ডিমলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুকে গাছে বেধে নির্যাতনের অভিযোগ


বিশেষ প্রতিনিধি ৫ আগষ্ট॥


শেফালী বেগম (৩২) নামের এক গৃহবধুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউয়নের বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ও এক বিএনপি নেতার  বিরুদ্ধে। খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলন ঝাড় গ্রামের এই ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে  প্রবাহিত করতে প্রভাবশালী নেতারা দিনদুপুরে শেফালী বেগম গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মর্মে গরুসহ গাছে বেধে পুলিশকে সংবাদ দেয়। নির্যাতনকারীদের হুমকীর কারনে ওই গৃহবধু ডিমলা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়ে আজ শনিবার সকালে নীলফামারী জেলার বাহিরের এক হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারণ নির্যাতনকারীরা তার অবস্থান জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু শেফালী বেগম (৩২) উক্ত গ্রামের লালন মিয়ার স্ত্রী ও একই গ্রামের হত্যার শিকার মবিয়ার রহমানের মেয়ে। 

জমিজমা সংক্রান্ত এক বিবাদে শেফালীর বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২২ আগষ্ট হত্যার মামলা সাক্ষ্য গ্রহনের দিন আছে। প্রভাবশালীরা ওই মামলা মিমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তারা পিতার হত্যা মামলা আপোষ না করায় সম্প্রতি প্রতিপক্ষরা  মিথ্যা মামলা করেছে। ফলে শেফালীর একমাত্র ভাই রমজান আলী পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলেই শেফালী ও তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনে খড়ক নেমে আসে।
এলাকাবাসী জানায় শেফালী বেগমের দুই ছেলে মেয়ে ও তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শেফালীর স্বামী  রিক্সা চালাতে ঢাকায় অবস্থান করছে। ঘটনার দিন গতকাল শুক্রবার (৪ আগষ্ট) সকাল ১০টার দিকে একই গ্রামে বসবাসকারী তার বড় বোন আকলিমা (৩৫) সঙ্গে তার স্বামী রফিকুল ইসলামের মধ্যে বচসা শুরু হয়। ওই বচসা থামাতে যায় শেফালী বেগম। এ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হলে শেফালীর বড় বোনের স্বামী সামান্য আহত হয়।  আর এ ঘটনাকে পূঁজি করে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামীরা গ্রাম্য মাতব্বরদের সহযোগীতায় শেফালীকে গরু চুরির মিথ্যে ঘটনা সাজিয়ে একটি গাছে বেধে ফেলে। অভিযোগ মতে খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের, ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সেক্রেটারী শিমুল ইসলাম , ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তানজিদার রহমান, সদ্য বিএনপি হতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী ইউনিয়নের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ,সামছুলের ছেলে বিএনপি নেতা মজনুর রহমান মঞ্জু  ও এলাকার দেবারু, দবিরুল নির্যাতন শুরু করে। শেফালীর শরীরে মারপিটের সময় ওই গৃহবধু নির্যাতনকারীদের বেশ কয়েকজনের হাতে কামড় দেয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা গরু ও মাদকসহ শেফালীকে ধরিয়ে দিতে ডিমলা থানা পুলিশকে খবর দেয়। এ জন্য শেফালীর বড় বোনের স্বামী রফিকুল ইসলামকে দিয়ে থানায় মিথ্যে ঘটনা সাজিয়ে লিখিত অভিযোগ করায়।  ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সর্দার ও চার নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ রশিদুল সর্দার বলেন ঘটনার দিন দুপুর ১২টা দিকে গৃহবধু শেফালীকে গাছে বেধে নির্যাতনের ঘটনা দেখতে পেয়ে ডিমলা থানায় অবগত করি এবং শেফালীর বাঁধন খুলি দেই। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের ও বিএনপি নেতা মজনুর রহমান মঞ্জুর নির্দেশে শেফালীকে গাছের সঙ্গে বেধে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ডিমলা থানার এসআই ফিরোজ, দুইজন নারী পুলিশসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যায়।  পুলিশ প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে মাটিতে পড়ে থাকা শেফালীকে উদ্ধার ও  তাকে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে ফিরে যায়।
এদিকে গোপনে চিকিৎসাধীনে থাকা গৃহবধু শেফালীর সঙ্গে কথা হয় সাংবাদিকদের। শেফালী  জানায় পুলিশ চলে যাওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন তাকে ডিমলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুত গ্রহন করে। এ সময় ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তানজিদার রহমান এসে হুমকী দেয় শেফালীকে হাসপাতালে ভর্তি করলে ফেন্সিডিল দিয়ে তকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হবে। এই ভয়ে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। রাতে স্থানীয় একজন চিকিৎসক এসে তাকে স্যালাইন পুষ করে চলে যায়। শনিবার ভোরে গ্রাম হতে বেরিয়ে জেলার বাহিরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছি বলে শেফালী জানায়। 
শেফালীকে নির্যাতনের ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত গ্রাম্য মাতব্বর ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। ইউনিয়নের শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল ইসলাম বলেন কারা কেন ওই গৃহবধুকে গাছে বেধে নির্যাতন করেছে আমাদের জানা নাই। পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম আমি। এ ছাড়া আর কিছুই জানি না।
খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন বলেন শেফালী বেগম নামের এক গৃহবধুকে গাছে বেধে কে বা কারা নির্যাতন করেছে বলে শুনেছি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কোন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জড়িত নয়। ঘটনাটি নিয়ে কিছু মানুষ আওয়ামী লীগের নেতাদের উপর মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তানজিদার রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ঘটনাস্থলে বিকালে গিয়েছিলাম পুলিশের সঙ্গে। শুনেছি ওই মহিলা নাকী ভাল নয়। 
ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন ওই মহিলার নামে গরু চুরি ও মানুষজনের হাতে কামড় দেয়ার অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু ঘটনাটি তেমন কিছু নয়। এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি। দিনভর গাছে বেধে নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5096918350588076823

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item