পীরগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার মে. টন মাছের ঘাটতি, চাহিদা পুরনে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়!

মামুনুররশিদ মেরাজুল ,নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ

পীরগঞ্জে বছরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মে. টন মাছের ঘাটতি থাকায় আমিষের চাহিদা পুরন হচ্ছে না। ফলে উপজেলাবাসীকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মাছ বাহির থেকে ক্রয় করে এনে চাহিদা পুরন করতে হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমিষের চাহিদা পুরনে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে কিছুটা উন্নতির মুখ দেখছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নের ৩৩১ টি গ্রামে প্রায় ৫ লাখ মানুষের জন্য প্রতি বছর ৮ হাজার ৪৪২ মে. টন মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উপজেলার সরকারী-বেসরকারী বিল-জলাশয়ে বছরে ৩ হাজার ৯১৫ মে. টন  মাছের উৎপাদন হচ্ছে। ঘাটতি থাকছে ৪ হাজার ৫২৭ মে. টন। যার বাজার মুল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। প্রতি কেজি ১১০ টাকা দরে এক টন মাছের মুল্য ১১ হাজার টাকা হলে ওই মুল্যমান হয়।
সুত্র আরও জানায়, উপজেলায় সরকারী বিল ২১টি, বেসরকারী বিল ৬৬টি, সরকারী দিঘী ৬টি, বেসরকারী দিঘী ৫ হাজার ৫০টি, বাণিজ্যিক মৎস্য খামার ৬২টি, প্লাবন ভুমি (আমনের সময় ডুবে যায়) ৭০টি, নদী ৪টি, খাল ৬টি এবং ধান ক্ষেতে মাছ চাষ হওয়ার উপযোগী ৭১০টি স্থানে। উল্লেখিত সংখ্যক জলাশয়গুলো থেকে উপজেলাবাসীর মাছ এবং আমিষের চাহিদা পুরন হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা বিশেষ করে রাজশাহী, নাটোর থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মাছ ক্রয় করে এনে পীরগঞ্জের ছোট-বড় হাটবাজারে চড়ামুল্যে বিক্রি করছে। এতে করে সাধারন মানুষ প্রতি কেজিতেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারণ বর্তমানে উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে আধা কেজি ওজনের কার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া) কেজি ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অথচ উপজেলায় উৎপাদিত ওই আকারের মাছ মওসুমের সময় ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। উপজেলায় মাছ চাষে আগ্রহী করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা মৎস্য বিভাগ বিভিন্ন কৌশল গ্রহন করেছে। এরমধ্যে মৎস্য চাষীদেরকে পরামর্শ প্রদান, পুকুর পরিদর্শন, আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পানির গুনাগুন পরীক্ষা, প্রদর্শনী পুকুরে মাছ চাষ, অব্যবহৃত জলাশয়ে মাছ চাষ, সরকারী জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, মাঠ দিবস, মাছের অভয়াশ্রম নির্মান, প্রশিক্ষণ প্রদান, মৎস্য আইন বাস্তবায়ন, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে সহয়তা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। তারপরও মাছ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হতে চাষীরা সময় নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে আগের চেয়ে পীরগঞ্জে মাছ চাষের মনোভাব ইতিবাচক পর্যায়ে বলে মৎস্য বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।
সুত্র আরও জানায়, উপজেলার বড়বিলা, চাপুনদহ, আংরার বিলসহ অনেক জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির ধারন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির চেয়ে ঘাটতির পরিমান বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপজেলার মৎস্যজীবি ও সরকারী বিল-পুকুরপাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন ভুমিহীন সমিতির সদস্যরা ভরাট হওয়া জলাশয়গুলো খননের দাবীও করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে একাধিক আবেদন করেছে। আমিষের চাহিদা পুরনের লক্ষে সরকারীভাবে প্রতিবছরই উপজেলায় বিল খনন করা হচ্ছে বলে জানা যায়। তবে সেটিও অপ্রতুল। চলতি অর্থবছরে উপজেলার চতরা ইউনিয়নে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাভরির বিল এবং রামনাথপুর ইউপি কার্যালয় সংলগ্ন একটি পুকুর ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উপজেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে মানুষের আমিষের চাহিদা পুরন এবং চাষীদেরকে আর্থিকভাবে লাভবান করতে উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে সাধ্যমতো সব উদ্যোগ নিয়েছে বলে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান। তিনি আরও জানান, মাছের চাষ করে মানুষ লাভবান হচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। অপরদিকে রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান বলেন, আমি সহ আমার অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় মৎস্যচাষে মানুষকে আগ্রহী করতে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহন করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষের জন্য চাষীদেরকে উৎসাহ প্রদান করছি।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3711554997489575503

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item