আর্থ সামাজিক উন্নয়নকে বিএনপি তছনছ করতে ব্যস্ত ॥ মতিয়া চৌধুরী

ডেস্ক-
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট আকারে বড় হলেও বাস্তবায়নযোগ্য। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দিতে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তিরা নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছে। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করেই সরকারের এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজরে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ, সরকারি দলের এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, নুরুল ইসলাম সুজন, মীর শওকত আলী বাদশা, জয়া সেনগুপ্তা, আবদুল মজিদ মন্ডল, গোলাম মোস্তফা, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নান ও শাহনারা বেগম।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল মন্ত্রই হচ্ছে উন্নয়ন। এবারের বাজেটে তা প্রতিফলিত হয়েছে। এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে অনেকে বলছেন। আমরা বলবো- শেষ বিচারে এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। অতীতে তাদের এ ধরণের অবিবেচক বক্তব্য ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবারও তা ভূল বলে প্রমাণ করতে পারবো। তিনি বলেন, কি করে অবিবেচক-দূর্মখোরেরা বলে এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়? বাজেটে বলা হয়েছে, উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের। এটা যথার্থ। অতীতে বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। শেষ পর্যন্ত তারা লেজ গুটিয়ে নিয়েছে। শত শত মানুষকে তারা পেট্রোল বোমা মেরে হতাহত করেছে। এসব কাজ বেগম খালেদা জিয়া করেছেন এয়ার কন্ডিশন রুমে বসে। এসবে তাঁর মেকাপ এর কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত পরিবার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নকে বিএনপি তছনছ করতে ব্যস্ত। জামায়াতের সঙ্গে তারা গাঁটছড়া। এসবের মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই শেখ হাসিনা সরকাররের সাফল্য। মহাজোট সরকারের সাফল্য। আশা করি আওয়ামী লীগ সরকারের এই মেয়াদেই প্রবৃদ্ধির হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত করতে সক্ষম হবো। মাঝে রেমিটেন্স আসা স্থবির ছিলো। এখন আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশে পরিনত হবো। আমরা এখন যেভাবে এগিয়ে চলেছি তা অব্যাহত থাকলে আমি মনে করি র্নিধারিত সময়ের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো এবং এর ফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির আমলে সারের জন্য কৃষকদের জীবন দিতে হয়েছে। আর এখন সার কৃষকের পেছনে ধাবমান। বিদ্যুতের দিন দিন উৎপাদন বাড়ছে। আগের তুলনায় মানুষ এখন নানাভাবে এটা ব্যবহার করছে। এখন আমরা পারমাণবিক বিদ্যুতে যাচ্ছি। সজ্ঞানে অজ্ঞানে অনেকে এ নিয়ে সমালোচনা করছেন। তারা হাওরের পানিতে ইউরোনিয়াম পেলো। আনবিক শক্তি কমিশনের পরীক্ষার পর তারা আর এ নিয়ে এগোতে চায়নি। এভাবে বড় বড় কাজে নানাভাবে সরকারকে বাধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা থেমে নেই।

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারী শুল্ক বৃদ্ধি এবং সঞ্চয়পত্রে সুদেরর হার কমানোর সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আবগারি শুল্ক এখন যদি বাড়ানো হয় তাহলে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হবে। কি করে আমরা মানুষকে বিত্তবান করবো। পুরো প্রস্তাব তুলে নিলে সরকারের ক্ষতি হবে মাত্র ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা তো অর্থমন্ত্রীর জন্য কিছুই না। তারপরও এ খাতে কেন হাত দেয়া হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, বিদেশী ঋণ যখন তখন নেয়া ঠিক না। নানা শর্ত থাকে। বিদেশী ঋণ অত্যন্ত জটিল ও ভয়াবহ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সঞ্চয়পত্রে সুদ কমানোর ফতোয়া দিচ্ছে। এরা কারা? তারা সেই প্রতিষ্ঠান যারা পদ্মা সেতুতে বাধা দিয়েছে। সারের এবং কৃষি পণ্যে ভর্তুকি দিতে বাধা দিয়েছে। আমরা নিজস্ব চেষ্টায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হয়েছি। আইএমএফ মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। নিখাদ দেশপ্রেম শেখ হাসিনার আছে। যার কারণে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ করছি। বিভিন্ন দেশে আইএম এফের দুনীতির কারনে বিচার হচ্ছে বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, যেসব দেশ তাদের পরামর্শ অন্ধের মতো অনুসরন করছেন তারাই বিপদে পড়ছেন। তাদের হিতোপদেশ আমি প্রত্যাখান করি।

তিনি বলেন, ঋণ খেলাপিদের বোঝা যদি আমরা নিতে পারি তাহলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দায় কেন নিতে পারবো না। বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট নিয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কানাডার আদালত আজ বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে বলছে। তারা আজ বাজেটকে পকেট কাটা বাজেট বলছেন, গলাকাটা বাজেট বলছেন। খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দুই ছেলের অন্যায় আর দুর্নীতি সবাই জানে। আওয়ামী লীগের কোন হাওয়া ভবন নেই। খাওয়া ভবন নেই।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ বলেন, বাজেট মানেই উন্নতি। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি সম্পদে পরিণত করতে না পারি তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থমন্ত্রীকে নারীদের দিকে অন্তত তাকিয়ে অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নারীরা নিজেরা যে টাকা আয় করে ব্যাংকে রাখে তার ওপর যদি আবগারি শুল্ক আদায় করা হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করি।

সরকারি দলের মৃণাল কান্তি দাশ বলেন, এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়নের পুর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিএনপি জোট দেশের উন্নয়ন বাধগ্রস্ত করছে। সামনে নির্বাচন। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। বিএনপি গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে সন্ত্রাসী কার্যকম চালাতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা প্রস্তাবিত বাজেটের প্রশংসা করলেও আর্থীক খাতে দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচারের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশ থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, পাচারকৃত অর্থ দেশের বাজেটের সমান। তিনি বলেন, এক বছরের বাজেটই যদি বিদেশে পাচার হয়ে যায়, তা কঠোরহস্তে বন্ধ এবং ফেরত আনতে না পারলে দেশকে উন্নয়নের সড়ক দিয়ে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, বিএনপি দেশকে পেছনে ফিরিয়ে নিতে যেতে তৎপর। তারা কখনও বলছে লুটপাটের বাজেট। আবার কখনও বলছেন ব্যর্থ বাজেট। আসুন আমরা সবাই মিলে তাদের সে উদ্দেশ্য প্রতিহত করি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিড়িকে দেশ থেকে বিদায় করে দেবেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রী গরীব মানুষদের দিকে তাকাচ্ছেন না। বিড়ির দাম বাড়িয়ে তিনি সিগারেটকে উৎসাহিত করছেন। গরীব লোক যেটা খায় সেটার দাম কেন বাড়ানো হলো? কেন এই বৈষম্য?

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের গুটিকয়েক ব্যক্তি রয়েছে তারা ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করছে, সেখানে ফ্লাট-গাড়ি কিনে আরাম আয়েশে থাকছেন। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে এসব অর্থ পাচারকারীদের মুখোশ দেশবাসীর সামনে উম্মোচন করতে হবে, কঠোর আইন প্রয়োগ করে ঋণের সমুদয় অর্থ আদায় করতে হবে।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 5276631168945200240

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item