গ্রন্থ পর্যালোচনা-তবুও বৃষ্টি আসুক ....... শফিকুল ইসলাম


গ্রন্থ  পর্যালোচনায়
 --ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী,
সাবেক মহাপরিচালক,
বাংলা একাডেমী।



         ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ কবি শফিকুল ইসলামের অনন্য কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। তার কবিতা  আমি ইতিপূর্বে  পড়েছি । ভাষা বর্ণনা প্রাঞ্জল এবং তীব্র  নির্বাচনী। “তবুও  বৃষ্টি  আসুক” গ্রন্থে  মোট ৪১ টি কবিতা  রচিত হয়েছে। প্রথম  থেকে শেষ  পর্যন্ত এ গ্রন্থ  পাঠ  করে  পূর্বেই  বলেছি, মন অনাবিল তৃপ্তিতে ভরে যায়।
       
         বইটির প্রথম কবিতায় মানবতাহীন এই হিংস্র পৃথিবীতে কবির চাওয়া বিশ্ব মানবের সার্বজনীন আকাংখা হয়ে ধরা দিয়েছে। কবি বলেছেন--

                                                                  ‘তারও আগে বৃষ্টি নামুক
                                                                 আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে
                                                                 সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক,
                                                                 আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা, হৃদয়ের গ্লানি...
                                                                  (কবিতা: “তবুও  বৃষ্টি  আসুক”)


 প্রকৃতি, প্রেম, নারী , মুক্তিযোদ্ধা, মা এবং  সুলতা নামের এক  নারী  তার হৃদয়  ভরে রেখেছে। তাকে  কিছুতেই  ভোলা যায় না। মা তার  কাছে  অত্যন্ত  আদরের ধন। মাকে তার বারবার  মনে পড়ে।
        
         মনে পড়ে  সুন্দরী  সুলতাকে, যে তার হৃদয়ে  দোলা দিয়েছিল। বেচারা তার জীবন, মৃত্যুহীন মৃত্যু । তাই  তিনি  এখন ও  সুলতাকে  খুঁজেন । যার জন্য তিনি  অনন্তকাল  প্রতীক্ষায়  আছেন।  এই  প্রিয়তমা  তার হৃদয়-মন ভরে  আছে। নদীর জল ও  তীরের মত  এক  হয়ে  মিশে  আছে । এই  প্রেম  বড়ই  স্বর্গীয় ,বড়ই  সুন্দর । একে ভোলা যায় না। প্রকৃতি  আর  সুলতা  কখন   একাকার  হয়ে  যায়  হৃদয়ে।
       
           কাব্যগ্রন্থটি পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। বইটির ছাপা অত্যন্ত সুন্দর। ধ্রুব এষের প্রচছদ  চিত্রটি  অত্যন্ত  প্রশংসনীয়। 
[গ্রন্থের নাম- ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ লেখক- শফিকুল ইসলাম। প্রচ্ছদ- ধ্রুব এষ। প্রকাশক- আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০। ফোন- ৭১১১৩৩২, ৭১ ১০০২১। মোবাইল- ০১৮১৯২১৯০২৪। 

