মেয়েটির মরদেহ হিমঘরে আর কতদিন থাকবে?

বিশেষ প্রতিনিধি ৩১ মে॥
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের অয় কুমার রায় মাষ্টার মেয়ে নিপা রানী রায়, ইসলাম ধর্মগ্রহনের পর মোছাঃ হোসনে আরা ইসলামের মরদেহ হিমঘরে পড়ে রয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে মরদেহটি ২০১৪ সালের ১২ মার্চ হতে সংরক্ষনে রয়েছে বলে জানা যায়। মেয়েটির বাবা হিন্দুশাস্ত্রমতে মেয়ের মরদেহ সৎকার, অপরদিকে মেয়েটির শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম মেম্বার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পুত্রবধুর মরদেহ দাফন করতে চায়। এতে আজ বুধবার (৩১ মে/২০১৭) পর্যন্ত প্রায় তিন বছর দুই মাস ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও নিপার মরদেহের দাবিদার দুটি পক্ষের আইনীজটিলতা এখনও শেষ হয়নি।
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের হিমঘরে মেয়েটির মরদেহ সংরক্ষনে থাকায় প্রতিদিনের ভাড়া বাবদ এক হাজার টাকা করে বকেয়া পড়ছে। এ পর্যন্ত বুধবার (৩১ মে/২০১৭) হিমঘরের ভাড়া বাবদ এক হাজার ১৬৮দিনের বকেয়া বাবদ হয়েছে ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। এই টাকাটি সরকারী কোষাগারে জমা হবার কথা। তবে আইনজীবীদের মতে মেয়েটির মরদেহ আদালতের রায়ে যে পাবেন তাকেই হিমঘরের ভাড়া পরিশোধ করে মরদেহ গ্রহন করতে হবে।

মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, লিপা রানী রায় (২০) এর সঙ্গে একই উপজেলার ডোমার  বোড়াগাড়ি ইউনিয়ন পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমাউন ফরিদ লাইজু ইসলামে(২৩) প্রেমের সর্ম্পক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যায়। এরপর লিপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহনপূর্বক মোছাঃ হোসনে আরা ইসলাম নাম ধারন করে এবং নীলফামারী নোটারি পাবলিক কাবের এভিডেভিটের মাধ্যমে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমাউন ফরিদ লাইজু ইসলাম কে বিয়ে করে। এরপর তারা স্বামী স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে আসছিল। এ অবস্থায় মেয়েটির পিতা অয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরন মামলা  দায়ের করে।  মামলার পর মেয়ে ও ছেলে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে সকল কাগজপত্র সহ আদালতে হাজির হয়ে জবান বন্দি প্রদান করে। ফলে আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরন মামলা খারিজ করে দেয়। এরপর মেয়ের বাবা মামলার খারিজ আপিলে তার মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্কো ও মস্তিস্কো বিকৃতি (পাগল) দাবি করে আদালতে কাগজ পত্র দাখিল করে।  আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শারিরিক পরীক্ষার জন্য  রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় মেয়েটি সেখানে অবস্থান করছিল। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের  ১৫ জানুয়ারী মেয়েটির স্বামী হুমায়ূন ফরিদ লাইজু ইসলাম বিষপান করে আতœহত্যা করে। এরপর মেয়েটির স্বামী হুমায়ূন ফরিদ লাইজু ইসলাম আতœহত্যা করার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে মেয়ের বাবা  মেয়েকে তার জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করে। আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারী মেয়েকে নিয়ে  বাবা তার বাড়িতে নিয়ে নিজ জিম্মায় রাখেন। তবে মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্কো ও মস্তিস্কো বিকৃতি (পাগল) দাবি করে আদালতে দায়ের করা মেয়ের বাবার মামলটি চলমান ছিল।

এ অবস্থায় মেয়েটি ২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার  বাড়ীর নিজ শোয়ার ঘরে সবার অগোচরে কীটনাশক পান করে। তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎষাধীন অবস্থায় ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে মারা যায়। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল হতে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে। এরপরের দিন  ১১মার্চ/২০১৪ নীলফামারী জেলার মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়। ওই দিন পুত্রবধু দাবী করে মেয়েটির শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম শরিয়ত মোতাবেক দাফনে ও মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্রে সৎকারের জন্য তাৎনিকভাব নীলফামারী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আবেদন করে। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) এর আদালতে উভয়পক্ষের শুনানী চলে ওই দিনসন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত।

মেয়ে পরে আইনজীবী এ্যাডঃ অসিত কুমার ধর জানান ওই শুনানীতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বিষয়টি  ডোমার থানা পুলিশকে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ প্রদান করে।

এ ব্যাপারে ডোমার থানার তৎকালিক ওসি (তদন্ত) আইউব আলী মেয়ে ও ছেলে পক্ষকে ডেকে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটুট থাকায় ডোমার থানা পুলিশ আদালতে ১২ মার্চ/২০১৪ একটি প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত মেয়েটির মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষনের আদেশ প্রদান করে। ফলে সেই হতে মেয়েটির মরদেহ সেখানে রাখা হয়।

আজ বুধবার নীলফামারী জেলা জজ আদালতের পিপি অক্ষয় কুমার রায়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা হলে তিনি জানান, আমরা উভয়পক্ষকে ডেকে এটি সমাধানে মেয়েটির মরদেহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করার প্রস্তাব করি। উভয়পক্ষ মত দিলে আদালতের মাধ্যমে মেয়েটির মরদেহটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করা হবে। কিন্তু উভয়পক্ষ এতে রাজি হয়ননি। ফলে মেয়েটির মরদেহের দাবির মামলায় মেয়েটির শ্বশুড়ের পক্ষে গেলে মেয়ের বাবা তা সাব-জজ আদালতে আপিল করেন। সেখানে ছেলের বাবা জহুরুল ইসলাম হেরে যান। এরপর মেয়েটির শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারধীন রয়েছে। ফলে মামলার জটিলতার কারনে মেয়েটির লাশ আজও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিম ঘরে রক্ষিত আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মামলার রায়ে যিনি মরদেহের ভাগিদার হবেন তাকে হিমঘরের ভাড়া পরিশোধ করে মরদেহ গ্রহন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায়ে হিসঘরের ভাড়া বিবেচনাও হতে পারে।

এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় মাষ্টার জানান, তিনি মেয়ের মরদেহ সৎ কারের জন্য আজও অপেক্ষা করছেন। আর কতদিন আমার মেয়ের মরদেহ হিমঘরে থাকবে?

অপর দিকে জহুরুল ইসলাম বলেন, পুত্রবধুর মরদেহ ইসলামী মোতাবেক দাফন সম্পন্ন করতে আদালতে রিট করেছি।/



পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6769471140425223288

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item