পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর হত্যার এক বছর পুর্তি

সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: 
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে আলোচিত পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায় দাসাধিকারী হত্যার এক বছর পূর্তি হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি।এক বছরে দুই মামলার বিচার কাজ শুরু হলেও হত্যা মামলার বিচার এখনো শুরু হয়নি। গত এক বছরে ওই এলাকায় স্বস্তি ফিরে এলেও ধর্মীয় সেবক ও পুরোহিতদের সঙ্কা আজ পুরোপুরি কাটেনি। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। অপরদিকে হত্যা মামলার ১০ আসামীর মধ্যে প্রধান ৫ আসামী দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের করতোয়া চীন মৈত্রী সেতু সংলগ্ন সোনাপাতা এলাকার সন্ত গৌড়ীয় মঠের পুরোহিত যঞ্জেশ্বর দাসাধিকারীকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে জঙ্গীরা। এ সময় গোপাল চন্দ্র রায় (৩৫) নামে আরেক ভক্ত গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর পরই শান্তিপ্রিয় জেলা পঞ্চগড়ে শোকের ছায়া নামে। সেই সাথে দল মত নির্বিশেষে সকলে এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। হত্যার দিনই দেবীগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করা হয়। পরে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। হত্যা মামলাটি করেন নিহত যজ্ঞেশ্বরের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ রায়। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন দেবীগঞ্জ থানার এসআই মজিবর রহমান। পুলিশ তিন মামলায় ১০ জনকে আসামী করে চার্জশিট দাখিল করে ২০১৬ সালের ১৬ জুন। এরই মধ্যে পুলিশ অস্ত্রসহ ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত ৪ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
আদালত সুত্রে জানা যায়, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের ২ টি মামলার বিচারকাজ পঞ্চগড় জেলা দায়রা ও জজ আদালতে সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন শুনানী হয় গত বছরের ১৪ নভেম্বর। এই দুই মামলায় আগমী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষগ্রহণ শুরু হবে। তবে হত্যা মামলাটি নিম্ন আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় উচ্চ আদালতে বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়নি।
হত্যাসহ ৩ মামলার চার্জশিটভুক্ত ৪ আসামী রমজান আলী, আলমগীর হোসেন, হারেজ আলী ও খলিলুর রহমান এখন জেলহাজতে রয়েছেন এবং প্রধান ৫ আসামী দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব ওরফে আন্ধীকে মৃত দেখানো হয়েছে। মামলার অপর আসামী রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাধন ঢাকার হোলি আর্টিজেন পুলিশের অপারেশনে নিহত হন, সাদ্দাম হোসেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ডিএমপির কাউন্টার টেরররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটিরে সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হন, নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল রাজশাহীতে ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন এবং শফিউল আলম ওরফে ডন ওরফে সোহান ময়মনসিংহে র‌্যাবের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হন। তবে রানা নামে অপর এক আসামী এখনো পলাতক রয়েছে।
পঞ্চগড়ের মতো শান্তিপ্রিয় জেলায় এই নিশংস হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন পঞ্চগড় হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদের নেতা ও সন্তগৌড়ীয় মঠের সেবক, পুরোহিত ও স্থানীয়রা।
নিহত জজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীর বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ রায় জানান, পুলিশ আমার ভাইয়ের আসামীদের ধরেছে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। তবে এখনো আমরা ভয়ে আছি, কখন কি হয়। আমরা চাই দ্রুত বিচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীপেন চন্দ্র রায় জানান, পুরোহিতরা ধর্মকর্ম করেন। তারা কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত নন। এমন এক নিরিহ মানুষকে হত্যা করেছে জঙ্গীরা। আমরা চাই তাদের এমন শাস্তি হোক যাতে আর কেউ এমন কোন কাজ করার সাহস না পায়।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কল্যাণ কুমার ঘোষ জানান, পুরোহিত হত্যার পর থেকে ওই মঠের পুরেহিত ও সেবকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মঠে ভক্তদের আনাগোনা কমে গেছে। আগে অনেক অনুষ্ঠান হলেও এখন কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে অনেক বার ভাবতে হয়।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ জানান, পুরোহিত হত্যার মামলাটি আমরা অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করতে এবং হত্যার ক্লু বের করতে সক্ষম হয়েছি। এরই মধ্যে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি) এ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান জানান, দেবীগঞ্জে পুরোহিত হত্যার ঘটনায় ৩ টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র ও বিস্ফোরণ আইনে ২ টি মামলায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষগ্রহণ শুরু হবে। হত্যা মামলাটি নিম্ন আদালতের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় উচ্চ আদালতে বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়নি। তিন মামলায় চার্জশিটভূক্ত ৪ জন আসামী জেল হাজতে রয়েছেন এবং প্রধান ৫ জন আসামী বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে আমরা শুনেছি। অপর এক আসামী পলাতক রয়েছেন। আমরা আশা করি আসামীদের দোষী সাব্যস্ত করে প্রমাণ করতে সক্ষম হবো।
উল্লেখ্য, পুরোহিদের বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের কান্তুপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার স্বগীয় চন্দ্র মোহন রায়ের ছেলে। নিজের পৈত্রিক সম্প্রতি বিক্রি করে ১৯৯৮ সালে তিনি দেবীগঞ্জের করতোয়া চীন মৈত্রি সেতুর পশ্চিমপাড়ে সোনাপাতা এলাকায় এই সন্ত গৌড়ীয় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেই ভিক্ষাবৃত্তি করে এই মঠ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 6543320851269078303

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item