গর্জে উঠেছে তিস্তা॥গজলডোবার সবকটি জলকপাট খুলে দেয়া

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১০ জুলাই॥
ভারী বর্ষন,উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়ঙ্কর রূপে গর্জে উঠেছে তিস্তা। খুলে দেওয়া হয়েছে গজলডোবার  সবকটি জলকপাট।
আজ সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৬টায় এই পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবহিত হচ্ছিল। যা তিন ঘন্টার ব্যবধানে দুই সেন্টেমিটার বৃদ্ধি পায়। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০ মিটার। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়াস্থ্য বন্যা পুর্বাভাস সর্তকীকেন্দ্র সুত্র জানায়।
এদিকে তিস্তার ভয়াবহ বন্যা সৃস্টি হওয়ার সকালে বন্যা দূর্গত এলাকা পরিদর্শনে রয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা রেজাউল করিম সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন।
ভারতের গজলডোবা হতে পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে আনন্দবাজারের অনলাইনে বলা হয় এ দিন তিস্তা ব্যারেজ থেকে প্রায় এক হাজার ৯২৯ কিউমেক জল ছাড়া হয়। দোমহনিতে তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করে সেচ দফতর।
এদিকে উজানের প্রবল বেগে উথাল পাথাল ¯্রােত ধেয়ে আসার সঙ্গে ভারী বর্ষন অব্যাহত থাকায় তিস্তা অববাহিকায় চর ও গ্রাম এলাকার লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানায় তিস্তার বন্যর সঙ্গে ভারী বৃস্টিপাতের করনে চর ও গ্রামবাসীর পরিবারগুলো খাদ্য কষ্টে পড়েছে। কেউ চুলা জ্বালাতে পারছেনা। জরুরী ভাবে শুকনা খাবার বিতরন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তিস্তার বন্যার কারনে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ির ভেতর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর ছয়টি বাঁধের স্থান ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে।
সুত্র মতে, গতকাল রবিবার (৯ জুলাই) বিকাল ৪টা থেকে উজানের ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের বেশ কিছু জলকপাট খুলে দেয়া হয়। ধারনা করা হচেছ ভারতে ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের পানির চাপ ধরতে রাখতে না পারায় ভারত গজলডোবা ব্যরাজের জলকপাট খুলে দিয়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এদিকে তিস্তার উজানের ভয়ঙ্কর ঢলের কারণে নীলফামারীর দুটি উপজেলার ৯ ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকার পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া
হয়েছে। তারা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ যে যা পেরেছে তাই নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
তিস্তার বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা হলো নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বাইশপুকুরচর, কিসামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেন্ডাবাড়ী, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতারচর, ভাষানীর চর, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী, কৈমারীর তিস্তা অববাহিকার গ্রামগুলোয়। এসব এলাকায় বানের পানির তোড়ে শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। মানুষজন তিস্তার ডান-তীর প্রধান বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
ভাষানীরচরের সহিদুল ইসলাম ও কিছামতচরের জাহিদুল হক জানান, তাদের গ্রামের প্রতিটি পরিবারের ঘর কোমর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঘরের ভেতর দিয়ে তিস্তার ঢলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলার নদী বেষ্টিত চর ও গ্রামগুলোও প্লাবিত হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ফরেস্টের চরের অধিকাংশ বাড়ি হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে।
খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পুর্ব বাইপুকুরে বস বাসদের ঘর দিয়ে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে।
পুর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংহেস্বর এলাকার তিস্তার চরাঞ্চলের বসতবাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিছামত ছাতনাই গ্রামের তিস্তার চরাঞ্চলের বসতবাসরতদের বসতভিটা হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উজানের ঢলের কারণে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপরে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 4302275782078497739

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item