জলঢাকা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল মুরাদের বিজয়

বিশেষ প্রতিনিধি ৬ মার্চ॥
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দলে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলাা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফায়দা কাজে লাগিয়ে জয়ের মালা পড়েছে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী টিউবয়েল প্রতিকের ফয়সাল মুরাদ। তিনি ভোট পান ৪১ হাজার ৪৭৩। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের মশিউর রহমান বাবু (নৌকা) ভোট পেয়েছেন ১৫ হাজার ১৩৩। তিন প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা জাসদ (ইনু) সভাপতি  গোলাম পাশার এলিচ (তালা) ভোট সংখ্যা ১৪ হাজার ১৩৩।
আজ সোমবার উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহন ও গগনা শেষে সন্ধ্যায় উক্ত ফলাফল ঘোষনা করেন জেলা নির্বাচন অফিসার জিলহাস উদ্দিন।
সুত্র মতে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার ৫৯৪। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে ভোটাদের উপস্থিত কম থাকায় ভোট প্রয়োগ করে মাত্র ৭১ হাজার ১৬১ জন। এরমধ্যে ভোট বাতিল হয় ৪২২টি। মোট বৈধ ভোট এসে দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৭৩৯টি। এতে শতকরা ভোট পড়ে ৩০ দশমিক ৮৬ ভাগ।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মশিউর রহমান বাবু অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম কোন্দল থাকায় তিনি বলির পাঠা হয়েছেন। তাকে নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা উপরে সহযোগীতার ভান করলেও তারা আমার পরাজয়ের পেছনে কাজ করেছে।
এদিকে বিজয়ী প্রার্থী নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাবি করলেও উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আলহাজ্ব মকবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সে আমাদের সমর্থিত প্রার্থী। সে উপজেলার সহকারী সেক্রেটারী।

