ডোমারে দুই কর্ম দিবসে পেনশন কেইস নিস্পত্তি হচ্ছে, ভোগান্তি কমবে লক্ষ লক্ষ পেনশনারের

আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),ডোমার (নীলফামারী )প্রতিনিধি ঃ

“একজন বৃদ্ধ মানুষ হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে বলছেন,আমার পেনশনের কাজ কতদুর এগোলো,জনৈক কর্মকর্তা বলছেন, আপনার একটা কাগজ নাই, কাল ওটি নিয়ে আসবেন ।পরের দিন কাগজটা নিয়ে  গিয়ে জমা দিলে কর্মকর্তা জানালেন, তিনদিন পরে আসেন ।তিনদিন পরে গিয়ে জানতে চাইলেন ।স্যার আমার কাজটা হয়েছে ।কর্মকর্তা বললেন ,পাশের টেবিলে যান ।ওখানে গিয়ে দেখলেন ,একই ঘটনা ।এভাবেই এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরতে ঘুরতে বৃদ্ধ একদিন পেনশন পাওয়ার আগেই মারা গেলেন ।এ ঘটনা প্রায় খবরের কাগজে দেখা যায় । সরকার কর্মকর্তা/কর্মচারীরা পেনশনের যাওয়ার আগে এরকম পরিস্থিতি নিয়ে আতংকে থাকেন ।
এ রকম ঘটনার অবসান হতে যাচ্ছে । নীলফামারীর ডোমার উপজেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয় দুই কর্মদিবসে দিচ্ছেন পেনশন । এ প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে নাগরিক সমস্যা সমাধানে বিভাগীয় ইনোভেশন সার্কেলে শ্রেষ্ট কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন ডোমার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল খালেক ।এতে লক্ষ লক্ষ সরকারী কর্মকর্তা /কর্মচারীরা পেনশনের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন ।
 জানা গেছে,২০১৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রজেক্টের আওতায়
বিগত ০৮/০৬/২০১৪ ইং সাল হতে ১২/০৬/২০১৪ ইং তারিখে রংপুর এ্যাসোডে অনুষ্টিত ০৬টি দপ্তরের মোট ৩৬ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষন নেন ।প্রশিক্ষনে ৬টি বিভাগের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা হয় ।তারা নাগরিক সমস্যার সমাধান উদ্বাবন করেন।
ডোমার হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের “পেনশন কেইস নিস্পত্তি ” প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয় ।সিজিএ র্কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ১০ কর্মদিবসের পরিবর্তে ৫ কর্মদিবসে পেনশন কেইস নিস্পত্তি করার সিন্ধার্ন্ত গ্রহীত হয় ।গত জুলাই/২০১৪ ইং তারিখ হতে ২০১৬ ইং সালের ডিসেম্বর মাস পযর্ন্ত মোট ৮০ টি পেনশন  কেস ভোগান্তি ছাড়াই নিস্পত্তি করা হয় । পেনশনে গেলে যে সমস্ত ফরম প্রয়োজন তা ডিজিটাল ব্যানারে  লিখে ঝুলাইয়া দেওয়া হয় ।কোন পেনশনার কাছে সরকারের কোন পাওনা থাকলে  সরকারী পাওনা  ,অডিট আপত্তি ,বিভাগীয় মামলা থাকিলে যে যে প্রক্রিয়ায় পেনশন কেইসগুলি নিস্পত্তি করা হয় তাও ডিজিটাল ব্যানারে  লিখে দেওয়ালে ঝুলাইয়া দেওয়া হয় ।পেনশনাদের বসার জন্য সোফার ব্যবস্থাসহ পানি পান করার জন্য  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয় । পেনশন কেইস প্রাপ্তীর পর   যাহাতে সংশ্লিষ্ট পেনশনারদের জানাইয়া দেওয়া যায় সে জন্য  পেনশন আবেদন ফরমে মোবাইল নম্বর উল্লেখ করার জন্য স্থানীয় সকল অফিসকে চিঠি দেওয়া হয় ।মাসিক সমন্বয় সভা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা  অফিসের প্রধানশিক্ষকদের সমন্বয়ে  মাসিকসভায় পেনশন সহজিকরন নিয়ে আলোচনা করা হয় । এ ছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি লাঘবে প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সমাপ্ত করা হচ্ছে । সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় বিচার বিশ্লেষন করে  গত ২০১৬ সালের জানুযারী মাসের নীলফামারীর জেলা প্রশাসক কর্তৃক আয়োজিত ডিজিটাল মেলায় ডোমার উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা আব্দুল খালেককে
