শিশু পাচার ও নিখোঁজের ঘটনায় আতংকে পঞ্চগড় সীমান্তে পারের মানুষ

সাইদুজ্জামান রেজা পঞ্চগড়   প্রতিনিধি :
 শিশু পাচার ও নিখোঁজের ঘটনায় চরম আতংকে দিন পার করছে পঞ্চগড় সীমান্তে পারের মানুষ । প্রতিনিয়ত শিশু নিখোঁজ ও পাচারের ঘটনায় এবং প্রচারকারী আটক সহ নতুন নতুন এলকায় শিশু নিখোঁজের খবরে পঞ্চগড় জেলার মানুষের মনে চরম আতংক ও উত্তেজনা দানা বেধেছে । প্রতিদিন সংবাদের পাতায় শিশু ও স্কুলছাত্র ছাত্রী নিখোঁজের সংবাদ যেন জায়গা পেয়েছে ।
ভারতের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর সহ বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন এ সব এলাকা থেকে প্রতিদিন কোন না কোন শিশু নিখোঁজের খবর আসছে । তাই ভারতের এসব এলাকার জন সাধারনের পাশাপাশী বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন জেলা পঞ্চগড়ের মানুষের মনে আতংক বিরাজ করছে ।
সুত্রে, (১) , শিলিগুড়ি, ২১ ফেব্রুয়ারি : পাচারের আগে ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি থেকে দুই নেপালি কিশোরীকে উদ্ধার করলেন SSB জওয়ানরা। ৪১ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের তরফে জানানো হয়েছে, পানিট্যাঙ্কিতে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢোকার পথে গতকাল আটক করা হয় দুই কিশোরীকে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তাদের দুবাইতে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এদেশে আনা হচ্ছিল। সুস্মিতা খাওয়াস নামে নেপালের বাসিন্দা এক মহিলা এই কাজে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।আটক দুই কিশোরীর বয়ান থেকে SSB আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, এখনও পর্যন্ত নেপাল থেকে ১৩ জন কিশোরী ও যুবতিকে দুবাইতে পাচার করা হয়েছে। সুস্মিতার নেতৃত্বে এই কাজ হয়। সুস্মিতার স্বামী দিল্লিতে বসবাস করে। তার নাম হেমু রাই। এই চক্রে আরও বেশ কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ।
সুত্রে, (২) , জলপাইগুড়ি, ২২ ফেব্রুয়ারি : শিশুপাচার চক্রে উঠে এল আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিমলা শিশুগৃহের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীর দেবনগরের আশ্রয়হোম থেকে নিখোঁজ ন’জন আবাসিক। তদন্তে নেমে এমনই একটি তথ্য পেল জেলা প্রশাসন।চন্দনা আশ্রয় হোমে ন’জন মহিলা আবাসিক নেই বলে জানান জেলাশাসক রচনা ভগত। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট বা সমাজকল্যাণ দপ্তরের নজর এড়িয়ে কী ভাবে নিখোঁজ হল ন’জন আবাসিক।এদিকে চন্দনার আশ্রয় হোমে আবাসিকরা নিরাপদ নয় তাই আশ্রয় হোম থেকে আবাসিকদের অন্য হোমে সরিয়ে নিয়ে গেল জেলা প্রশাসন। আজ সকালে আশ্রয় হোম থেকে চারজন কিশোরীকে জলপাইগুড়ি ক্লাব রোডের অনুভব হোমে নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয় হোমে আবাসিকদের মধ্যে দু’জন গর্ভবতী মহিলাও ছিলেন। গতকাল গভীর রাতেই তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ওই দুই গর্ভবতী মহিলাকে।
সুত্রে, (৩) , জলপাইগুড়ি, ২২ ফেব্রুয়ারি : শিশু পাচারকারী সন্দেহে জলপাইগুড়ি শহর থেকে এক মহিলা সহ দু’জনকে আটক করল পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। আটক মহিলার নাম রীনা রায় ও পুরুষ সঙ্গীর নাম প্রশান্ত দাস।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বোর্ড লাগানো একটি গাড়ি কোচবিহারের থেকে ধূপগুড়ি যাচ্ছিল। রাস্তায় মোরঙ্গা নামক একটি এলাকায় গাড়িটি দাঁড়ায় এবং গাড়িতে থাকা যাত্রীরা চা খেতে নামেন। সঙ্গে ছিল চার বছরের এক বাচ্চা। বাচ্চা সহ দু’জনকে দেখে সন্দেহ দানা বাঁধে এলাকাবাসীদের মনে। সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় কারণ সরকারি স্টিকার ছাড়াও গাড়িতে লাগানো ছিল একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার (NGO)স্টিকার।
