বুড়ো হয়ে গেছে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কটি! ঘটছে দুর্ঘটনা, ক্ষত-বিক্ষত সড়কে উঠেছে হাম, অহরহই প্রানহানি ঘটছে

মামুনুররশিদ মেরাজুল,নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ

বুড়ো বয়সে আর ওজনের ভার সইতে পারছে না রংপুরÑঢাকা মহাসড়কটি। সড়কটির শরীরে অসংখ্য হাম আর গর্ত হয়েছে, হাজারো স্থানে ক্ষত-বিক্ষত এবং কোথাও কোথাও কার্পেট উঠে গিয়ে সড়কের পাশে চলে গেছে। ফলে অহরহই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রানহানি ঘটছে। ১৫ বছর আয়ুষ্কাল দিয়ে নির্মিত সড়কটির বয়স ২৭ বছর চলছে। আর ২০ মে. টন ওজন বহনের ক্ষমতা দেয়া হলেও বিআরটিএ এবং হাইওয়ে পুলিশের নজরদারীর অভাবেই ৪০ থেকে ৫০ মে. টন ওজনবাহী যানবাহন চলাচল করায় চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে মহাসড়কটি।
রংপুর সড়ক জোন সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ এর দশকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কটি নির্মানের পর সড়কটির মেয়াদ ১৫ বছর নির্ধারন করে দেয়া হয়েছিল। সড়কটির উপর দিয়ে ২০ মে. টন ওজনের মালামাল পরিবাহী যানবাহন চলাচলের অনুমোদন দেয়া হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে ৪০ থেকে মে. টন ওজন মালবাহী যানবাহন চলাচল করায় সড়কটির স্থায়ীত্ব কমে গেছে। বয়স বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য স্থানে গর্ত আর হামে (উচু) ভরে গেছে। অনেক স্থানের কার্পেট উঠে সড়কের পাশে গিয়ে পড়ে আছে। ক্ষত-বিক্ষত অংশগুলোকে পাশ কাটাতে গিয়ে দ্রুতগামী যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় প্রানহানির ঘটনা ঘটছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রংপুর সড়ক জোনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে ঠিকাদার বা বিভাগীয়ভাবে জোড়াতালি দিয়ে সড়কটি মেরামত করে যান চলাচলেরর উপযোগি করার ব্যর্থ চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত কতবার সড়ক রক্ষণাবেক্ষন করা হয়েছে, তার সঠিক হিসেব নেই। শুধু অর্থই অপচয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। তারপরও যান চলাচলের উপযোগি রাখতেই হবে রংপুর সওজ জানায়।
রংপুর সড়ক জোনের একটি সুত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে থ্রি-হুইলার ব্যতীত প্রায় ২০ হাজার ছোট-বড় যানবাহন এই সড়কে চলছে। এ ব্যাপারে রংপুর সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম বলেন, সড়কটি নির্মানের সময় ডিজাইন অনুযায়ী যে পরিমানের যানবাহন চলাচল করার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশী গাড়ী চলছে। ফলে মেয়াদ পর্যন্ত সড়কটি তার স্থায়ীত্ব ধরে রাখতে পারছে না। পাশাপাশি চালকদের অসতর্কতার কারনেও সড়কটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা অধিক পরিমানে মালামাল পরিবহন করায় সড়কের ক্ষতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে ওজন নিয়ন্ত্রন যন্ত্র ভুমিকা রাখবে। কিন্তু পুলিশ সে দায়িত্ব পালন করছে না বলে আমি মনে করি। লালমনিরহাট সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী সাজিদ রহমান বলেন, সড়কটির বিভিন্নস্থানে নীচ থেকে ফুলে উঠে হাম এবং পটহোলের (গর্ত) সৃষ্টি হওয়ায় চালকরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন। এ ছাড়াও সড়ক থেকে পাথর-বিটুমিন জমাট বেঁধে উঠে উচু হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এ জন্যই সড়কটি পুনঃ মেরামত করা হলে মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল কমবে বলে আশা করছি। রংপুরের বড়দরগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হাফিজুর রহমান বলেন, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার সাথে প্রায় ৩ হাজার ২’শ যানবাহন যোগাযোগ করছে। এতে মহাসড়কে উপর যান চলাচলের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত মাল বোঝাইয়ের ব্যাপরাটি আমাদের ক্ষেত্রে ততটা প্রযোজ্য নয়। কারন ওজন পরিমাপক আমাদের হাইওয়ে পুলিশে নেই। হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া জোনের এএসপি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ইদানিং ক্ষত-বিক্ষত  মহাসড়কটিতে থ্রি-হুইলারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অহরহই দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা ৬০ কি.মি গতির উপরে চলাচলরত পরিবহনের ব্যাপারে গতি নিয়ন্ত্রক মাপক ‘স্পিডগান’ দিয়ে গতি নির্ধারন করে ১৪২ ধারায় মামলা করছি। কারন মহাসড়কের অবস্থা ভাল নয়। দুর্ঘটনা কমাতে আমরা স্পিডগান দিয়ে প্রায় ৮’শ মিটার দুর থেকে গাড়ীর গতি নির্ধারন করতে পারি। বিআরটিএ’র একটি সুত্র নাম না প্রকাশের শর্তে জানায়, মহাসড়ক দিয়ে ২০ মে. টন ওজনের বেশী মালামাল পরিবহন করা যাবে না এমন বিধি থাকলেও কেউ তা মানছে না। যদি কেউ অতিরিক্ত মাল পরিবহন করে তবে আমরা ১৪৯ ধারায় মামলা দিয়ে থাকি। কিন্তু এখন ভারী শিল্পের দিকে দেশ এগিয়ে যাওয়ায় ৪০ থেকে ৫০ মে. টন ওজনের মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় মহাসড়কটি আর লোড নিতে পারছে না। রংপুর সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুন্নবী জানান, আমাদের আওতাভুক্ত রংপুর-ঢাকা মহাসড়কটি সচল রাখতে বিভাগীয়ভাবে মেরামত করছি। সামনে বর্ষা মওসুম, তাই আমাদের এখন থেকেই মানসিক চাপ বেড়েছে। কারণ বর্ষাই সড়কের মহা শত্র“। কিছু কিছু দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে রোড ডিভাইডার ও সড়ক প্রশস্তকরন করা হয়েছে। সংস্কার না করে সড়কটি পুনর্নির্মান করা বা ফোরলেনে উন্নীত করা প্রয়োজন।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 5546378083383478418

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item