পীরগঞ্জে ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল,পীরগঞ্জ(রংপুর)থেকেঃ

সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই আবাদী, জনবসতী, স্কুল সংলগ্ন এমন কি গ্রামের ভীতরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর ঘরে বসেই ছাড়পত্র ও ইউপি চেয়ারম্যান ট্রেডলাইসেন্স দেয়ার ফলে উপজেলায় ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আর ওইসব ইটভাটায় দেদারচ্ছে পোড়ানো হচ্ছে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠ। এতে উজার করছে বন। নির্গত কালো ধোয়ায় প্রতিনিয়ত বিষাক্ত হয়ে পড়েছে পরিবেশ। ফলে ফসলি উর্বর আবাদী জমির উপর এর প্রভাব পড়ায় উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। প্রতি বছর এসব ইটভাটায় পোড়ানো হয় প্রায় ৩শ একর আবাদী জমির উপরিভাগের (টপ সয়েল) উর্বর মাটি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১৯৯২সালের প্রজ্ঞাপনে ‘কৃষি-জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দন্ডনীয় অপরাধ’ উলে¬খ থাকা সত্ত্বেও উপজেলায় কোনো ইটভাটা এ নিয়ম-নীতি অনুসরন করেনি।
সূত্র জানায়, ইট পোড়ানো কিংবা ভাটা স্থাপনের পূর্বেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ভূমি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কিংবা বন বিভাগের ছাড়পত্র নিয়ে অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসনে আবেদন করতে হয়। কিন্তু দেখা গেছে জোড়াতালি দিয়ে ইটভাটা মালিকেরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাদের ম্যানেজ করে ছাড়পত্র নিয়েই ইট পেড়ানো কাজ শুরু করে। ইতিপূর্বে গড়ে উঠা ভাটাগুলো হাইব্রিড হফম্যান কিলন, জিকজ্যাক কিলন এবং উন্নত পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করার তাগিদ দেয়া হলেও ভাটাগুলো এ পদ্ধতি অনুসরণ কিংবা রুপান্তরের উদ্দ্যোগ নেয়নি। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে অর্ধ ও দেড় কিলোমিটার জনবসতি এবং বরেণ্য পরিচালিত গভীর নলকুপের ওপর আবাদযোগ্য ও পীরগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের মাঠ ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। একটিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা নাক চেপে লেখাপড়া আর অপরটিতে আবাদী জমির ফসল নষ্ট হওয়ার  আশংকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষককুল। কুমেদপুর ইউনিয়নের বাজে শীবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ঘেষে, চতরা বন্দরের বেশ ক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গ্রামের ভীতরে গোড়ে তোলা হয়েছে একটি ইটভাটা। আর ওইসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে উজার হচ্ছে সামাজিক বনায়নসহ গাছপালা।
এলাকাবাসির অভিযোগে জানা গেছে, স্কুল-কলেজ সংলগ্ন, লোকালয় এবং উর্বর কৃষি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলায় জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। অন্যদিকে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে  পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। কৃষিজমির উর্বরা শক্তি নষ্ট এবং ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসি। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থাণীয় প্রশাসনের কর্তারা ভাটাগুলো পরিদর্শন না করেই দপ্তরে বসেই অনুমতি ও ছাড়পত্র দিয়ে চলছেন। যে কারনে অনুমতি পাওয়ার পর কয়লা দিয়েই ইট পোড়ানোর কথা উলে¬খ থাকলেও বেশীরভাগ ইটভাটায় দেদারচ্ছে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকজন ইটভাটা মালিকের সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান‘ জেলা প্রশাসনের 'এলআর ফান্ড' (লোকাল রিলেশন ফান্ড), জেলা কাস্টমস্ এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট অফিস ঘুষ দিতে হয়। সে কারনে তো একটু এদিক-সেদিক করতে হয়। তাছাড়া তো ভাটা চালানো সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন‘ সরকারের নিয়ম-নীতি না মেনে কেউ ভাটা করলে বা কাঠ পোড়ালে তার দায়-সমিতি নিবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষের সাথে কথা হলে তিনি জানান‘ ইটভাটার অনুমোদন ইউএনও দেয় না। তবে ইটভাটায় কাঠ পাড়ানোর ভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুরের উপ-পরিচালকের সাথে কথা হলে তিনি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 6544216915688256126

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item