পীরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে রাজাকার বেশী! বিচারের আওতায় আনা হয়নি!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ঃ

পীরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধার চাইতে ৩ গুন বেশী রাজাকার রয়েছে। ৭১ সালে তাদের দোর্দন্ড প্রতাপ ছিল। তারপরও কোন রাজাকারকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। পাকিস্থানী ও তাদের দোসররা সে সময় বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ, গুলি করে মানুষও হত্যা করেছিল। রাজাকারকে ইউপি আ’লীগের সভাপতি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির আলোকে এএসএম শামছুল আরেফিন কর্তৃক সম্পাদিত রাজাকারদের তালিকা বৃহত্তর রংপুর জেলা, পৃষ্ঠা নং ২৫২-২৬০ পর্যন্ত পৃষ্ঠায় উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের ৫৬ টি গ্রামে তালিকাভুক্ত ১’শ ৫০ জন রাজাকার রয়েছে। অপরদিকে এ উপজেলায় বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চতরাহাটে দিনের বেলায় পাকিস্থানী বিমান থেকে গুলি বর্ষন করলে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী শামসুন্নাহার খাতুন শহীদ হয়। ওই সময় চতরা ইউনিয়নের শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন নজের হোসেন খান। তার ভয়ে সন্ধ্যার পরই চতরাহাট জনশুন্য হয়ে যেত বলে জানা যায়। কিছুদিন আগে তিনি মারা গেছেন। এদিকে উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ী হাটে ডাকবাংলোয় রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন চৈত্রকালে ইউনিয়নের জলাইডাঙ্গা গ্রামের আবু জাফর মোঃ জাকারিয়া (রাজাকারে ভর্তি ১৯/১০/১৯৭১) এবং সেকেন্ড কমান্ডার ছিলেন শাল্টি গ্রামের মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন (রাজাকারে ভর্তি ১২/১১/১৯৭১)। ৭১ এ উল্লেখিত দু’জন রাজাকারসহ অনেকে রাজাকার ডাকবাংলোটি থেকে কয়েকমাস যুদ্ধ করে। বর্তমানে রাজাকার মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন জীবিত রয়েছে।
সুত্র জানায়, পাকিস্থানী বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ জুন পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুরের মিলনপুর ইউনিয়নের চৌধুরী গোপালপুরে হিন্দু পাড়ায় প্রিয় বাবুর বাড়ীতে হামলা চালিয়ে অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় রাজাকার আবু জাফর মোঃ জাকারিয়া, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন, মিঠাপুকুরের তরফসাদী গ্রামের মাওলানা মজিবর রহমান, তরফসাদী মকিমপুরের আবু ফকিরের নেতৃত্বে পাকিস্থানী বাহিনী হামলা করে। হামলা থেকে রক্ষা পেতে প্রানভয়ে প্রিয় বাবুর স্ত্রী শান্তি রানী সরকার বাড়ীর পাশেই করতোয়া নদী দিয়ে নৌকায় করে পালিয়ে যাবার সময় পাকিস্থানী বাহিনী তাকে বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর ওই রাজাকারদের সহযোগিতায় ওই গ্রামের ভবতা রিনী, নীলিমা রানী সরকার, বেবী রানী সরকার ও ভুল্লি রানী সরকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে চৌধুরী গোপালপুরে করতোয়া নদীতে নির্মিত সেতু নিহত ওই ৫ নারীর স্মরণে নামকরণ করা হয়। এ ব্যাপারে ইউনিয়নটির আ’লীগ নেতা শাহ আলম বলেন, জাকারিয়া ও তোফাজ্জল রাজাকার খুবই প্রভাবশালী ছিল। তাদের ভয়াবহ অত্যাচারে সে সময় মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দুরাও বাড়ীঘর ছেড়ে পালিয়েছিল।
রাজাকারের তালিকায় দেখা যায়, উপজেলার ৫৬টি গ্রামে রাজাকার রয়েছে। এরমধ্যে বড়আমবাড়ী গ্রামে ১৭ জন, সাল্টিতে ৯ জন, ডুবরাজপুরে (দুবরাজপুর) ৮ জন, জলাইডাঙ্গা, ঢোড়াকান্দর ও হাসানপুরে ৭ জন করে, বাজিতপুরে ৬ জন, কাশিমপুরে ৫ জন, বেহবতপুরে ৪জন রাজাকার রয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি গ্রামে ১ থেকে ৩ জন রাজাকার রয়েছে। এতো রাজাকার থাকলেও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা কখনোই তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলেননি। এমনকি এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অভিযোগও করেননি। অপরদিকে রাজাকার তালিকার ৫৩ নম্বর রাজাকার মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া গ্রামের আসগর আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ ওরফে হারু রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী রাজাসহ (গেজেট নং- ৩৭২, মুক্তিবার্তা নং- ০৩১৩০৬০০২০) কয়েকজন উপজেলার খাশালপীরহাটে হাতেনাতে আটক করে বেঁধে মারধর করে। পরবর্তীতে সেই হারু রাজাকারই মদনখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী রাজা বলেন, যেদিন আমি আ’লীগের ইউনিয়ন নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হই। সেই হারু রাজাকারও উপজেলা আ’লীগের নেতাদের মদদপুষ্ট হয়ে আমার পদে প্রার্থী হয় এবং বিজয়ীও হয়। এ লজ্জা রাখি কোথায়? উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ঠাই, এই বাংলায় নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ পাকিস্থানীর দোসরদের বিচারের আওতায় আনা। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘আগুন ঝড়া দ্রোহকাল; আমার কিছু কথা’ বইয়ের লেখক ও পীরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার আলহাজ্ব আব্দুল মমিন আকন্দ বলেন, আমি কোন রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। আমরা তো একই উপজেলার বাসিন্দা। তবে দু’একজন রাজাকারের দাপট ছিল।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3347550637841387796

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item