১৪ ডিসেম্বর নীলফামারীর রামগঞ্জ ট্র্যাজেডির তিন বছর

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১৩ ডিসেম্বর॥
দুই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে আজও কেঁদে চলেছেন সন্তানহারা মা মেরিনা বেগম। তার আহাজারী যারা তার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের তিনি বিচারে ফাঁসি দেখে যেতে চান।
আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর রামগঞ্জ ট্রাজেডির তৃতীয় বছর। তিন বছর আগের এই দিনে নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ হাটে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে হত্যার উদ্যেশে গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়েছিল। সেই হামলায় নুর ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ৪ নেতা ও এক পথচারী সহ ৫ জন হত্যার শিকার হন ।
সেদিনের হত্যা কান্ডের শিকার যারা হন তারা হলেন টুপামারী ইউনিয়নের কৃষকলীগের সভাপতি খোরশেদ চৌধুরী, দুই ভাই ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক ফরহাদ শাহ ও ছাত্রলীগ কর্মী মুরাদ শাহ ও আওয়ামী লীগ কর্মী লেবু মিয়া । এদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং হাত পায়ের রগ কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ সময় পথচারী বাঁশ বিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিকও রক্ষা পায়নি হামলাকারীদের হাত থেকে। তিনিও হত্যার শিকার হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে হাত বা পা,চোখ অচল হয়ে পক্সগুত্ব বরন করে বেঁচে আছেন ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল আমিন স্বপন,রুহুল আমিন শিপন, যুবলীগ নেতা মানিক হোসেন, ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর ওয়াসী,জ্যোতিস চন্দ্র রায়,বাদশা সহ অনেকে। অপর দিকে গুরুত্ব আহত যুবলীগ নেতা মাহাবুল  দুই বছর দুই মাস আগে মৃত্যু বরন করেন।
রামগঞ্জহাট এলাকায় জামায়াত শিবিরের ওই হামলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ১৪১ রাউন্ড সট গান,৩৭ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছিল বলে পুলিশের খাতায় লিপিবন্ধ করা হয় ।
এ ঘটনায় তৎ সময়ের নীলফামারী থানার ওসি (তদন্ত ) বাবুল আকতার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।  আদালত সুত্রে জানা যায় ওই ঘটনায় পুলিশ ২০১৫ সালের ১১ মার্চ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী প্রভাষক খায়রুল আনাম, জেলা জামায়াতের সাবেক সহকারি সেক্রেটারী অধ্যাপক আবু হেলাল, টুপামারী জামায়াতের নেতা মালেক কাজী, আ,ন,ম মতিউর রহমান,বিএনপি নেতা খালেক মহাজন সহ ২১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এদিকে জানা যায় নিহত ওই ৫ পরিবারের মাঝে ইতো মধ্যে বর্তমান সরকারের পক্ষে ৪৫ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করা হয়।

 রামগঞ্জ ট্রাজেডির তিন বছর স্মরনে আগামীকাল (১৪ ডিসেম্বর) টুপামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তার সকল অঙ্গসংগঠন রামগঞ্জ হাট এলাকায় বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহন করেছে। কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে কোরআন খানী, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া, মৌন মিছিল ও স্মরন সভা। এ সব কর্মসুচীতে অংশ নেবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি সহ জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও  সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এ ছাড়া হত্যার শিকার ৫ পরিবারের পক্ষেও নিজ নিজ বাসভবনে তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হবে।

সে দিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে  সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি বলেন সেদিন যে ভাবে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় তা ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে হারমানায়। আমাকে ভালবেসে যারা পরাজিত শক্তির হাতে আমার জীবন বাঁচিয়ে নিজের জীবন বির্সজন দিয়েছেন তাদের ঋন আমি জীবনেও পরিশোধ করতে পারবোনা।