সুত্রে, (৪) , শিলিগুড়ি, ২৩ ফেব্রুয়ারি : দার্জিলিং জেলায় কোনও অ্যাডপশন এজেন্সি না থাকায় শিলিগুড়ি ও পাহাড়ে থেকেও বেশ কিছু বাচ্চাকে বিভিন্ন সময়ে জলপাইগুড়িতে বিমলা শিশুগৃহে পাঠানো হয়েছিল। এবার তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করল প্রশাসন। আজ শিলিগুড়িতে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, জলপাইগুড়ি হোমে পাঠানো শিশুরা এখন কোথায় আছে সেবিষয়ে ইতিমধ্যে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে শিশুদের পাঠানো একটি তালিকা। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ওই তালিকা জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আজ CID দপ্তরে এসে বেশ কিছু নথি জমা দিলেন জলপাইগুড়ি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য।নিজের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে শিশু পাচার কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন চন্দনা চক্রবর্তী। দার্জিলিং ও আলিপুরে কোনও আডপশন হোম নেই। সেকারণে এই দু’জেলার বহু শিশুকে রাখা হয়েছিল বিমলা শিশুগৃহে। এখন ওই হোম নিয়ে অভিযোগ সামনে আসায় সমস্ত অভিযোগ ও সেখানে রাখা বাচ্চাদের কোথায় রাখা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কতগুলি বাচ্চাকে ওই হোমে রাখা হয়েছিল সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে চাননি জেলাশাসক।
সুত্রে, (৫) , শিলিগুড়ি, ২৩ ফেব্রুয়ারি : জলপাইগুড়িতে শিশু পাচারকাণ্ড নিয়ে রাজ্যে বিস্তর জলঘোলা চলছে। এরই মাঝে দার্জিলিঙের সুখিয়াপোখরিতে একটি বেআইনি হোমের খোঁজ পেল প্রশাসন। ওই হোমটি চিহ্নিত হতেই উধাও হয়ে যায় হোম কর্তৃপক্ষ। হোমে থাকা ৩টি শিশুর খোঁজ মিললেও অন্তত ১৫টি শিশুর খোঁজও মেলেনি। ঘটনা সামনে আসতেই এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে প্রশাসন।
সুত্রে, (৬) , শিলিগুড়ি, ২৩ ফেব্রুয়ারি : শিলিগুড়ির মহানন্দা পাড়ার এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তিন পড়ুয়ার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ ছাত্রদের দু’জন ক্লাস সেভেনের পড়ুয়া ও একজন ক্লাস ফোরের পড়ুয়া। কাল বাড়ি থেকে স্কুলের জন্য বের হলেও স্কুলে ঢোকেনি তারা।
সুত্রে, (৭) , জলপাইগুড়ি, ২৩ ফেব্রুয়ারি : অনাথ শিশুদের যেখানে সেবা হয়, সেখান থেকে শিশু পাচারের গুরুতর অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিমলা শিশুগৃহের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই চক্রে আরও কারা জড়িত রয়েছে, তার তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু, বিমলা শিশুগৃহের বিরুদ্ধে শিশুপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে বেশ কিছুদিন আগেই। জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির নির্দেশে জলপাইগুড়ি থানার থেকে পুলিশ বিমলা শিশুগৃহের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীর অফিসে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল।
সুত্রে, (৮) , জলপাইগুড়ি, ২৩ ফেব্রুয়ারি : চন্দনা চক্রবর্তীর দেবনগরের আশ্রয় হোম সিল করে দিল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। আজ ওই হোমে ১৫ জন মহিলাকে সরিয়ে নিজলয় নামে একটি হোমে স্থানান্তরিত করে হোমটি সিল করে দেওয়া হয়। হোমটি সিল করেন জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের প্রতিনিধি ও স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীরা। এই নিয়ে চন্দনার বিমলা শিশু গৃহ, নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও আশ্রয় হোম মিলিয়ে মোট তিনটি হোমকেই সিল করা হল। একই সঙ্গে রাজ্যের উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশাল ওয়েলফেয়ার দপ্তর চন্দনা চক্রবর্তীর নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারকে সাসপেন্ড করেছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক রচনা ভগত।

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 5550080346759147770

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item