পীরগঞ্জে রাজাকারের ছেলের দাপট! পুরুষ শুন্য হয়েছে গ্রাম

মামুনুররশিদ মেরাজুল-
 
পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউপির চেয়ারম্যানের কারণে রাজাকারের ছেলে আব্দুল মোত্তালেব লুলু’র দাপটে অসহায় পড়েছে এলাকাবাসী। ওই চেয়ারম্যান এবং রাজাকারের ছেলে পুলিশের সাথে আঁতাত করে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে করা পৃথক দু’টি মামলায় ইউনিয়নটির প্রকৃত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীকে ফাঁসিয়ে দেয়ায় অনেকেই গ্রামছাড়া হয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে চেয়ারম্যান ও লুলুর বিরুদ্ধে অন্যায়-অত্যাচার, অপকর্ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চৈত্রকোল ইউপি’র চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই ইউপি নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নে উঠেপড়ে লাগে। এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিও দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। তার ওই অপকর্মের সহযোগী হিসেবে ৭১ এর তালিকাভুক্ত রাজাকার বাহিনীর নেতা মাওলানা তোফাজ্জল হোসেনের (এখনো জীবিত) ছেলে এবং পালগড় দাখিল মাদরাসার সুপার আ’লীগ নেতা আব্দুল মোত্তালেব লুলুকে নিয়ে ওইসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই চৈত্রকোল ইউনিয়নের শাল্টি গ্রামের কয়েক’শ লোকের কাছে মামলায় ফাঁসানোর নামে হাজার হাজার টাকা নিয়েছে বলে কয়েকটি সুত্র দাবী করেছে। চেয়ারম্যানের মদদে লুলুর দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। চলতি বছরের ১২ জুলাই পীরগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চৈত্রকোল ইউনিয়নের ২৫ জনকে এজাহারনামীয় ও ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা হওয়ায় উৎকোচ বানিজ্যের পোয়া বারো হয় চেয়ারম্যান সবুজ ও রাজাকার পুত্র লুলু মিয়ার। ওই মামলায় আসামী হিসেবে আ’লীগ, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীও রয়েছে। মামলাটির  ২নং, ৬নং, ৯নং ও ২৫ নং আসামী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। অপরদিকে ৩নং, ৫নং, ৭নং, ৮নং, ১৪নং এবং ২৩নং আসামী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী। মামলাটিতে ৪নং ও ১১নং আসামী বিএনপির কর্মী। এছাড়া অন্যান্যরা জামায়াত কর্মী বলে জানা গেছে। ওই মামলার ৩/৪ জন আসামী জামিনে রয়েছে। জামিন না হওয়ার সুযোগে চেয়ারম্যানের মদদপুষ্ট রাজাকার পুত্র লুলু মিয়া নিরপরাধ গ্রামবাসীকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান। ওই এলাকার আ’লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলদার হোসেন ও শাহআলম মিয়া বলেন, চেয়ারম্যানের মামলার বাণিজ্য, অপকর্ম, দুর্নীতির কারণে আওয়ামীলীগের প্রতি এলাকাবাসী দিনদিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এতে সাধারন মানুষের মাঝে আওয়ামীলীগের প্রতি সমর্থন কমে যাচ্ছে। অনেক নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর কারণে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান সবুজ তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের দমন-পীড়নে উঠে পড়ে লেগেছে।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, মামলায় না ফাঁসানোর শর্তে শাল্টি পশ্চিমপাড়ার মহাসেন আলীর ছেলে জামায়াত নেতা মকবুল হোসেনের কাছে প্রায় ১ লাখ টাকা চেয়ারম্যান সবুজ এবং লুলু মিয়া নিয়েছে। শাল্টি শিবারপাড়ার সেকেন্দার আলীর ছেলে জামায়াত নেতা রোস্তম আলী, শাল্টি শাবুল্যাপাড়ার ছমির উদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম জামায়াত সংগঠনের নামে ৪৮ শতক জমি দলিল করে দেয়া, বিদেশ থেকে আসা শাল্টি পশ্চিমপাড়ার মহাসেন আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম ও শাল্টি গ্রামের রাজাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শিবির নেতা শিব্বির মিয়ার কাছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা থেকে রক্ষা করা হয়েছে। অপরদিকে চেয়ারম্যান এবং রাজাকার পুত্র লুলু মিয়ার ইঙ্গিতে ওই মামলার প্রধান আসামী গোলাম রসুল এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে চলাফেরা করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। রাজাকারের ছেলে আব্দুল মোত্তালেব লুলু বলেন, আমি ইউনিয়ন আ’লীগের ধর্মীয় সম্পাদক। বিগত ইউপি নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান সবুজের পক্ষে ওয়ার্ক করেছি। চেয়ারম্যান সবুজ জানান, আমি ইউনিয়নকে রাজাকারমুক্ত করতে গিয়ে অনেক আ’লীগ নেতাকর্মী আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে। আমি আমার রাজনৈতিক নীতি আদর্শ নিয়ে চলছি। এতে কেউ ক্ষুব্ধ হলে আমার কিছুই করার নেই। তিনি লুলুর ব্যাপারে বলেন, আগে থেকেই তিনি আ’লীগের রাজনীতি করছেন। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন তালিকাভুক্ত রাজাকার ছিল, এটা সবাই জানে।
উল্লেখ্য, উপজেলার শাল্টি গ্রামের হেসাব উদ্দিনের ছেলে মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন ১২.১১.৭১ ইং তালিকাভুক্ত হয়।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 9023057227089913332

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item