সরকারি অর্থ অপচয়-সৈয়দপুরের কামারপুকুরে নির্মিত ১৫ মিটার সেতুটি মানুষের কোন উপকারে আসবে না

তোফাজ্জল হেসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফমারী) প্রতিনিধি:

নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি ইউনিয়নে প্রয়োজন নেই এমন স্থানে ১৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টাকা। অথচ সেতুটি এলাকার মানুষের সামান্যতম কোন উপকারে আসবে না। আর সেতুটির কাজও সিডিউল মেনে সঠিকভাবে হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধুমাত্র পকেটভারী হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের। কাজ শেষ না হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কাজ শেষ দেখিয়ে বিলের পুরো অর্থ তুলে নিয়েছেন।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের মতিরবাজার হতে দেওয়ানীপাড়া যাওয়ার রাস্তায় চান্দের ডিঙ্গার পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীন ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৬ টাকা। সেতুটির নির্মাণ কাজ করেছেন ঠিকাদার নীলফামারী সদরের পৌর মার্কেটের মো. গওহর জাহাঙ্গীর। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু ছালেহ মো. মুসা স্বাক্ষরিত ওই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাগজেকলমে সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। আর শেষ দেখানো হয় ১৫ এপ্রিল। অথচ এখন সেতুটির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
 প্রসঙ্গত, এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সেতু নির্মাণ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঠিকাদার এসে ওই সড়কের অন্য একটি জায়গায় সেতু নির্মাণের জন্য মাটি খনন কাজ শুরু করেন। কিন্তু এতে রাস্তার  উভয় পাশের জমির মালিকরা বাঁধা দেন। পরবর্তীতে অনেক বাধা-বিপত্তির পর বর্তমান স্থানে সেতুটি নির্মাণের জন্য মাটি খনন করা হচ্ছে। সে সময় ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে সেতুটির ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তিনি। পরবর্তীতে এ প্রতিনিধি গত ৭ মে তথ্য অধিকার আইন- ২০০৯ এর ৮ ধারায় তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বরাবরে আবেদন করেন। কিন্তু  ওই আবেদনের ২০ কার্যদিবসের পরও পিআইও দপ্তর থেকে তথ্য প্রদান করা  হয়নি। পরবর্তীতে এ প্রতিনিধি গত ১৮ জুন নীলফামারী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার বরাবরে তথ্য চেয়ে আপীল করেন। গত ৩ জুলাই জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার নির্দেশে সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এ প্রতিনিধিকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা সেতুটির ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য উপাত্তের ফটোকপি সরবরাহ করেন।
 গত সোমবার দুপুরে (৩ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেতুটির ঢালাই কাজের সার্টার খোলা হয়নি। বাঁশ -কাঠের সার্টার লাগানো রয়েছে এখনও। সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ফিনিশিং কাজও অসমাপ্ত। অথচ রেলিংয়ে লাল ও সাদা রংয়ের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। সেতুটির নির্মাণের সময় চলাচলের জন্য যে পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল তা ওপর দিয়ে লোকজন যাতায়াত করছেন এখনও। নির্ধারিত সাইজের নামফলকও লাগানো হয়নি। কিন্তু ঠিকাদার  সেতুটি নির্মাণে নির্ধারিত বিলের পুরো অর্থ তুলে নিয়েছেন গত ৩০ জুনের আগেই।
 সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সেতুটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। সিডিউলে উল্লিখিত পরিমাপ অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। আর অতি নি¤œমানের সব উপকরণ ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে তড়িঘড়ি করে সেতু কাজ শেষ দেখানো হয়েছে।
 এলাকাবাসী মো. আতাউর রহমান জানান,  যে জায়গায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে আদৌ কোন সেতু কিংবা কালভার্টের দরকার ছিল না। অহেতুক সরকারে ওই বিপুল অর্থ অপচয় করা হয়েছে মাত্র।
 সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এটি নির্মাণ করা হয় তার কোন সুফলেই এলাকাবাসী পাবেননা। বরঞ্চ এর উল্টোই হবে। যদিও চান্দের ডিঙ্গার পানি নিষ্কাশনের জন্য এটি নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। অথচ চান্দের ডিঙ্গা সঙ্গে এ সেতুর কোন সম্পর্ক রাখা হয়নি। বরঞ্চ সেতু পশ্চিম দিকের জমিগুলো অনেক উঁচু। সে সব জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে। আর বর্ষা মৌসুমে সেই জমির পনি গিয়ে চান্দের ডিঙ্গায় পড়বে। আর এতে করে সেখানে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। পাশের জমির চাষাবাদ বিনষ্ট হওয়াসহ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
 সৈয়দপুর উপজেলার ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম লোকমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় মঙ্গলবার। তিনি বলেন, ইউনিয়নের ওই জায়গায় সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব ছিল গত পরিষদের। আর ইউনিয়নের ১ নম্বর ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য যথাক্রমে মমিনুর ইসলাম ও মো. জাকির হোসেন সেটি পুনরায় এবারের ইউনিয়ন পরিষদের সভায় উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউনিয়ন পরিষদ  থেকে সেই প্রস্তাবটিই পিআইও দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
 উপজেলার ১নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন জানান, আমারও ধারণা ছিল না এখানে এতো বড় একটি ব্রীজ তৈরি হবে।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোফাখ-খারুল ইসলাম এ নিয়ে সংবাদ না করার জন্য বলেন।
 উপজেলা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু ছালেহ মো. মুসা জঙ্গীর সঙ্গে তাঁর দপ্তরে বসে কথা হয় মঙ্গলবার সেতু নির্মাণের সার্বিক বিষয়ে। সেতুটির স্থান নির্ধারণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া হয়েছে। আর কাজ শেষ না করে বিল প্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, সেতুটির অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এ জন্য পিআইওকে বলা হয়েছে।  

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5794104156769322698

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item