 তবুও বৃষ্টি আসুক - শফিকুল ইসলাম

 বহুদিন পর আজ
বাতাসে বৃষ্টির আভাস
মাটির সোঁদা অমৃত গন্ধ
এখনই বুঝি বৃষ্টি আসবে
সবারই মনে উদ্বেগ
তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার ব্যস্ততা।
তবু আমার মনে নেই বৃষ্টি ভেজার উদ্বেগ
আমার চলার নেই কোনো লক্ষণীয় ব্যস্ততা।
দীর্ঘ নিদাঘের পর
আকাক্সিক্ষত বৃষ্টির সম্ভাবনা
অলক্ষ্য আনন্দ ছড়ায় আমার তপ্ত মনে
আর আমি উন্মুখ হয়ে থাকি
বৃষ্টির প্রতীক্ষায়
এখনই বৃষ্টি নামুক
বহুদিন পর আজ বৃষ্টি আসুক।
দীর্ঘ পথে না থাকে না থাকুক বর্ষাতি
বৃষ্টির জলে যদি ভিজে যায় আমার সর্বাঙ্গ
পরিধেয় পোশাক-আশাক
তবুও বৃষ্টি আসুক
সমস্ত আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামুক
বৃষ্টি নামুক মাঠ-প্রান্তর ডুবিয়ে।
সে অমিতব্যয়ী বৃষ্টিজলের বন্যাধারায়
তলিয়ে যায় যদি আমার ভিটেমাটি
তলিয়ে যাই যদি আমি
ক্ষতি নেই।
তবুও বৃষ্টি নামুক
ইথিওপিয়ায়, সুদানে
খরা কবলিত, দুর্ভিক্ষ-পীড়িত
দুর্ভাগ্য জর্জরিত আফ্রিকায়
সবুজ ফসল সম্ভারে ছেয়ে যাক
আফ্রিকার উদার বিরান প্রান্তর।
তার ও আগে বৃষ্টি নামুক
আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে
সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক,
আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা, হৃদয়ের গ্লানি।
মানুষের জন্য মানুষের মমতা
ঝর্ণাধারা হয়ে যাক
বৃষ্টির সাথে মিলেমিশে
সব পিপাসার্ত প্রাণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বয়ে যাক অনন্ত ধারাজল হয়ে।
বহুদিন পর আজ
অজস্র ধারায় অঝোরে বৃষ্টি নামুক
আজ আমাদের ধূলি ধূসরিত
মলিন হৃদয়ের মাঠ-প্রান্তর জুড়ে ॥   

                   শফিকুল ইসলাম

 উদভ্রান্ত যুগের শুদ্ধতম কবি শফিকুল ইসলাম। তারুণ্য ও দ্রোহের প্রতীক । তার কাব্যচর্চ্চার বিষয়বস্তু প্রেম ও দ্রোহ। কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি অনেক গান ও রচনা করেছেন। তার দেশাত্ববোধক ও সমাজ-সচেতন গানে বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার।

শফিকুল ইসলামের জন্ম ১০ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৩ খ্রীস্টাব্দে সিলেট জেলা শহরের শেখঘাটস্থ খুলিয়াপাড়ায়। তার পিতার নাম মনতাজ আলী। তিনি পেশায় একজন কাষ্টমস অফিসার ছিলেন। তার মাতার নাম শামসুন নাহার।

তিনি সিলেট জেলার এইডেড হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও মদন মোহন মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে এম,এ ইন ইসলামিক ষ্টাডিজ ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শিক্ষাজীবনে অনন্য কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।

কর্মজীবনে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা  কবি শফিকুল ইসলাম চাকরীসূত্রে বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য। তার কর্মজীবনের শুরু কুষ্টিয়া ডিসি অফিসে সহকারী কমিশনার হিসেবে।তিনি ঢাকার প্রাক্তন মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক এডিসি। এছাড়া ও তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন  কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরে উপপরিচালক ছিলেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব, অর্থমন্ত্রণালয়ের ইআরডিতে উপসচিব পদে ও বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। তিনি সরকারী কাজে  যে সব দেশ ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বৃটেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনও সিঙ্গাপুর।

শৈশব থেকেই কাব্যচর্চা করছেন। কলেজে পড়াশোনাকালে তার সম্পাদনায় স্পন্দন নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের হয়। তাছাড়া কলেজ ম্যাগাজিনে তার লেখা কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হতে থাকে। পরবর্তীতে স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পত্রপত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৮১সালে তৎকালীন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারী উপলড়্গে দেশব্যাপী আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগীতায় বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত হন। এছাড়া এছাড়া লেখক সম্মাননা পদক ২০০৮প্রাপ্ত হন। সম্প্রতি তিনি নজরুল স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।

আপাতদৃষ্টিতে তাকে অনেকে প্রেম ও বিরহের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলে ও তিনি যে একজন সমাজ-সচেতন কবি তা তার দহন কালের কাব্য ও প্রত্যয়ী যাত্রা কাব্যগ্রন্থ পাঠে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। সমাজের বিভিন্ন অসংগতি ও বৈষম্য যে তাকে সংক্ষুব্ধ করেছে, অনায়াসে তা উপলব্ধি করা যায়।          

পুরোনো সংবাদ

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি 1999863584187047653

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item