রংপুরে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবি- নিরব শ্রম দপ্তর!

হাজী মারুফ-

রংপুর বিভাগীয় শহর ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ জনৈক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে নানা অভিযোগ কাধে নিয়ে নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের দায়িত্বভার গ্রহণ করার ঘটনায় সমালোচনার ঝর বইছে সর্বত্রই। শ্রম দপ্তরের কর্তাব্যাক্তিদের খেয়ালিপনায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ঝক্কি-ঝামেলা। শ্রম দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নিরবতার করাল গ্রাসে ইউনিয়নের কার্যক্রমে বাড়ছে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা। 
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগীয় শহর ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-৮১৮) নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের ১১অনুচ্ছেদ অনুসারে কার্য নির্বাহী কমিটির মেয়াদকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজশাহী শ্রম দপ্তরে ১মাসের সময় প্রার্থনা পূর্বক সাধারন সভা আহবান করার উদ্যোগ নেয়ার অন্তিম মুহুতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঢাালাই মিস্ত্রি গোলাম মোস্তফা লেবু, সহিদুল ইসলাম সহিদ, আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন অনুর নেতৃত্ব প্রায় শতাধিক শ্রমিককে সাথে নিয়ে সংগঠন কার্যালয়ে এসে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের উপর চড়াও হয়ে উঠেন। এসময় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে সাদা প্যাডের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে স্ব স্ব পদ হতে তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করে। একযোগে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় শ্রম আইন ও সংগঠনের গঠনতন্তের মৌলিক বিধান লঙ্ঘন করে ক্ষ্যান্ত হয় নাই, তরিঘরি করে নিজেরাই একটি এডহক কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটি ঘোষনা দেয়। বিদায়ী কার্য নির্বাহী কমিটি কর্তৃক সদস্য সনাক্তি বা পরিচয় পত্রসমূহ বাতিল পূর্বক লুপ্ত শিল্প সম্পর্কীয় বিধি আদলে (ফরম-৫৫ ক অনুসারে সদস্য ফরম না করিয়া) ডি-ফরম তৈরী পূর্বক সদস্যভুক্তি এবং স্বাক্ষরবিহীন পরিচয়পত্র প্রদান করে। কথিত ভুইফোড় নেতৃবৃন্দ মনগড়াভাবে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে নগরীর সীমানা অতিক্রম করে জেলার সদর উপজেলা, গঙ্গাচড়া উপজেলা, কাউনিয়া উপজেলা, পীরগাছা উপজেলা, তারাগঞ্জ এবং বদরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নির্মাণ কাজে নিয়োজিতদের ইউনিয়নের সদস্যভুক্তি করে। এতে করে ৭ হাজার ৫শ’ ৩৩জন সদস্য দেখায়। তাদের প্রত্যেকের ছবিযুক্ত করে। সদস্য অনুমোদন ও ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে অর্ন্তভুক্তদের পরিচয় বহনের জন্য স্বাক্ষর বিহীন পরিচয়পত্র ছাড়াও প্রত্যেককে একটি ভোটার যুক্ত টোকেন হস্তান্তর করে। ভোটার টোকেনে নিজেরাই সভাপতি, সাধারন সম্পাদক সেজে স্বাক্ষর দিলেও অধিকাংশ টোকেনে কোন স্বাক্ষর প্রদান করেন নাই । ৭ হাজার ৫শ’ ৩৩জনকে পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে টাকা আদায় করে। হেডমিস্তি ৫শ’, মিস্তি ২শ’, এবং লেবার ১শ’ হারে প্রত্যেকের কাছ হতে টাকা নেয়া হয়। এতে করে পরিচয়পত্র বিক্রি বাবদ ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কথিত চক্রটি। এছাড়াও নানান অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা মাথায় নিয়ে অবশেষে প্রহসনের নির্বাচনের তফশীল ঘোষনা করে। ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেয়া হতে একাধিক নেতা বিরত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরিস্থিতি বেগতিক আচ করতে পেরে কথিত চক্রটি সাবেক নেতাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। ঘোষিত তফশীলমতে চলতি বছরের ৩ ফেব্রয়ারী নির্বাচন সম্পূন্ন করে নিজেদের মনোনীত লোকদের নির্বাচিত করার ছক আটেন।  এবং শেষমেস কথিত মহলটি নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রহসনের নির্বাচনে জয়ীদের দায়িত্বভার হস্তান্তর উপলক্ষে গত শুক্রবার রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কথিত মহল।
দায় সারাগোছের সভা ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে সাধারন সদস্যদের উপস্থিতি তুলনামূলক হারে কম। যেখানে সংগঠনের নির্বাচনে সাড়ে ৭ হাজার ভোটার দেখানো হয়েছে. অথচ ওই সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেক অনুষ্ঠানে বিষাদেও ছায়া লক্ষ্য করা যায়।