জেলার শ্রেষ্ট কর্মকর্তা হিসাবে পুরস্কৃত করেন নীলফামারী জেলাপ্রশাসক জাকির হোসেন ।২০১৭ সালের ৭ই জানুয়ারীতে রংপুর বিভাগীয় ইনোভেশন সার্কেল (দিনাজপুর পর্ব)তে  শ্রেষ্ট স্থানীয় উদ্ভাবনী পাইরট উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে  নাগরিক সমস্যা সমাধান ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জণ করেন ডোমার উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল খালেক ।
এ ব্যাপারে ডোমার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল খালেক জানান,আমরা যখন প্রথম ইএলপিসি(প্রত্যাশিত শেষ বেতন পত্র) ইস্যুর পূর্বেই একজন সরকারী কর্মকর্তা /কর্মচারীর যাবতীয় তথ্যাদি যাচাই করে ইএলপিসি ইস্যু করা হয় । এবং চাকুরী জীবনে কোন সরকারী পাওনা থাকলে এবং ভুল বেতন নিধারন করা থাকলে তা সংশোধন করে ইএলপিসি ইস্যু করা হয় ।ফলে পেনশন মুঞ্জুরীর পর খুব একটা আপত্তি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না । পেনশন গমনের ১৩ মাস পূর্বে  একই আদেশে পি,আর,এল ও পেনশন মুঞ্জরী প্রদান,কাগজপত্র ঘাটতির জন্য সংশ্লিষ্ট ডিডিওকে দায়ী থাকার বিধান থাকার প্রস্তাব করেছি ।প্রস্তাবনা মোতাবেক পরিপত্র জারী হলে পেনশনারগন প্রাপ্যতার তারিখেই পেনশন প্রাপ্ত হবেন ।এবং পেনশনারগন প্রাপ্য মর্যাদা ফিওে পাবেন ।
সম্প্রতি পেনশনে যাওয়া ডোমার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ,ডোমার উপজেলা শাখার কমান্ডার নুরন নবী জানান,আমি আগে অনেক শুনেছি,দেখিছিও আমার সহকর্মীরা পেনশনের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হত ।অনেকে পেনশন না পেয়ে মারাও গেছেন ।মাঝে মাঝে মনে হয়,এরকম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের জন্য আমরা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, পাঁচ/ছয় বছর থেকে আমার মধ্যে ভয় কাজ করছিল,আমাকেও এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ।কি›তু  মাত্র ২৪ ঘন্টায় পেনশন পেয়ে আমার মনে হচ্ছে,আমরা দেশ স্বাধীন করে ভুল করিনি ।
সদ্য পেনশনে যাওয়া প্রধান শিক্ষক অমিতা রানী রায় জানান, পেনশনে যাওয়ার অনেকদিন আগে থেকে আমার মধ্যে ভয় কাজ করছিল ,পেনশনে গেলে মাসের পর মাস এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ঘুরতে হয় ।গ্রাচুটির বড় অংশই ঘুষের জন্য ব্যয় করতে হয় ।কিন্ত আমার বেলা তা হয়নি । আমি একদিনের মধ্যেই পেনশন পেয়ে আমাকে খুব ভালো লাগছে ।
এ ব্যাপারে ডোমার উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা বলেন, তার এ  স্বল্প সময়ে পেনশন কেইস নিস্পত্তির প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের ফলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ কর্মকর্তা /কর্মচারী হয়রানী থেকে রক্ষা পাবেন । এতে করে দুনীতি ও অনিয়ম কমবে ।এবং সরকারী স্বার্থ সংরক্ষিত হবে ।
তাছাড়া তিনি একজন দক্ষ কর্মকর্তাই নন,একজন সৎ কর্মকর্তাও ।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5213457503644861998

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item