পঞ্চগড়ে স্বামীর কু প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় আগুনে পুড়লো স্ত্রী

সাইদুজ্জামান রেজা পঞ্চগড় :
যৌতুকের টাকা জোগাতে অসামাজিক কাজে রাজি না হওয়ায় স্বামীর দেয়া আগুনে ঝলসে গেছে রীনা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূর শরীরের অর্ধাংশ। প্রায় এক মাস ধরে পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই গৃহবধূ। এই এক মাসে বিচার চেয়েও কোথায় পাননি তিনি। সম্প্রতি পঞ্চগড় আদালতে বিচার চাইলেও ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেননি।এদিকে টাকার অভাবে ভাল করে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। ধার দেনা করে সব পূজি ফুরিয়ে এখন ওই গৃহবধূ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।রীনার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের শুরুতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কানাপাড়া এলাকার আবু আলম হাই হেলালের ছেলে সাদ্দাম হোসেনের সাথে পঞ্চগড় জেলা শহরের রওশনাবাগ এলাকার মৃত ইছাহাক আলীর মেয়ে রীনা আক্তারের বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবেই। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই সাদ্দাম যৌতুকের দাবিতে রীনাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এরই মধ্যে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। সম্প্রতি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রীনাকে ঢাকায় নিয়ে যায় সাদ্দাম। ঢাকার মুগদা এলাকায় তার বোন আলপনার বাড়িতে রাখে রীনাকে। এ সময় সাদ্দাম যৌতুকের টাকা তুলতে রীনাকে অসামাজিক (দেহ ব্যবসা) কাজ করতে বলে। কিন্তু রীনা রাজি না হওয়ায় গত ১১ জুন রীনার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষন্ড স্বামী সাদ্দাম। চিৎকার করে রীনা বাথরুমে প্রবেশ করলেও সেখানেরও ছিটকিনি লাগিয়ে দেয় সে। পরে তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। কিন্তু এর মধ্যেই রীনার শরীরের অর্ধাংশ পুড়ে মারাত্মক যখম হয়। এদিকে রীনাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর পরই পালিয়ে যায় সাদ্দাম। খবর পেয়ে রীনার মা জহুরা বেগম ছুটে যান হাসপাতালে। দরিদ্র মা ২১ দিন হাসপাতালে থেকে মেয়ের চিকিৎসা করতে থাকেন। হাসপাতালে ও রীনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সাদ্দাম। বিষয়টি টের পেয়ে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক নিজে গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন রীনাকে।টাকার অভাবে দরিদ্র মা ঢাকার অন্যত্র ভাল চিকিৎসা করাতে না পেরে গত ৭ জুলাই পঞ্চগড়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে এসে সাদ্দামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে গেলে বিচারক ঘটনাস্থল ঢাকায় হওয়ায় মামলাটি গ্রহণ না করায় হতাশ হয়ে পড়ে পরিবারটি। দরিদ্র মা মেয়ে কোথাও বিচার না পেয়ে পঞ্চগড় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের দারস্থ হন। পরে স্থানীয় কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী শনিবার (১৫ জুলাই) তাকে আবারো পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু টাকার অভাবে ভাল চিকিৎসা না পেয়ে ওই গৃহবধূ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বেডে শুয়ে পোড়া ঘায়ের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এরই মধ্যে তার এক হাত অচল হয়ে গেছে। ভাল চিকিৎসা আর দোষীর দৃষ্টান্তমূলক বিচারের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন দরিদ্র এই গৃহবধূ ও তার পরিবার।রীনা জানান, সাদ্দাম আমাকে ঢাকায় নিয়ে দেহ ব্যবসা করে যৌতুকের টাকা তুলে দিতে বলে। আমি রাজি না হওয়ায় ও আমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি চিৎকার করে বাথরুমে ঢুকলে ছিটকিনি আটকিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার এক হাত অচল হয়ে গেছে।  এখন আমার এই সন্তান নিয়ে আমি কি করে খাবো। আমার উপর এই নির্যাতনের আমি বিচার চাই।রীনার মা জহুরা বেগম জানান, আমার স্বামী নেই। খুব কষ্ট করে মেয়েকে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছি। শুধু যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে আগুনে পুড়ে দিয়েছে ওর স্বামী। টাকার অভাবে মেয়েটাকে ভাল চিকিৎসা করাতে পারছিনা। এখন এই মেয়ে নিয়ে আমি কি করবো। ওকে দেখবো না ওর সন্তানকে দেখবো। আমি বিচারের জন্য ঘুরতেছি কোথাও বিচার পাইনি। আমার মেয়েকে সুস্থ্য করার জন্য আমি সরকারের সহযোগিতা চাই। সেই সাথে ওই পাষন্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির যেন ব্যবস্থা করা হয়।
মানবাধিকার কর্মী এটিএম আখতারুজ্জামান বাবু জানান, আমরা ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এই গৃহবধূর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী আখতারুন্নাহার সাকী জানান, এমন বর্বরতা কখনো মেনে নেয়া যায় না। এমনকি তারা মেয়েটার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করেনি। টাকার অভাবে ভাল চিকিৎসা পাচ্ছেনা মেয়েটি। সে থানা, আদালত কোথাও বিচার পাচ্ছে না। ছেলের বাড়ি এখানে মেয়ের বাড়িও এখানে কিন্তু আদালত কেন মামলা গ্রহণ করেনি এটা আমরা মানতে পারছিনা। ওই গৃহবধূর স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আমিনুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় আদালত মামলাটি গ্রহণ করেননি। এ ক্ষেত্রে বাদীর উচিত ঘটনাস্থলের সংশ্লিষ্ট থানা বা আদালতে মামলা করা। আর তা না হলে মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে এবং বাদী বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, রীনার শরীরের অনেকাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে পোড়া রোগীর যেরকম সেবা দরকার সে ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই। এসব রোগীর জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট রয়েছে। সেখানে ভর্তি করা হলে উনি ভাল চিকিৎসা পেতেন। তবে আমাদের সাধ্য মতো আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 1733054858760282012

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item