আসাদুজ্জামান নুর জানান মানববতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল¬ার ফাঁসীর রায় কার্যকর হওয়ার পর সেই রাতে (১২ ডিসেম্বর/২০১৩) জামায়াত শিবির নীলফামারী জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রামে তান্ডবলীলা চালায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সব ঘটনা সরেজমিনে দেখতে তিনি ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে পলাশবাড়ির তরুনীবাড়ি,হরতকীতলা লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের কাছারীবাজার শীশাতলী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যাম চরন রায়ের বাড়ি পরিদর্শন ও পথসভা শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার দিয়ে নীলফামারী শহরে ফিরছিলাম। এ সময় জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ হাট হয়ে আসার পথে দেখা যায় রামগঞ্জ ব্রীজের কাছে রাস্তা কাটা হয়েছে। ফলে তার বহনকারী মাইক্রোবাসটি সেখানে আটকা পড়ে। এ সময় পেছন দিক থেকে জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতা কর্মীরা তার গাড়ী লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এরপর সামনে দিক থেকে জামায়াত শিবিরের আরেকটি দল এগিয়ে আসতে থাকে।এ সময় হামলাকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪০ টি মটরসাইকেল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তাদের হাতে নিহত হয় আওয়ামী লীগের ৪ নেতা কর্মী সহ ৫ জন।
 নিহত মুরাদ ও ফরহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ওই বাড়িতে চলছে তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর প্রস্তুতি। এই দুই ভাইয়ের মা মেরিনা বেগম দুই ছেলের শোকে এখনও কাতর। দুই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে চলছে তার আহাজারী।
নুরের ওপর হামলার নেপথ্যের কারন হিসাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন স¤পাদক এ্যাডঃ মমতাজুল হক মনে করেন নুর ভাই একজন বরেন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। দেশ বিদেশে তার প্রচুর খ্যাতি সু-নাম। মৌলবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসাবে আসাদুজ্জামান নুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
২০০১ সাল থেকে তিনি নীলফামারী সদর আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসাবে বিজয়ী হয়ে আসছেন। প্রতিটি নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দি ছিল জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। নুর ভাই অসহায় মানুষজনের বিপদে আপদে সহযোগীতার হাত অনেক লম্বা। প্রতিমাসে বিনা মুল্যে স্বাস্থ্য সেবার ক্যা¤প চালাতেন জেলা সদরের ১৫টি ইউনিয়নে। রাজধানীর নামীদামী চিকিৎসকরা আসাদুজ্জামান নুরের ডাকে সাড়া দিয়ে নীলফামারী এসে বিনামূল্যে এই ক্যা¤প পরিচালনা করে দুস্থ্য অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র সহ বিনামুল্যে ঔষধ সরবরাহ করেন। এর পাশাপাশি যাদের থাকার ঘর নেই তাদের ঘর বানিয়ে দিচ্ছিন। অসংখ্য বেকার যুবক যুবতী প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে প্রদান করেছেন এবং করছেন রিক্সা,ভ্যান,হুইলচেয়ার । এ ছাড়া প্রতি বছর শীতবস্ত্র বিতরন অব্যাহত রেখেছেন। এমন একজন জনপ্রিয় ব্যাক্তি নুরকে পথের কাটা হিসাবে সরিয়ে দিতে এবং আসনটি দখলে নিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নীলফামারীর রামগঞ্জহাট এলাকায় তার গাড়ীর বহরে হামলা চালায় ১৮ দলের বিএনপি ও জামায়াত শিবির নেতা কর্মীরা।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন স¤পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুজার রহমান বলেন নুর ভাই আমাদের তথা নীলফামারী সহ গোটা দেশ এমন কি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিস্তৃত এক সু-নাম ধন্য ব্যাক্তি। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ওরা। আসাদুজ্জামান নুর কে পথের কাটা মনে করেই হত্যার উদ্যেশে এই হামলা চালানো হয়। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে প্রাণ হারায় নীলফামারীর চার আওয়ামী লীগ নেতা সহ ৫জন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, জেলা সদরের পলাশবাড়ী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, মালামাল লুট এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী জামায়াত-শিবির চক্র। এ কারণে নুর ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালায় চক্রটি। 

মামলায় তিন আসামীর লাশ উদ্ধার
মামলার তিন আসামীর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পুলিশের দায়েরকরা মামলার প্রধান আসামী গোলাম রব্বানীর লাশ ২০১৪ বছরের ১৮ জানুয়ারী সকালে জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের নীলফামারী-ডোমার সড়কের গোচামারী ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ২০ জানুয়ারী সৈয়দপুর বাইপাস সড়কের ধার থেকে টুপামারী ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম আতিকের লাশ উদ্ধার হয়। এরপর শিবির কর্মী মহিদুল ইসলামের (২৬) লাশ উদ্ধার হয় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা থেকে। ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই লাশ উদ্ধার করে দাফন সম্পন্ন হয়। সে লাশের ছবি দেখে ওই বছরের ৪ মার্চ মহিদুলকে সনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। মহিদুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের (ফার্সি) মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র এবং সে সময়ে মামলার অজ্ঞাত আসামী ছিলেন।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2545320864577777952

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item