সর্বনাশ করছে ইউক্যালিপটাস গাছ

মামুনুর রশিদ মেরাজুল 

প্রাকৃতিক আর কৃত্রিম সম্পদের বরাবরই সর্বনাশ করছে ইউক্যালিপটাস গাছ। অল্প সময়ে গাছটি বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ মানুষই এটি বাগানে কিংবা রাস্তায় সামাজিক বনায়নের আওতায় রোপন করছে। আর ফি বছর বৈশাখী কিংবা সামান্য ঝড়েই গাছটি ভেঙ্গে পড়ে বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড, হাজারো ঘরবাড়ী সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সামাজিক সচেতনতার অভাবে পীরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গাছটি ব্যাপকভাবে রোপন চলছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বল্প সময়ে লাভজনক হওয়ায় উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদের সাথে চুক্তি সাপেক্ষে অধিকাংশ রাস্তায় এমনকি সাধারন মানুষ তাদের ফসলের জমির ধারে বা জমিতেই ইউক্যালিপটাস গাছ রোপন করেছে। গাছটি লম্বা হওয়ার কারণে সামান্য ঝড়েই ভেঙ্গে পড়ছে। গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় ফি বছরই হাজারো ঘর-বাড়ী, অসংখ্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি কৃত্রিম সম্পদেরও ক্ষতি করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ ব্যাপারে বড়আলমপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন- বিভিন্ন গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন পরিষদের সাথে চুক্তি করে রাস্তার দু’ধারে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপন করছে। কয়েক বছর আগে লাগানো গাছ ভেঙ্গে পড়ে রাস্তা চলাচলে বিঘœ ঘটছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্সারী মালিক বলেন- অল্প সময়ে গাছটি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের এটির প্রতি চাহিদা বেড়েছে। তাই আমরাও এর চারা করছি। গাছটির ক্ষতিকর দিক সস্পর্কে সরকারীভাবে ব্যাপক প্রচারনা এবং প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করা হলে প্রকৃতিও রক্ষা পাবে।
ঝড়ের কারণে ইউক্যালিপটাস গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় বেকায়দায় পড়ছে রংপুর পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)-১ কর্তৃপক্ষ। সামান্য বাতাসেই গাছটি তারের উপরে ভেঙ্গে পড়ায় খুটি পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। পবিস-১ এর পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বিগত ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল এবং ২৩ ও ২৬ মে পীরগঞ্জে বৈশাখী ঝড়ে ব্যাপকহারে গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়েছিল। ফলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা চরম ভোগান্তি পোহায়। রংপুরের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, গাইবান্ধার সাদুল¬াপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রংপুর পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতি-১ গঠিত এবং এর বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রায় ১ লাখ। ওই সমিতির এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ইউক্যিালিপটাস গাছটি আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। সামান্য বাতাসেই এটি ভেঙ্গে তারের উপর পড়ায় গত বছর ৫’শতাধিক খুঁটি ভেঙ্গে যায়। আবার বৈশাখী ঝড় আসছে। আমরাও শংকিত হয়ে পড়ছি। কারণ গত বছর প্রায় ৪ হাজার কি.মি বৈদ্যুতিক লাইনের মধ্যে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।
উপজেলার কাদিরাবাদ বনবীটের অফিসার শাহজাহান আলী বলেন- ইউক্যালিপটাস গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় সাধারন মানুষ এটি রোপন করছে। এটি মারাত্মক ক্ষতিকর, সে বিষয়ে জনগণকে সচেতন করছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র ঘোষ বলেন- ইউক্যালিপটাস গাছটি ভিনদেশী প্রজাতির। এর বেঁচে থাকার জন্য অনেক পানির প্রয়োজন হওয়ায় মাটির অনেক নীচে শিকড় দিয়ে পানি শোষণ করে। আর খরা প্রবণ এলাকায় অধিক পরিমানে পানি শোষণ করে এবং মাটির উর্বরা শক্তি নষ্ট করায় জমিতে ফসল কম উৎপাদন হয়। এর পাতা না পচায় পানিতে কিংবা জমিতে পড়লে মাছ ও ফসলের ক্ষতিসাধন হয়। পীরগঞ্জের খালাশপীর কয়লা খনি প্রকল্পের ভূ-তত্ত্ববিদ শ্রী অনুপ কুমার রায় বলেন- গাছটি স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিক সুবিধা দিলেও অধিক পানি শোষনের কারণে এ অঞ্চলকে মরুকরণের দিকে ধাবিত করছে।
রাজশাহী বিশ্বািবদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুর হোসেন বলেন- ইউক্যালিপটাস অষ্ট্রেলিয়ার মরুজ অঞ্চলে জন্মে। বৃটিশরা বনায়নের জন্য আমাদের দেশে এটি এনেছে। গাছটি খুব পানি শোষণ করে এবং এর শিকড় থেকে একধরনের বিষাক্ত জৈব্য নিঃসরন হওয়ায় প্রকৃতির ক্ষতি হয়। বন বিভাগের উদাসীনতা, এনজিও’দের তৎপরতা আর সাধারন মানুষের অজ্ঞতার কারণে উত্তরাঞ্চলে গাছটি ব্যাপক আকারে রোপন করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করে গাছটি রোপনের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন।

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 5856381262967659008

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item