কিশোরগঞ্জে সাত বছরে ছয় শতাধিক গরুর মৃত্যু দিশেহারা কৃষক

মোঃ শামীম হোসেন (বাবু)কিশোরগঞ্জ,নীলফামারীঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে গত ছয় বছর ও চলতি বছরে ১৮০জন  কৃষকের ৬ শতাধিক গরু মারা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ একটি চক্র কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে গরু পেতে কলার সাথে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে গরুকে খাইয়ে দিয়ে প্রথমে গরুকে অসুস্থ করে। পরে তারাই আবার কৃষকের কাছ থেকে অসুস্থ গরুগুলো ক্রয় করে। এ ঘটনায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যাকে ওই চক্রটির তিনজন সদস্যর নামে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার না পেয়ে গত ১০ জুলাই তিন জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যাবস্থা না নেওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
 মঙ্গলবার থানার লিখিত অভিযোগ সুত্রে  সরেজমিন গিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাহাগিলি ইউনিয়নের দক্ষিন বাহাগিলি টেপাদহ, নলঝুড়িপাড়া, কদমতলি টাকুরপাড়ায় গত ছয়  বছর ও চলতি বছরে ১৮০ কৃষকের প্রায় ৬ শতাধিক গরু মারা যায়।ফলে ওইসব গ্রামের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কৃষকেরা জানায়, সুস্থ গরু গোয়াল ঘর থেকে বের করে মাঠে বেঁধে আসার পর হঠাৎ করে গরুর পেট ফুলে গিয়ে মাটিতে পরে যায়। কিছুক্ষন ছটফট করার গরুগুলো মুমুর্ষ হয়ে পড়ে। কৃষকরা জানিয়েছে ওই চক্রের  আব্দুল হামিদ (টন্না) আকালু মামুদ ও আফছার আলী কৃষকদের  মুমুর্ষ গরুগুলো মারা যাওয়ার আগে তাদের কাছে বিক্রি করতে বলে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাদের কাছে গরুগুলো অল্প দামে বিক্রি করে।
টেপাদহ গ্রামের কৃষক আবতাফ উদ্দিনের ছেলে নুরউদ্দিন বলেন,  ২০১৩ সালের ১২ ই অক্টোবর  আমার দুটি হালের বলদসহ তিনটি গাভী  হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। আমি গরুগুলোকে চিকিৎসা করাতে চাইলে আব্দুল হামিদ আমাকে বলে যে অসুস্থ গরু চিকিৎসায় ভাল হয়না। গরুগুলো তাড়াতাড়ি বিক্রি কর। আমি তার কথায় রাজি না হয়ে গরুর চিকিৎসা করাতে থাকি। কিন্তু চিকিৎসা করার পরও গরুগুলো বাঁচাতে পারিনি। 
ওই গ্রামের বিধবা টুল্লি বেওয়া বলেন,  এক বছর আগে ব্য্রাক অফিস থেকে একটি এড়ে ও একটি বাছুর পেয়েছিলাম। বর্তমান গরুদুটি বাজারে বিক্রি করলে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। গত ৯ জুলাই সুস্থ গরু সারাদিন মাঠে ঘাস খাইয়ে নিয়ে আসি গোয়ালে ঢুকার আগে গরু দুটির  হঠাৎ করে পেট ফুলে গিয়ে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এর পর মাটিতে পরে গিয়ে কিছুক্ষন ছটফট করে মারা যায়।
কদমতলি টাকুরপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মহুবার রহমান বলেন,  ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার দুইটি বলদ গরু  অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। গরুটি মারা যাওয়ার আগে আমি তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে ভেটেনারী চিকিৎসক নিয়ে এসেছিলাম। তিনি গরু দুটিকে চিকিৎসা দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল গরু গুলো ফুট পয়জনিংয়ে আক্লান্ত হয়েছিল।
টেপাদহ গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাঁথা সেলাই করে ও অন্যোর বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে একটি গাভী কিনেছিলাম। কিন্তু আমার সেই গাভীটি অজানা রোগে আক্লান্ত হয়ে মারা গেছে।
 এছাড়াও গোলাপি বেগমের ১ টি, লাইলী বেগমের ২ টি, আমজাদ হোসেনের ৩ টি, জমসের আলীর ৬ টি, রেজাউল হকের ১ টি, সহ তিন গ্রামের ১৮০ জন কৃষকের গত বছর ও চলতি বছরে ৬ শতাধিক মারা গেছে।
বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ দুলু বলেন, ওই গ্রামে গরুগুলো মারা যাওয়ার পর কৃষকরা আব্দুল হামিদ নামে এক জনকে  দায়ী করে শতাধিক কৃষক গ্রাম আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল সে পলাতক থাকায় বিচার করা হয়নি। এরপর গত ৯ জুলাই টুল্লি বেওয়ার দুটি গরু মারা যায়।  এ ঘটনায় টুল্লি বেগমের ভাই এমদাদুল বাদী হয়ে থানায় লিখিত  তিন জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে।
কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রশিদ জানান, গত ৯ জুলাই ওই গ্রামের টুল্লি বেগমের দুইটি গরু মারা গেছে। টুল্লি বেগমের ভাই এমদাদুল হক বাদী হয়ে তিন জনের নামে অভিযোগ দিয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা বললে  তিনি বলেন, আমি ওই এলাকায় গিয়েছিলাম।   কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন কৃষকের গরু মারা গেছে ঠিক কিন্তু চলতি বছরের ৯ জুলাই টুল্লি বেগম নামে একজনের দুটি গরু মারা গেছে। গুরগুলো মাটিতে পুতে ফেলায় কি কারনে গরুগুলো মারা গেছে তা বলা যাচ্ছেনা।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 8921377188744431902

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item