‘তারা জজ’- এর জীবনী, নামেও হাকিম, কাজেও বিচারক ছিলেন।


পরিবারিক পরিচিতি ঃ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের হলদীবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন আবদুল হাকিম মন্ডল ওরফে তারা। তার বাবা আলহাজ্ব আছান উল্ল্যা মন্ডল ওই ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান; মাতা রহিমা বেগম গৃহিনী ছিলেন। বাবার ইচ্ছে ছিল ‘তারা’ যেন বড় হয়ে একজন বিচারক হন। সে জন্যই তার নাম রেখেছিলেন আবদুল হাকিম। বাবার স্বপ্ন পুরণ করেন তিনি জজ হয়ে। নামেও হাকিম, কাজেও বিচারক হলেন তিনি। তারা মন্ডল চাকুরী জীবনে তারা জজ নামে এলাকায় যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন ঃ
১৯৫৩ সালের ৩০ এপ্রিল ওই পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। নিজ গ্রামের ধুলোমাটিতে হেসে খেলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তার গ্রামের পাশে গাংজোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে চতরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর শিক্ষা জীবনে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করেন। তারপর জীবনের পদোন্নতি পেতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে বিএ (সম্মান) সম্মান ও  ১৯৭৬ এম.এ পাশ করেন। পরে ১৯৭৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (আইন বিষয়ে) ডিগ্রি নেন।

চাকুরী জীবনঃ
১৯৮০ সালে রুপালী ব্যাংকে অফিসার পদে প্রায় ২ মাস চাকরী করে ছেড়ে দেন। একই বছরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে গাইবান্ধায় চাকরীতে যোগদান করেন। সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৮১ সালে ম্যানেজার হিসেবে দিনাজপুরে যান।
ওই চাকুরীটিও ছেড়ে দিয়ে তার বাবার ইচ্ছেতেই ১৯৮১ সালের ৯ ডিসেম্বর সহকারী জজ হিসেবে রাজশাহীতে যোগদান করেন। এ চাকুরীর সুবাদে তিনি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। আইন সেবার মাধ্যমেই তিনি তার চাকুরী জীবনের অবসর পর্যন্ত গড়িয়েছেন।
পদের নাম ও কর্মস্থল ঃ
মুন্সেফ ঃ রাজশাহী- ১৯৮১
মুন্সেফ ঃ নবাবগঞ্জ  ১৯৮২
মুন্সেফ ম্যাজিষ্ট্রেট ঃ উল্লাপাড়া ১৯৮৩
মুন্সেফ ঃ পঞ্চগড় ১৯৮৪
সহকারী সচিব ঃ আইন ও বিচার মন্ত্রনালয় ১৯৮৫- ১৯৯০
সাব জজ ঃ বগুড়া- ১৯৯০-১৯৯১
ডেপুটি রেজিষ্ট্রার ঃ হাই কোর্ট, ঢাকা ১৯৯২-১৯৯৩
অতিরিক্ত জেলা জজঃ সিরাজগঞ্জ  ১৯৯৩
অতিরিক্ত জেলা জজ ঃ রাজশাহী  ১৯৯৩-১৯৯৯
বিভাগীয় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল জজ, রাজশাহী- ১৯৯৯-২০০০
জেলা জজ ঃ নরসিংদী ২০০০
বিভাগীয় ষ্পেশাল জজ ঃ রাজশাহী ২০০৪
জেলা জজ ঃ নওগাঁ ২০০৭
জেলা জজঃ বগুড়া  ২০০৯
জেলা জজ ঃ জামালপুর ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত (অবসর পর্যন্ত)

বৈবাহিক জীবন ঃ

পড়ালেখা অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ রংপুর শালবনে (ইন্দিরা মোড়ে) বিয়ে করেন তারা মন্ডল। তার স্ত্রী বেগম আকতার জাহানও এলএলবি তে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি গৃহিনী।

ভাই-বোনঃ
আবদুুল হাকিম ওরফে তারা জজ ৯ ভাই-বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ। তার মতোই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন ভাই-বোনরা। তারা হলেন ঃ
১)    প্রয়াত আফসার আলী মন্ডল পীরগঞ্জের কাবিলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
২)    ডাঃ মোঃ গোলজার রহমান এমবিবিএস, ডিও, (অবসরপ্রাপ্ত চক্ষু বিশেষজ্ঞ)
৩)    আব্দুল করিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
৪)    আব্দুল হাকিম তারা মন্ডল (অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ)
৫)    মোহাম্মদ আলী মন্ডল, এম.এ, সুপারিনটেনডেন্ট, কাষ্টম এন্ড এক্সাইজ, ঢাকা।
৬)    জোবেদা খাতুন
৭)    হাজেরা খাতুন
৮)    ছায়েরা খাতুন
৯)    জেসমিন আক্তার।

