পঞ্চগড়ে বাদামের বাম্পার ফলন
https://www.obolokon24.com/2017/07/panchagar_24.html
মোঃ সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও এই জেলায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবারের থেকে দাম কম হলেও লোকসান হচ্ছে না কৃষকের। তাই অন্য আবাদের চেয়ে বাদামের দিকেই ঝুঁকছেন চাষিরা। এদিকে বাদামের ব্যবসা করে ভালো লাভ করছেন স্থানীয় বাদাম ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন পঞ্চগড়ের বাদামের মান ভালো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানির পাশাপাশি বিদেশেও এর চাহিদা বাড়ছে।
পরিবেশ উপযোগী, ঝুঁকি কম এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বছরের দুই মৌসুমে এটি চাষ করছেন পঞ্চগড়ের বাদাম চাষিরা। এ অঞ্চলে রবি ও খরিফ এই দুই মৌসুমে বাদাম চাষ হয়। খরিফ মৌসুমে উৎপাদিত বাদাম বীজের জন্য ব্যবহূত হয়। বর্তমানে এই দুই মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল বাদাম চাষ করে অধিকাংশ কৃষকই দেখছেন সাফল্যের মুখ। তাই বাদাম চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এই অঞ্চলের চাষিদের। চাষিরা জানিয়েছেন প্রতি বিঘায় মাত্র ৬ হাজার টাকা খরচ করে ১২ থেকে ১৫ মণ বাদাম উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৮’শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। তবে সুষ্ঠু বাজারজাত, আর্থিক সহায়তা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অনেকে লোকসানও করছেন। পঞ্চগড়ের সব উপজেলায় বাদাম চাষ হচ্ছে। তবে করতোয়া বিধৌত বোদা এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদন বেশি। এই জেলার মাটি বেলে-দোঁয়াশ মিশ্রিত বলে বাদাম চাষে উপযোগী। এ বছর পঞ্চগড়ে ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এদিকে চিনাবাদামকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা। ইতিমধ্যে প্রায় ত্রিশটির মতো কারখানায় বাদামের প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। এসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
বোদা উপজেলার মাড়েয়া এলাকার কৃষক শুকুর আলী জানান, আগে অন্য ফসল আবাদ করতাম। গত দুই বছর ধরে বাদাম করছি। এ বছর ৭ বিঘা জমিতে বাদাম করেছি। দাম গতবারের থেকে কম হলেও লাভ আছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার বাদাম ব্যবসায়ী ফরিদ আলী জানান, আগে কাঁচা বাদাম কিনে দেশের নানা প্রান্তে রপ্তানি করতাম। এ বছর নিজে একটি ক্ষুদ্র কারখানা স্থাপন করে বাদাম প্রক্রিয়াজাত করছি। এতে আমার লাভ বেশি হচ্ছে। পঞ্চগড়ের বাদামের মান ভালো। দেশে-বিদেশে এর চাহিদা বাড়ছে। বাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানার শ্রমিক আলেয়া বেগম জানান, বাড়ির পাশে বাদাম কারখানায় কাজ করছি। প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা মজুরি পাচ্ছি। সংসারে আয় বেড়েছে আমাদের। পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দেশের বাদামের প্রায় অর্ধেক চাহিদা পূরণ করছে পঞ্চগড়ের চাষিরা। উৎপাদিত বাদাম এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখছে।