ধান আর ধান

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৯ মে॥
  তিস্তা ব্যারেজ সেচপ্রকল্পের কমান্ড এলাকা সহ রংপুর কৃষি অঞ্চলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঘরে ধান, গোলায় ধান, আঙ্গিনায় ধান, জমিতে ধান, সড়কে শুকাতে দেয়া ধান।  এলাকার প্রতিটি কৃষকের ঘরে-বাইরে এখন শুধু ধান আর ধান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নিকোব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব এড়িয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। এতে শুধুমাত্রা রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় চালের হিসাবে সম্ভাব্য উৎপাদন আশা করা হচ্ছে প্রায় ২০ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,জমি হতে প্রায় ৬৫ ভাগ ধান কৃষক কাটাই মাড়াই শেষে ঘরে তুলেছে। বাকী ৩৫ ভাগ ধান আগামী ১২ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবে  এমন কথাই জানালেন কৃষককুল।
রংপুর কৃষি অঞ্চল অফিস সুত্রে জানা যায় এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলে ৫ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল পাঁচ লাখ ২ হাজার ২৮৪ হেক্টর জমিতে। কিন্তু অর্জিত হয়  ৫ লাখ ৫ হাজার ৩৪৯ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে বেশী। এরমধ্যে নীলফামারীতে ৮২ হাজার ১১০ হেক্টরে, রংপুরে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ হেক্টরে, গাইবান্ধায় ১ লাখ ৯ হাজার ৬১২ হেক্টরে, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১০ হাজার ৫০২ হেক্টরে ও লালমনিরহাটে ৫০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে।
সম্প্রতিকালে রংপুর কৃষি অঞ্চলে বোরোধানে নিকো ব্লাস্ট রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে যে খবর চাউর করা হয়েছিল বাস্তবের সঙ্গে তার খুব একটা মিল খুঁজে পায়নি কৃষকরা। 
মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা বলছে একটি মহল যেভাবে মহামারী আকারে বোরোধানে নিকো ব্লাস্ট রোগের কথা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তা সঠিক নয়। মাঠ পর্যায়ের হিসাব মতে এই রোগে নীলফামারীতে মাত্র ২৯ দশমিক ৫ হেক্টর, লালমনিরহাটে ২২ দশমিক ১ হেক্টর, রংপুরে ৩০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৩৯ দশমিক ৫ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ২৪ হেক্টর জমির ধান এই রোগে আক্রান্ত হয় বলে রংপুর কৃষি আঞ্চলিক কৃষি অফিসের এক হিসাবে তা প্রকাশ করা হয়েছে।
বোরো ধান সেচ নির্ভর। মৌসুমের শুরুতেই  পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর বোরো আবাদে পানি সঙ্কট হয়নি। তাই ফলনও ভালো হয়েছে। মাঠে মাঠে ধান কাটা আর মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যরারেজ কমান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘরে ধান, গোলায় ধান, আঙ্গিনায় ধান, জমিতে ধান। এমন চিত্র নীলফামারী,রংপুর ও দিনাজপুর জেলার   তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকার প্রতিটি কৃষকের ঘরে-বাইরে এখন শুধু বোরো ধান আর ধান। এবারে এত ধান ফলেছে যা কৃষকের ঘরে রাখার জায়গাটুকুও নেই। সেচ প্রকল্পের দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার পরিদর্শন সড়ক ছেয়ে গেছে ধান আর খড়ে। ওই এলাকার কৃষকেরা অভাব-অনটনকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়ে আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। এখন তিস্তা সেচ প্রকল্পের ১২টি থানা এলাকায় প্রতি বছর গড়ে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া ডিভিশন সম্প্রসারন কর্মকর্তা রফিউল বারী জানান, শুস্ক মৌসুমে উজানের পানি কম পাওয়ার পরেও চলতি রোরো ধান আবাদের সময় তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। এতে সেচ কমান্ড এলাকার কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মন করে ধান ঘরে তুলছে। কমান্ড এলাকার দক্ষিন দেশীবাড়ী এলাকার কৃষক রমজান আলী জোড় গলায় বলবেন তিনি ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ঘরে ১৮২ মন ধান ঘরে তুলেছে। প্রকল্প এলাকার প্রধান সেচ খালের বগুলাগাড়ী আর থ্রি টি রেগুলেটরে পরিদর্শন সড়কে দেখা যায় অনেক কৃষক সেখানে ধান মাড়াই করছে। এদের মধ্যে হাসান মিয়া, বললেন এই বার বলে রোগবালাইয়ে বোরো ধান নস্ট হইছে বলে শুনেছি। হামার তিস্তা সেচ প্রকল্পের এলাকার কোন জমির ধান নস্ট হয়নি। কৃষক হাসান মিয়ার মতো অনেক কৃষক জানায় তারা বিঘাপ্রতি কেউ ২৫ মন কেউবা ২৮ মন পর্যন্ত ধান পেয়েছে।তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় তারা সেচের পানি দিয়ে গত এক দশক থেকে বা¤পার ফলন ফলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী সদর, জলঢাকা, সৈয়দপুর, কিশোরীগজ্ঞ, রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, পার্ব্বতীপুর ও খানসামা উপজেলা রয়েছে। ধানের পাশাপাশি  তিস্তার সেচে গম ও সবজির গড় ফলন হচ্ছে ১০ লাখ মেট্রিক টন। টাকার অংকে যার গড় দাম ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এক সময়ের অনাবাদি জমিগুলোতে আজ ফলছে সোনালী ধান সহ বিভিন্ন ফসল। প্রকল্পের বিভিন্ন ক্যানেলের দুধারে রোপিত ৬ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেছে। তিস্তা সেচ প্রকল্প দেশের প্রাণ।
অপর দিকে তিস্তা সেচ প্রকল্প কমান্ড এলাকা ছাড়াও বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে যে সকল কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছে তারাও এক বাক্যে বলছে এবার বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। গতবারের ন্যায় তারা কেউ ১৮মন কেউ বা ২৫ মন ধরে বিঘায় ধান পেয়েছে। দেখা যায় কেউ ধান হাত দিয়ে মারছে কেউ মাড়াই মেশিনে। রাস্তায় রোদে শুকাচ্ছেন ধান কৃষক-কৃষাণীরা।
কর্মব্যস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর একদিকে ছিল কালবৈশাখী ঝড়, শিলা, অতিবৃষ্টি অন্যদিকে বেশ কিছু ধান ক্ষেতে নিকোব্লাস্ট আর বিএলবি রোগের আতঙ্ক। তাই চলতি বছর বোরো আবাদ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চাষীরা। তবে শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ধান ঘরে ওঠায় স্বস্তি মিলেছে তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক অফিস সুত্র মতে নিকোব্লাস্ট নিয়ে যে মহামারীর খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তা মিথ্যে প্রমানিত হয়েছে। রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলার কৃষক এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগ ধান কৃষক জমি হতে ঘরে তুলেছে। আগামী ১০/১২ দিনে মধ্যে বাকী ধান ঘরে তুলবে কৃষক। এবার যে হারে ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে এতে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ ২২ হাজার মেট্রিকটন চাল পাওয়া যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।



পুরোনো সংবাদ

কৃষিকথা 8667863631362116362

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item