সন্তান-সন্ততিঃ
তারা জজ বিবাহিত জীবনে শুধুমাত্র ৩ কন্যার জনক। ছোট মেয়ে এখনও পড়ালেখা করছেন।

ক) বড় মেয়ে শরমিন জাহান, এলএলবি তে (অনার্স), এলএলএম (প্রথম শ্রেনী)। বর্তমানে টাঙ্গাইলে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে কর্মরত। তার স্বামী সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ওই জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

খ) মেজ মেয়ে ডাঃ জান্নাতুন নাঈম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ালেখা করে এমবিবিএস পাশ করেন। তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ- রংপুর) ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্বামী শাহিদুৎ তারিফ বাংলাদেশ রেডিও, সাভার, ঢাকায় সহকারী প্রকৌশলী (বিসিএস-তথ্য) হিসেবে কর্মরত।

গ) ছোট মেয়ে নওরীন আহসান ঐশী পরিবারের সাথেই চতরায় আছেন। তিনি চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজে এইচএসসি তে পড়ছেন।

সামাজিক কর্মকান্ড ঃ

চাকরীর শত ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার তাকে ঝোঁক পেয়ে বসেছিল। তিনি তার এলাকায় কয়েকটি সমাজসেবামুলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুনামের সাথে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
১)    প্রতিষ্ঠাতা ঃ লালদীঘি গার্লস্ একাডেমী- (১৯৯১ইং)
২)    প্রতিষ্ঠাতা ঃ চতরা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪ইং)
৩)    প্রতিষ্ঠাতা ঃ হলদিবাড়ী মডেল স্কুল  (১৯৯৯ইং)
(নিজের দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত)
৪)    প্রতিষ্ঠাতা ঃ চতরা মহিলা কলেজ (১৯৯৯ইং)
৫)     উদ্যোক্তা ঃ চতরা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র (১৯৯৪ইং)
৬)    উদ্যোক্তা ঃ চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র (২০০৫ইং)
৭)    উদ্যোক্তা ঃ হলদীবাড়ী ডাকঘর স্থাপন। সরকারীভাবে এটির ভবন পাকাকরণ (১৯৯৭ইং)
৮)    উদ্যোক্তা ঃ হলদীবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন। (২০০১ইং)
(নিজের দান করা জমিতে স্থাপিত)।

অবসর গ্রহনঃ
২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল চাকুরী থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
সামাজিকভাবে তার ব্যাপক নাম-ডাক থাকলেও এখনও অনেকেই তাকে দেখেননি। ফলে এলাকার সাথে সম্প্রীতি বজায় রাখতেই তিনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চতরাহাট বন্দরের দক্ষিণে দ্বিতল ভবন করে বসবাস করছেন। ইট-পাথরের শহরে একাধারে ৪২টি বছর কাটিয়ে তিনি হাঁফিয়ে উঠেছেন। শহরের কর্মব্যস্ত মানুষগুলো যেন যন্ত্রের কল হয়ে গেছে। তাই তিনি এলাকায় এসে সমাজসেবামুলক কাজ আর খামার বাড়ী করে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। মজার ব্যাপার হলো শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হওয়ায় এই পদ মর্যাদা সম্পন্ন  অনেক কর্মকর্তা আর গ্রামে ফিরে আসতে পারেননি। পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের গ্রামে ফেরা হয়নি। তবে যারা গ্রামের সোঁদা মাটির গন্ধে ভরপুর নারীর টানে ছুটে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে হাতে গোনা দু’একজন কর্মকর্তা বাড়ীতে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে গ্রামে ফিরে আসার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তারা জজ।

হাকিম মন্ডলের বক্তব্য ঃ

জীবনের ৪২টি বছর বাইরে কাটিয়েছি। ৫ জেলায় জেলা জজ হিসেবে কর্মরত থেকে মানুষের নানাবিধ সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সহিংসতা, জটিলতা, হয়রানিসহ জীবনের করুণ কাহিনী জানা এবং শোনার সুযোগ হয়েছে। এখন আর শহুরে জীবন ভাল লাগে না। সমাজ বদলাতে এলাকার জন্য কিছু করতে চাই। চাকুরী জীবনেও সাধ্য মতো মানুষের জন্য করেছি। মানুষের কথা বলেছি। বাকী জীবনটাও জনসেবায় উৎসর্গ করতে চাই। রাজনীতির অভিলাষ আমার নেই। আমার চাওয়ার আর কিছুই নেই, সেবা করার মন-মানসিকতা আছে। আমার চাওয়ার চেয়ে প্রাপ্তি বেশী।
তথ্য সংগ্রহে ঃ
মামুনুর রশিদ মেরাজুল,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 782886383757490548

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item