তারা আরো অভিযোগে বলেন রংপুর বিভাগীয় শহর ইমরাত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-৮১৮) রংপুর মহানগর ভিত্তিক একটি ট্রেড ইউনিয়ন । বিগত কার্যকরী কমিটি রিটার্ন দাখিলের সময় প্রায় ২ হাজার সদস্য দেখায় । অথচ নির্বাচনে কথিত চক্রটি ৭ হাজার ৫শ’ ৩৩ জন ভোটার করেন। এদিকে, ৩ ফেব্রয়ারীর অনুষ্ঠিত ইউনিয়নের নির্বাচন বাতিল করার দাবি তুলেছেন প্রতারনার শিকার কয়েকজন নেতা লিখিত অভিযোগে করেন সদ্য বিদায়ী সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফুলচান ঢালী, ইলমাইল হোসেন, রায়হান ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবি, জিয়াউল রহমান জিয়া, মোকছেদুল ইসলাম মকছু, আব্দুল সালাম, আব্দুল রহিম, মমদেল মিয়া, মো: সুমনসহ সদস্যবৃন্দ। অপরদিকে, রংপুর ও রাজশাহী শ্রম দপ্তরের কর্তাব্যাক্তিদের উদাসীনতা ও খাম-খেয়ালিপনায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ঝক্কি-ঝামেলা। শ্রম দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নিরবতার করাল গ্রাসে ইউনিয়নের কার্যক্রমে বাড়ছে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা এমন অভিযোগ এখন নিত্যদিনের হয়ে উঠেছে।
সচেতন শ্রমিক নেতারা বলেন,  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা সংগঠনের অভিষেক অনুষ্ঠান বেশ জাকজমকপূর্ণভাবে হয়, কিন্তু ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও সদস্যদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এদিকে, সাবেক সাধারন সম্পাদক ফুলচান ঢালী বলেন, লেবুগং তাদের পাতানো নির্বাচন করতে জোরপূর্বক আমাদের পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অমান্য করে সদস্য অন্তভুক্তির নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতানো ছাড়াও প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে নিজেদের মনোনীত লোকদের নির্বাচিত করছেন। বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার প্রতিকার চেয়ে রাজশাহীর যুগ্ম শ্রম পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এ সব সমস্যার সমাধানসহ প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে, ইউনিয়নের নব সহ সাধারন সম্পাদক আসাদ বলেন, সবকিছু নিয়মমাফিক ভাবে পরিচালনা করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। নির্বাচনে ফুলচান ঢালী হেরে যাওয়ার ক্ষেভে সংগঠনের নামে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য উদঘাটন পূব্র্ক সত্য খবর পরিবেশন করার আহবান জানান। এসময় সংগঠন কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে ইউনিয়নের উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা লেবু বলেন, সব নিয়ম মেনে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। পরাজিত প্রার্থীরা মিথ্যাচার করে সংগঠনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করছে। ফুলচান ঢালী ক্ষমতায় থাকাকালীন ইউনিয়ন অফিসটি জুয়ার স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিল। পূর্বের কমিটি ৩বছরের রিটার্ণ দাখিল করেন নাই। আমার বিরুদ্ধে ১৮ লাখ টাকা মূল্যমানের একটি ট্রাক কেনার কথা ছড়িয়েছেন পরাজিতরা। গাম্ভিয্যের সাথে উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা লেবু বলেন, আমি আজ (বৃহস্পতিবার) রংপুর পোষ্ট অফিসে সঞ্চয়ের ১২ লাখ টাকা তুলছি। আপনারা সাংবাদিক এটাও পেপারোত লেখেন ভাই।  নির্বাচনে হেরে এখন তাদের মাথা খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত সদস্যগনের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়নটিকে বাচানোর জন্য আমরা কয়েকজন মিলে বিনাস্বার্থে শ্রম দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠন সম্পূর্ণ করছি। আমরা কোন টাকা তছরুপ করি নাই। আমি ১২ হাজার ৫শ’ টাকা গ্রহণ করছি. আর আমার খরচ হইছে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা। এখনও আমি ইউনিয়নের কাছে টাকা পাবো। আর পরাজিতরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংগঠনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে। কোন লাভ হবে না। রাজশাহী শ্রম দপ্তরও আমরা যোগাযোগ করছি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী বিভাগীয় যুগ্ম শ্রম পরিচালকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 167346247649335865

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item