যে ভাবে নিবার্চন হলোঃ- নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে সোমবার অনুষ্ঠিত হয় উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহন। বেশীরভাগ ভোটকেন্দ্র দিনভর ছিল প্রায় ফাকা।  প্রতিদ্বন্দি তিন প্রার্থী তাদের প্রচারনায় খুব একটা মাঠে ছিল না। এম কথাই বলছে ভোটাররা। ফলে নিরুত্তাপ ভোট উৎসব ভোটারদের টানতে পারেনি ভোট কেন্দ্রে। 
জানা যায় উপজেলা নির্বাচনের মূলপর্বে এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর। তিনি ২০১৬ সালের ২৮ মে  পদত্যাগ করে পৌর মেয়র পদে নির্বাচন করার কারনে পদটি শুণ্য হয়। ওই শুন্য পদের উপ-নির্বাচনে  সোমবার অনুষ্ঠিত হলো ভোটগ্রহন।
এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন তিনজন। এরা হলো নৌকা প্রতিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. মশিউর রহমান, তালা প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা জাসদের সভাপতি গোলাম আজম এলিচ ও  টিউবয়েল প্রতিকে জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফয়সাল মুরাদ।
ভোট চলাকালিন সাধারন ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে জামায়াত সমর্থিত ভোটাররা ছিল এগিয়ে। তদের নারী পুরুষ ভোটাররা দলে দলে এসে ভোট প্রয়োগ করে চলে যায়।
দুই লাখ ৩০ হাজার ৫৯৪ ভোটারের মধ্যে উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার থাকলেও ভোট কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল না।
ভোট গ্রহন চলাকালিন সরেজমিনে ঘুরে উপজেলার কাঁঠালী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঁঠালী গ্রামের নারী কৃষি শ্রমিক  মিনতি বালা রায় (৫০) ও ললিতা বালা রায় (৪৫) সঙ্গে কথা হয়। তারা বোরোক্ষেতে কাজ করছিল। তারা স্থানীয় আঞ্চলিকভাষায় বলেন ‘হামেরা এলাও যাই নাই ভোট দিবার। কাজ শ্যাষ করি সময় পাইলে যামো। না পাইলে যামো না।’ তারা জানান, এবারের ভোটের তেমন জোর নেই। কোন প্রার্থী বা পক্ষের লোক গ্রামে আসেনি ভোট চাইতে। প্রচারণাও তেমন ছিল না। একারণে ভোট উৎসব ভোটকেন্দ্রে টানতে পারেনি তাদেরকে।
অপর নারী শ্রমিক সব্যা রাণী রায় (৪০) দুপুর দেড়টার দিকে  বলেন,‘এইবার কোন প্রার্থী ভোট চাবার আইসে নাই হামারঠে (আমাদের কাছে)। মুই ভাবেছ ওমার তেমন ভোটের দরকার নাই, এইজন্য ভোট দিবার যাও নাই।’ তিনি জানান, ভোট আসলেই প্রার্থীসহ পক্ষের লোকজন এলাকায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় নামেন। দলে দলে এসে ভোটারদের ভোট প্রার্থণা করেন। কিন্তু এবারের ভোটে তেমন দেখা যায়নি।
বেলা পনে দুইটার দিকে উপজেলার দুন্দিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে কৃষক সফিয়ার রহমানকে দেখা গেছে বোরো আবাদের জমিতে কাজ করতে। এসময় তিনি বলেন,‘কাজ শেষ করে সময় পেলে যাবো ভোট কেন্দ্রে।’ ভোটের প্রতি এমন অনিহার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তিন প্রার্থী তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি ভোটারদের মাঝে।’ আর ভোটারদের এমন অনাগ্রহে উপজেলার বেশীরভাগ ভোটকেন্দ্র দিনভর ছিল প্রায় ফাকা।
উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের হরিশচন্দ্র পাঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র। সকাল সাড়ে ১১টায় দেখা গেছে প্রায় ভোটার বিহীন। ভোট কেন্দ্রের বাইরেও সমাগম নেই ভোটারদের। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, মোট ২হাজার ৬১৮ ভোটের মধ্যে ১৯০ ভোট পড়েছে।  এসময় ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা হরিশ চন্দ্র পাঠ ঢুলিয়া গ্রামের লেবু হোসেন (৫০) বলেন,‘প্রচার প্রচারণার অভাবে এবারের ভোট আকৃষ্ট করতে পারেনি ভোটারদেকে। প্রতিদ্বন্দী তিন প্রার্থীর কেউ ভোট চাইতে আসেনি এলাকায়। একারণে ভোটাররা কম আসছেন ভোট কেন্দ্রে।’
বেলা ১২টায় মীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভোট কেন্দ্র। সেখানে ৩ হাজার ৩৫১ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪শ। বেলা সোয় ১২টায় মীরগঞ্জ ইউনিয়নের পাঠানপাড়া মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্র। সেখানে ২হাজার ৫৮৪ ভোটের মধ্যে পড়েছে ৩শ ভোট। দুপুর একটায় কাঁঠালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১হাজার ৭৬১ ভোটের মধ্যে পড়েছে ২২৫ ভোট। খবর নিয়ে জানা গেছে পৌর এলাকার বগুলাগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র দুপুর একটায় ৩হাজার এক ভোটের মধ্যে ৩৫০ ভোট, একই সময়ে জলঢাকা বলিকা উচ্চ বিদ্যায়ল ভোটকেন্দ্রে ২হাজার ৬৯৮ ভোটের মধ্যে ৪৯৫ ভোট, জলঢাকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর ১২টায় ২হাজার ৫৬৭ ভোটের মধ্যে ১০৪ ভোট পড়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিলহাজ উদ্দিন জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের উপ নির্বাচনে ৮৩টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার ৫৯৪। ২০১৬ সালের ২৮ মে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে পৌর মেয়র পদে নির্বাচন করার কারনে পদটি শুণ্য হয়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি কম হলেও শান্তিপুর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5215171234832156530

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item