পঞ্চগড়ে দুই বাংলার অশ্র ভেজা মিলন মেলা

মোঃ তোতা মিয়া,সাইদুজ্জামান রেজা/মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম-
প্রতি বছরের মতো এবারো নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই বাংলার মিলন মেলা। কড়া নজরদারি আর বিজিবি বিএসএফের বাধা উপেক্ষা করে প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে এক পলক দেখা করতে সীমান্তে লাখো মানুষের ঢল নামে। মুহূর্তে ওই সীমান্ত দুই বাংলার মিলন মেলায় পরিনত হয়।প্রতি বছর বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন জেলা সদরের অমরখানা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মিলন মেলায় অংশ নিতে সীমান্তে দুই পাড়ে জড়ো হতে থাকে লাখো মানুষ।শুক্রবার সকাল থেকেই পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন প্রান্তের নারী পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে ওপারের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে অমরখানা সীমান্তের কাছে এসে জড়ো হয়।

দুপুরে বিজিবি ও বিএসএফ দুই বাংলার মানুষদের সীমান্তের কাঁটা তারের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ওই সীমান্তের ৭৪৪ নং মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নং সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার নো-ম্যান্সল্যান্ড এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে পঞ্চগড় জেলার অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা ও বোদাপাড়া এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ি ও বড়ুয়াপাড়া গ্রামসহ উভয় দেশের বিভিন্ন বয়সী লাখো মানুষ মিলনমেলায় অংশ নেয়। এই মিলন মেলায় লাগেনা কোন ভিসা বা পাসপোর্ট। কাঁটা তারের বেড়ার ফাঁকা দিয়েই প্রিয় স্বজনদের এক পলক দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। আবেগ, কান্না, স্নেহ ভালোবাসায় ভরে উঠে পুড়ো সীমান্ত। এ সময় কেউ স্বজনদের হাত ছুঁয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন আবার কেউ স্বজনদের জন্য আনা উপহার সামগ্রী বিনিময় করে।এবার কেউ কেউ নববর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় স্বজনদের ইলিশ মাছ উপহার দেয়। আত্মীয় স্বজন না থাকলেও মিলন মেলার মহোৎসব দেখতে আসে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাও।জানা যায় ৪৭এ পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির পূর্বে পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ছিল। পাক-ভারত বিভক্তির পর এসব এলাকা বাংলাদেশের অর্ন্তভূক্ত হয়। দেশ বিভক্তের কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুই দেশের নাগরিকরা তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেলেও ভারত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় একযুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় অমরখানা সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।শত আবেগ আর প্রিয় স্বজনদের এক পলক দেখার লোভে লাখো বাঙালি প্রতি বছর দুই বাংলার এই মিলন মেলায় যোগ দেয়। এ সময় তারা ওই সীমান্তে একটি সীমান্ত হাটের দাবি জানান। কাঁটাতারের দুই পাশে জড়ো হওয়া মানুষের এই মিলন মেলা বিকেল পর্যন্ত চলে। তবে এখানে একটি সীমান্ত হাট হলে আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের অনেক উপকার হতো।অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান জানান, প্রতি বছরই বাংলা বছরের প্রথম দিনে অমরখানা সীমান্তে দুই বাংলার যে মিলন মেলা হয়। এই মেলাতে সবাই ঈদের মতো আনন্দ করে। উপহার সামগ্রি স্বজনদের মধ্যে আদান প্রদান করে। প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। এই মেলার মাধ্যমে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি আরো  বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন তিনি।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 5959583974174565572

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item