নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৫ আগষ্ট॥ তিস্তার নদীতে পানি কমছে। গত দুইদিন ধরে বৃস্টিপাত না হওয়ায় আজ মঙ্গলবার নীলফামারী জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বেশ উন্নতি ঘটেছে। এ ছাড়া টানা ৫ দিন পরে দেখা মেলেছে চড়া রৌদ্রু। তবে এখনও অনেক স্থান হতে বানের পানি নেমে যেতে না পারায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে।  এদিকে উজানের ঢল কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে ভারতের গজলডোবার লকগেট গেট খুলে দেয়ায় সেই পানির ঢলে তিস্তা বাংলাদেশের ডালিয়ায় বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। নদীর পানি কমে আসলেও বন্যা ও ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলো চরম দূর্ভোগ পড়েছে। তিস্তা নদীর ডানতীর বাঁধে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য পরিবার এখনও গবাধীপশু নিয়ে অবস্থান করছে।
জেলার ছয় উপজেলার ৬০ ইউনিয়ন ও চার পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় বানের পানি প্রবাহিত হলেও তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। গ্রামের ও পৌর শহরের অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃস্টি করেছে।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭জনে।   সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া নদীর ভাঙা বাঁধের ¯্রােতে ভেসে গিয়ে মারা যায় উপজেলার হাতিখানা লায়ন্স স্কুল মহল্লার মৃত. জয়নাল আবেদীনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম রতন (১৮) ও শহরের কাজীপাড়া মহল্লার আব্দুল হামিদের ছেলে আরিফ (১৪)। গতকাল সোমবার (১৪ আগষ্ট) দুপুরে ওই দুইজন ভেসে গেলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদল সন্ধ্যায় তাদের উদ্ধার করে। অপরজন হলো নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী শান্তিনগর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে বেলাল হোসেন (১৬)। কলার ভেলা উল্টে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে গত রবিবার (১৩ আগষ্ট) কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় চাঁড়ালকাঁটা নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যুবক সুজন আলীর (২২) লাশ আজ মঙ্গলবার সকাল সারে ৮টার দিকে উপজেলার বাহাগিলি বালুরঘাট বিজ্রের নিচ থেকে উদ্ধার করে ডুবুরি দল। নিহত সুজন উপজেলার সদর ইউনিয়নের হোসেন আলীর ছেলে। একই দিনে রবিবার বিকেলে খেলার ছলে বাড়ির পাশের পুকুরে ডুবে যায় ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের খানকাপাড়া গ্রামের আজিজুল ইসলামের চার বছরের ছেলে সাদিক ও একই উপজেলার হরিনচড়া ইউনিয়নের আটিয়াপাড়া গ্রামের শরিফ মিয়ার দুই বছরের শিশু কন্যা শিলা আক্তার। গতকাল সোমবার (১৪ আগষ্ট) চিকলি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর সাতপাই গ্রামের সোলেমান মিয়া ছেলে জাকারিয়া (৪০)।

পৃথক স্থানে ৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম, ভোগডাবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক, কিশোরীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা রেদওয়ানুজ্জামান এবং সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।

এদিকে বন্যার পানির চাপে সোমবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরের দেওয়াল ভেঙ্গে রানওয়েতে বানের পানি প্রবেশের আশংকা ছিল তা কেটে গেছে। তবে সৈয়দপুর ১০০ শর্য্যা হাসপাতাল চত্বরের নিজ তলা এখনও হাটুপানিতে তলিয়ে রয়েছে। গতকাল সোমবার (১৪ আগষ্ট) এই হাসপাতালে পানি ছিল কোমড় সমান।
জেলার তিস্তা নদী সহ বিভিন্ন নদীর পানি কমে আসায় লাল সর্তকতা তুলে নেওয়া হয়েছে।

জেলার কন্ট্রোল রুম সুত্র মতে, তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে ডিমলা উপজেলায় ৮ হাজার ৬৮৫ ও জলঢাকা উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ পরিবার  সহ  ১৬ হাজার ১৮৫ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। এ ছাড়া টানা বর্ষন ও বিভিন্ন নদীর উপচে পড়া বন্যায় জেলার ছয় উপজেলা ও চার পৌরসভায়  ২৫ হাজার ৩৫০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়। এতে সর্বমোট জেলার ৪১ হাজার ৫৩৫ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। এতে জেলার ২০ লাখ মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়ে। সরকারী ভাবে এ পর্যন্ত বিতরনের জন্য ১৮৭ মেট্রিন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে বন্যা কবলিত এলাকায় চাল,নগদ অর্থ ও শুকনা খাবার বিতরন অব্যাহত রয়েছে।

নীলফামারী জেলা শহরের পৌর এলাকায় বন্যায় কাঁচা পাকা রাস্তঘাট কালভার্ট এবং ড্রেন নষ্ট হয়ে প্রায় ১২ কোটি ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ জানান, পৌরসভার ফুড অফিস থেকে উপজেলা মোড়, সার্কিট হাউজ পাড়া থেকে হেলালের গ্যারেজ, কলেজ স্টেশন থেকে টুপির মোড়, সাধুর বাজার থেকে খাটামারা, হাসপাতালের চত্বর থেকে বোছারধার, শাখামাছা বাজার থেকে দেবিরডাঙ্গা, মানিকের মোড় থেকে বারইপাড়া, ডালপট্টি থেকে মিলনপল্লী, টার্মিনাল, চিনি মোড় থেকে খয়বারের মিল, হান্নান শাহ মোড় থেকে ধনীপাড়া, চেতাশার রেলঘুন্টি থেকে ফকিরগঞ্জ হাট, দরবেশ পাড়া মসজিদ থেকে বাইপাস, ডাকবাংলো মোড়, গাছবাড়ি থেকে পঞ্চপুকুর পাড়া এবং জব্বারের বাড়ি থেকে মনসুর মিয়ার বাড়ি পর্যন্তকাঁচা ও পাকা রাস্তা এবং ড্রেন ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। এতে প্রায় ১২ কোটি ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, এর আগে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল ও তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরন সেক্টর প্রকল্পের অর্থ থেকে রাস্তা ও ড্রেনগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। #


পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5624892042609686250

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item