অবশেষে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গেলেন সৈয়দপুরে বাল্যবিয়ের শিকার নুরুন নাহার আক্তার

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

অবশেষে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গেলেন সৈয়দপুরে বাল্য বিয়ের শিকার নুরুন নাহার আক্তার। গতকাল (সোমবার) দুুপুরে  উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের চিকলী নিজবাড়ী গুচ্ছগ্রামে (আবাসন প্রকল্প) কমিউনিটি সেন্টারে তাকে তাঁর বাবা নবিউল ইসলাম ও মা জয়মেনা বেগমের হাতে তুলে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য,সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের চিকলী নিজবাড়ি আলাউদ্দিনপাড়া গ্রামের নবিউল ইসলাম ওরফে কালা ও জয়মেনা বেগম দম্পতির মেয়ে নুরুন নাহার আক্তার (১২)। সে একই ইউনিয়নের আইসঢাল খিয়ারপাড়া আলিম এন্ড ভোকেশনাল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী। গত ২৪ নভেম্বর তাঁর অমতে সৈয়দপুরের পাশের রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বনিজপাড়া গ্রামের এক কাঠমিস্ত্রির সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক করে তাঁর বাবা-মা। বাল্যবিয়ের বিষয়টি বুঝতে পেরে সে ঘটনাটি তাঁর মাদ্রাসার সুপারকে জানায়। পরবর্তীতে মাদ্রাসা সুপার আফজাল বিন নাজির ঘটনাটি সৈয়দপুর ইউএনওকে অবগত করেন। উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় নুরুন্নাহার আক্তারের বাল্যবিয়ে সাময়িক বন্ধ হয়। কিন্তু পরে গভীর রাতে পাশের উপজেলায় গিয়ে গিয়ে ওই মাদরাসা ছাত্রীকে জোরপূর্বক বাল্যবিয়ে দেন তাঁর বাবা। পর দিন ওই মাদ্রাসা ছাত্রী কৌশলে মাদ্রাসায় এসে তাঁর বাল্যবিয়ের ঘটনাটি সুপারসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীদের জানান। পরবর্তীতে মাদরাসার শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় সে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এসে বাল্য বিয়ের বিষয়ে প্রতিকার চায় এবং বাবা বিরুদ্ধে লিখিত ইউএনও বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনার পর মাদ্রাসা ছাত্রী নুরুন নাহার আক্তারের নিরাপত্তার কারণে আশ্রয় হয় মাদরাসা সুপার আফজাল বিন নাজিরের বাড়িতে।
এদিকে, গত ৩০ নভেম্বর সৈয়দপুর থানা পুলিশ নাবালিকা মেয়েকে বাল্য বিয়ের দেয়ার অভিযোগে নবিউল ইসলাম কালাকে কামারপুকুর চিকলীবাজার থেকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে তাকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এরপর তিনি ১৫ দিনে সাজা শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তিনি মাদরাসা সুপারের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা তাঁর মেয়েকে ফিরে পেতে ইউএনও বরাবরে আবেদন করেন। তাঁর ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে নুরুন নভহার আক্তারকে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।
 এ সময়  সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাওয়াদুল হক সরকার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু ছালেহ মো. মুসা জঙ্গী,নীলফামারী জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান রাবেয়া আলীম, উপজেলার কামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম লোকমান,আইসঢাল খিয়ারপাড়া আলিম ও ভোকেশনাল মাদ্রাসার সুপার আফজাল বিন নাজির, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
 এ সময় মাদ্রাসার ছাত্রী নুরুন নাহার আক্তারের লেখাপড়ার জন্য সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
 এ ব্যাপারে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু ছলেহ মো. মুসা জঙ্গীর সঙ্গে। তিনি বলেন,বর্তমান সমাজে বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিপরিণত। এটি বন্ধে আইনও রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারীভাবে বাল্যবিয়ের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আর মাদরাসা ছাত্রী নুরুন নাহার আক্তার তাঁর বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5738541387182336701

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item