ডিমলায় পাঁচ লাখ টাকার সমপরিমান সরকারী ঔষধ সহ একজন গ্রেফতার

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,জাহাঙ্গীর আলম রেজা-
ডিমলা উপজেলা সরকারী হাসপাতালের পাচার হওয়া ১৩ প্রকারের ২০ হাজার ৩৩০ পিস ক্যাপসুল, সিরাপ ও ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিমলা থানা পুলিশ উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের রূপাহারা গ্রামের মমিনুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই সব সরকারী ঔষধ উদ্ধার এবং মমিনুর রহমানকে(৩৫) গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মমিনুর ওই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে এবং  ডিমলা হাসপাতালের ইপিআই কর্মসুচির ভ্যাকসিন কেন্দ্রে পৌছে দেয়ার জন্য চুক্তিভিত্তিক (পর্টার পদে) কর্মচারী ছিলেন। এ ঘটনার পর ডিমলা হাসপাতালের ষ্টোরকিপার মোবারক আলী গা-ঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে এ ঘটনায় নীলফামারী সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রশিদ ডিমলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাশেদুজ্জামানকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ডিমলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার রায় ও উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক লোকমান হোসেন।

তদন্ত টিম গঠনের পর তদন্ত টিমের আহবায়ক ডাঃ রাশেদুজ্জামান জানান তদন্তের স্বার্থে হাসপাতালের ঔষধ ভান্ডারটি সিলগালা করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের জানান হাসপাতালের ঔষধ ভান্ডারের স্টোর কিপার  মোবারক আলী সোমবার অফিস করলেও মঙ্গলবার সকাল হতে তিনি ছুটি ছাড়াই  হাসপাতালের অফিসে অনুপস্থিত রয়েছে। 

মোবারক আলীর মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি বলেন আমি অফিসের কাজে কুড়িগ্রামে অবস্থান করছি। ডিমলা হাসপাতালের ঔষধ কালোবাজারে বিক্রির  প্রশ্নই উঠে না। আমার স্টোরের মালামাল সব ঠিক আছে।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন অফিসের কাজে নয় কুড়িগ্রামে নিজবাড়িতে এসেছি জমি ক্রয়ের দলিল সম্পাদন করতে। তার ছুটির বিষয়টি তিনি মোবাইলে কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই বছর যাবত মোবারক আলী ডিমলা হাসপাতালের ষ্টোর কিপারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ডিমলা থানার এসআই শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হতে দুইটি বস্তায় ভরে  সরকারি ওষুধ মাইক্রোবাসে করে মমিনুরের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে তার বাড়ি থেকে দুই বস্তা সরকারি ওষুধ উদ্ধার করে মমিনুরকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ যাওয়ার আগেই মাইক্রোবাসটি ঔষধের বস্তা দুইটি নামিয়ে দিয়ে সঠকে পড়ে। মাইক্রোবাসটি চিহিৃত করার চেস্টা চলছে। তিনি জানান গননা শেষে প্রায় ৫ লাখ টাকার সমমূল্যের ১৩ প্রকারের ২০ হাজার ৩৩০পিচ সরকারি ওষুধ পাওয়া যায়। প্রায় ৫ লাখ টাকা সমমূল্যের সরকারী হাসপাতালের এই  ঔষধগুলো হলো ডক্সাসিলিন ক্যাপসুল ১০০ এমজি ১ হাজার ৬০০পিচ, এ্যামক্সসিলিন ক্যাপসুল ১০০ এমজি ১ হাজার ২০ পিচ, এ্যামক্সসিলিন ক্যাপসুল ৫০০ এমজি ১হাজার ৮০০ পিচ,ক্রোট্্রাইমক্সজল ক্যপসুল ১হাজার পিচ, সিপ্রো-ফ্ল-মোক্সাসিন ক্যাপসন ৫০০ এমজি ৯০০ পিচ, রেনিটিডিন ক্যাপসুল ২ হাজার ৯০০ পিচ, মেট্রোনিরাজল ট্যাবলেট ৭ হাজার ৭০০শত পিচ, পেনিসিলিন ক্যাপসুল ৮০০ পিচ, সি-ফুক্সসিলিন ক্যাপসুল ৫০০এমজি ১হাজার ২০পিচ, ফুক্সাসিলিন ক্যাপসুল ৫০০এমজি ৬০০ পিচ, এ্যাজোথ্রো মাইসিন সিরাপ ৪০ পিচ, অমিপ্রাজল ট্যাবলেট ২০এমজি ৭০০ পিচ, ডনোপেরিডন ট্যাবলেট ২৫০ পিচ।
ডিমলা থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা গ্রেফতার হওয়া মমিনুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন  সে গত পাঁচ বছর ধরে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই কর্মসুচির ভ্যাকসিন কেন্দ্রে পৌছে দেয়ার জন্য চুক্তিভিত্তিক (পর্টার পদে) চাকুরী করে আসছেন। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিষ্ট সফিয়ার রহমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই বস্তা সরকারি ওষুধ আমাকে দেয়। তার কথা মত আমি একটি মাইক্রোবাসে করে আমার বাসায় নিয়ে যাই। রাতেই পুলিশ আমার বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই ওষুধসহ আমাকে ধরে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে কথা বললে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিষ্ট সফিয়ার রহমান বলেন এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কারন আমি স্টোরকিপার নই এবং স্টোরের চাবিও আমার কাছে থাকেনা। মমিনুরের সঙ্গে আমার ব্যাক্তিগত দ্বন্দের কারণে সে আমাকে জড়িয়ে নাম বলতে পারে।
জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ডিমলা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডাঃ জেড এ সিদ্দিকী  বলেন, মমিনুর রহমান আমাদের পর্টার  ছিলেন। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ওই প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় সে আর আমাদের পর্টার নয়। তার চুক্তিভিত্তিক  চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
সিভিল সার্জন আব্দুল রশিদ জানান উদ্ধার হওয়া ঔষধ গুলো ডিমলা হাসপাতালের না অন্য কোন হাসপাতালের তা তদন্ত ছাড়া সঠিকভাবে বলা যাবে না। এ জন্য তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে ঔষধ ভান্ডারটি সিলগালা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ডিমলা থানার ওসি  মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা মামলা না করলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে। গ্রেফতার হওয়া মমিনুর  রহমান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতে সোপর্দ্দ করা হবে।#

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1845417059770155005

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item