ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখী ফুলের উদ্ভাবন হলো বাংলাদেশে




হুমায়ুন কবীর জীবন
ফুল মানুষের সৌন্দর্য প্রেম সহজাত ও সৌন্দর্যের প্রতীক। সৌন্দর্য বিচারে ফুল সারা বিশ্বে বিপুল সমাদৃত।
ফুল ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এর পাপড়ি বিন্যাস, রঙের বৈচিত্র্য ও গন্ধের মাধুর্য মানুষের মনকে ভরে তোলে স্বর্গীয় আনন্দে। তবে শুধু সৌন্দর্য, কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়ানো নয়, এখন ফুল থেকে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সকল বিষয়ে লক্ষ্য রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উদ্ভাবন করা হয়েছে ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখী ফুল। শীত প্রধান দেশে চাষের উপযোগী এই ফুলটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যৌথ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে চাষের উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছে। এর নামকরণ করা হয়েছে ইভিনিং প্রিমরোজ।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হল্যান্ড থেকে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে সূর্যমূখীর বীজ এনে বাংলাদেশে চাষের উপযোগী করতে দেড় বছর গবেষণা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক, বিভাগীয় সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানুর ব্যবস্থাপনায় ড. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মোস্তফা শাকিল, যুবায়ের হুসাইন, সদরুল হাসান চৌধুরী, জহুরুল ইসলাম, জুলকার নাইনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি টিম বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইভিনিং প্রিমরোজ নামের এই সূর্যমুখী ফুল উদ্ভাবনে সক্ষম হয়। ইভিনিং প্রিমরোজ নামের এই ফুলটি কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ব্যবহারিত হবে। যেসব ফুল অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকে অথবা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়না সেসব ফুলকে কাট-ফ্লাওয়ার বলা হয়।

ফুল নিয়ে গবেষণারত শিক্ষার্থীরা জনান, বাংলাদেশে তৈলবীজ ও বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য নানা জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হলেও কাট-ফ্লাওয়ারের কোন জাত নেই। শীত প্রধান কয়েকটি দেশে কাট-ফ্লাওয়ার হিসাবে সূর্যমুখীর কিছু জাত চাষ করা হলেও বাংলাদেশে সূর্যমূখীর কাট-ফ্লাওয়ার জাতীয় কোন অনুমোদিত জাত নেই। আমরা বাংলাদেশে প্রথম কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমূখী উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি। কাট ফ্লাওয়ার হওয়ার কারণে এটি ফুলদানীতে অনেকদিন পর্যন্ত টাটকা থাকে এবং ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরে সুবাস ছড়াতে থাকে। এজন্যই সাধারণ সূর্যমুখীর সাথে এর বিস্তর পার্থক্য। কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ইভিনিং প্রিমরোজ ফুলের চাহিদা বিশ্বজুড়ে।

এছাড়া টিস্যু কালচারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক রোগমুক্ত চারা উৎপাদন এবং ফুল ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে এসব কাজের জন্য প্রচুর অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন বলে জানান ড. জাহাঙ্গীর আলম।

খোঁজ নিয়ে জান গেছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী এবং বর্তমানে যশোরসহ বেশ কিছু জেলাতে ফুলের চাষ হচ্ছে। দেশীয় বিভিন্ন ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশী ফুল এবং অর্কিড (যেমন গ্লাডিওলাস, জারবেরা ইত্যাদি) চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব ফুল চাষে বেশ সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশের ফুল এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রফতানি হচ্ছে। আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। তবে সুযোগ সুবিধার কমতি থাকা সত্ত্বেও ফুলচাষ থেকে রপ্তানি আয় দিন দিন বাড়ছে। সামান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব হবে।
যশোর জেলার ফুল চাষীরা জানান, ফুল প্রেমিকদের সব সময় নতুন নতুন ফুলের প্রতি চাহিদা থাকে। তারা বার বার একই ফুল পছন্দ করে না। তাই প্রতি বছর বিদেশে থেকে আমাদের নতুন নতুন জাতের ফুলের চারা আনতে হয়। এতে খরচও বেশি হয়। তবে ইসলমী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের যে সূর্যমুখী উদ্ভাবন করা হয়েছে তার পযার্প্ত পরিমান চারা উৎপাদন করা প্রয়োজন। যদি সারাদেশে এই ফুলের চারা সরবরাহ করা সম্ভব হয় তবে আমরা কম খরচে বিদেশি ফুল উৎপাদন করতে পারব। আর ক্রেতারাও পারে নতুন নতুন ফুল।

নতুন জাতের সূর্যমুখী উদ্ধাবন সম্পর্কে গবেষনা টিমের প্রধান ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ ইভিনিং প্রিমরোজ মূলত শীত প্রধান দেশের ফুল। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গাছটি অভিযোজন বা জন্মাতে সক্ষম হয়েছি। এরপর ফুল ধরাতেও সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমাদের জন্মানো গাছ এবং ফুল প্রকৃত আকার থেকে সামান্য ছোট। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে আমরা গাছটির ফুলের আকার এবং মান উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’


ইভিনিং প্রিমরোজ নামের নতুন জাতের সূর্যমূখী নিয়ে কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ফুলচাষ থেকে রপ্তানি আয় বাড়াতে বিভিন্ন বিদেশী জাতের ফুলকে এদেশের আবহাওয়ায় চাষের উপযোগী করতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উদ্ভাবিত ইভিনিং প্রিমরোজ ফুলকে যদি এদেশে চাষ উপযোগী করা যায় তাহলে এটা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও স্বল্প-অর্থায়নের মধ্যদিয়েও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ টিস্যুকালচার গবেষণায় বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইভিনিং প্রিমরোজ ছাড়াও জারবেরা, স্ট্র ফ্লাওয়ার, টিউলিপসহ আরও বেশ কিছু ফুলের জাত নিয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

পুরোনো সংবাদ

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি 2767639684903951421

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item