ভিক্ষা করে জীবন যাপন করে কিশোরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী লাইলী বেগম
https://www.obolokon24.com/2017/06/blog-post_18.html
কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষনার পর দিনাজপুর জেলায় গিয়ে ভিক্ষা করে
জীবন
বাজী রেখে যুদ্ধ করে যারা দেশটাতে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল তাদের মধ্যে একজন
ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত এলার উদ্দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি জয়ী
হয়েছিলেন ঠিকই । কিন্তুু দেশ স্বাধীন হওয়ার ২০ বছর পর প্যারালাইসিস হয়ে
মৃত্যুবরন করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সহ তিন সন্তান রেখে যান। এলার
উদ্দিনের মুত্যুর পর তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও ভিক্ষা করে জীবন
যাপন করলেও বর্তমানে ২০১৪ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে
ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষনা করায় দিনাজপুর জেলায় গিয়ে ভিক্ষা করে মানবেতর জীবন যাপন
করছেন মুক্তিযোদ্ধা এলার উদ্দিনের স্ত্রী লাইলী বেগম। সে উপজেলার নিতাই
ইউনিয়নের ডাংগাপাড়া গ্রামের মৃত্যু মফিজ উদ্দিনের পুত্র।
গত শনিবার
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা এলার উদ্দিনের স্ত্রী লাইলী বেগমের
সাথে । তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের
ডাকে সাড়া দিয়ে একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস, আনাম আলী, মোজ্জাম্মেল হক,
মনতাজ আলীসহ কয়েকজন যুবক আমার স্বামী এলার উদ্দিনকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার স্বামী বাড়িতে ফিরে আসেন। আমার
কোল জুড়ে আসে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। সন্তানরা বড় হতে না হতেই
প্যারালাইসিস হয়ে আমার স্বামী মুত্যুবরন করেন। স্বামীর সহযোদ্ধারা
মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হলেও আমার স্বামী দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ
৪৬ বছরেরও গেজেটভুক্ত না হওয়ায় স্বামীর মুত্যুর পর সন্তানদের নিয়ে আমি
অনেক কষ্ট করে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে জীবন যাপন করতাম। সরকারের
বিভিন্ন কর্মসুচিতে নাম অন্তরভুক্ত করার জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে
ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয়নি। এরই এক পযার্য়ে প্রথম কন্যা শেফালি বেগমের বিয়ের
বয়স হয়। বাধ্য হয়ে স্বামীর ভিটে মাটি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দেই। নিজের
জমি না থাকায় বর্তমানে গ্রামের আব্দুস সালামের জমিতে বসবাস করছেন লাইলী
বেগম । বয়স বেড়ে যাওয়ায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে না পেরে ভিক্ষা করে জীবন
যাপন করছেন তিনি। বর্তমানে ছোট মেয়ের বয়স ২৪ বছর হলেও টাকা পয়সার অভাবে
বিয়ে দিতে পারেননি।
মুক্তিযোদ্ধা এলার উদ্দিনের সহযোদ্ধা আনাম আলী,
(গেজেট নম্বর ৭৯০) আব্দুল কুদ্দুস (৭৮৯) মোজাম্মেল হক (ডিজিআই নম্বর
১১০৩৯১) তাদের সাথে কথা বললে তারা সকলেই জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে ১৫ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর ভারতের শিতলকুচি
এবং ২৪ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্ব ভারতের কুচবিহার সুভাষপল্লী ইয়ত
মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অংশগ্রহন করে প্রশিক্ষন গ্রহন করি। পরে প্রশিক্ষন
শেষে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলার সিঙ্গিমারী, ও
সর্বশেষ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পটিমারী ইউনিয়ন যুদ্ধ শেষ করে থানায়
স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে বিজয় অর্জন করি। আমরা সকলেই ৬ নম্বর সেক্টরে
যুদ্ধ করি। আমাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন খাদেমুল বাসার। যুদ্ধ শেষে
নীলফামারীর সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইকবালের অস্ত্র কাছে জমা করি।
মুক্তিযোদ্ধা এলার উদ্দিনের ডিজি আই নম্বর ১৭৭০৭৪। এলার উদ্দিন মারা
যাওয়ার পর আমরা সকলেই তাঁকে গেজেটভুক্ত করার জন্য অনেক চেষ্ঠা করেছি কিন্তু
কোন কাজ হয়নি। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই তালিকায় তার নাম
অন্তভুক্ত করে তালিকা পাঠিয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি।
উপজেলা
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, এলার উদ্দিন একজন প্রকৃত
মুক্তিযোদ্ধা । তার স্ত্রী , সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন যাপন করে
প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এলার উদ্দিনের স্ত্রী ভিক্ষা করে এটা আমি শুনেছি
কিন্তু সে সরকারী গেজেটভুক্ত না হওয়ায় আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে
সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই তালিকায় ১৯ নম্বরে তার নাম অন্তরভুক্ত
করে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহেদী
হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন , তাকে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা
আমার কাছে পাঠিয়ে দেন তাহলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।