগড় রেল লাইনের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল ও পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।  বোদা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, বোদা উপজেলা সদরে বোদা পাথরাজ কলেজ, বোদা মহিলা কলেজ ও বোদা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং বেংহারী ইউনিয়নে দু'টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। করতোয়া বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়ার বিপদসীমা হচ্ছে ৭০.৭৫ মিটার। শনিবার সকাল ৯টায় মাপা হয়েছে ৬৯.৮১ মিটার। নদীর পানি আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। ভেরসা প্রকল্প ঠিক করতে টেকনিক্যাল টিম বিকেলের মধ্যে পৌঁছাবে।  জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, সকাল সাড়ে ৬টায় (পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায়) ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেলায় ১২০ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত না হলে পানি নেমে যাবে। তবে তিন দিন পর্যন্ত আমন ক্ষেত ডুবে থাকলেও আমনের কোন ক্ষতি হবে না। পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পৌরসভার বেশ কয়েকটি এলাকা করতোয়া নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লোকজন পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রামেরডাঙ্গা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্কুল কলেজে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, পৌরসভার মেয়রসহ পাঁচ উপজেলার ইউএনও সাহেবদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা বিতরণের জন্য বলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের সাহাযার্থে যা কিছু আছে তা দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ ও টাকা চেয়ে ঢাকায় ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 858750677090366545

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item