ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

ডেস্কঃ
ক্রিকেটের জনক হিসেবে খ্যাত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ জয়ের ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। এর মধ্যদিয়ে ২ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে আজ রবিবার মিরপুরে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নতুন উচ্চতায় দেশকে নিয়ে গেলো টাইগাররা। ঐতিহাসিক এ জয়টা আসলো ১০৮ রানের বড় ব্যাবধানে। আর এ জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় ইনিংসে এ ২ বোলারই নিয়েছেন ইংলিশদের সবকটি উইকেট। মিরাজ নিয়েছেন ৬টি উইকেট আর সাকিব নিয়েছেন ৪টি। ফলে সিরিজ শেষ হলো ১-১ সময়তায়। এর আগে ২০১০ সালে ইংলিশরা সবশেষ ২০৯ রান চেজ করে জয় পেয়েছিল, সেটিও আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকার মাটিতে। এর বেশি রান চেজ করে কখনোই জিততে পারেনি ইংলিশরা। এবার টাইগাররা ছুঁড়ে দেয় ২৭৩ রান। তাতে ১০০ রানের ওপেনিং জুটি গড়লেও ১৬৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশরা।
আজ রবিবার বাংলাদেশ ইংলিশদের ২৭২ রানের টার্গেট দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৬৪ রানেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৯ রান আসে অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের ব্যাট থেকে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ রান আসে বনে ড্যাকেটের ব্যাট থেকে। সব থেকে মজার বিষয় হলো শেষ ৫ ব্যাটসম্যান ২ অংকের কোটায়ই পৌঁছতে পারেনি। শেষ ৫ উইকেটের সর্বোচ্চ ৯ রান আসে ক্রিস ওকসের ব্যাট থেকে। আর বাকিরা সবাই শূন্য রানে ফিরে গেছেন।
২৭৩ রানের টার্গেটে নামে ইংল্যান্ড। শুরুটাও দারুন করেন ২ ওপেনার। গড়েন ১০০ রানের জুটি। অবশেষে চা-বিরতির পর তৃতীয় সেশনের প্রথম বলেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। উইকেটে থিতু হওয়া ওপেনার বেন ডাকেটকে সরাসরি বোল্ড করে ফেরান ডানহাতি স্পিনার মিরাজ। ৬৪ বলে ৭টি ৪ ও এক ছক্কায় ৫৬ রান করেন ডাকেট। পরের ওভারেই জো রুটকে (১) এলবির ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ১০০ রানে প্রথম উইকেটের পতন হওয়ার পর দলীয় ১০৫ রানের মাথায় ইংলিশদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে।
দলীয় ১২৪ রানের মাথায় মেহেদির দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে বোকাবনে যান গ্যারি ব্যালেন্স। তামিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৫ রান। একই ওভারে মিরাজ ফিরিয়ে দেন নতুন ব্যাটসম্যান মঈন আলীকে। এলবির ফাঁদে পড়ার আগে মঈনের ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। দলীয় ১২৪ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটের পতন হয় সফরকারীদের। পরের ওভারে শুভাগত হোমের বলে এলবির ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা ছিল কুকের। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তাতে পরিবর্তন হয়নি।
মিরাজের চতুর্থ শিকারে ফেরেন এলিস্টার কুক। ইনিংসের ৩৩তম ওভারে মিরাজের বলে শর্টে দাঁড়ানো মুমিনুলের তালুবন্দি হন ইংলিশ দলপতি। বিদায়ের আগে ১১৭ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৫৯ রান করেন কুক। দলীয় ১২৭ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপর নিজের পঞ্চম আর দলের হয়ে ষষ্ঠ উইকেটটিও তুলে নেন মিরাজ। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে বেয়ারস্টোকে (৩) শুভাগত হোমের হাতে ধরা দিতে বাধ্য করেন টাইগার এ স্পিনার।
দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় ইংলিশদের ৬ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। এরপর ৪৩তম ওভারে বোলিং আক্রমণে এসে সাকিব ফিরিয়ে দেন বেন স্টোকসকে। সাকিবের বলে সরাসরি বোল্ড হন ২৫ রান করা স্টোকস। একই ওভারে সাকিব ফিরিয়ে দেন আদিল রশিদকে। এলবির ফাঁদে পড়ে রশিদ ফেরেন শূন্য রানে। তাতে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগে সাকিবের। এক বল পরেই সাকিব ফেরান জাফর আনসারিকে। এক ওভারে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ওভার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাকিব। দলীয় ১৬৪ রানের মাথায় ইংলিশদের শেষ ব্যাটসম্যান স্টিভেন ফিনকে ফেরান মিরাজ। টাইগারদের হয়ে মিরাজ ৬টি, সাকিব ৪টি উইকেট দখল করেন।
তারও আগে মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের প্রথম সেশনে একক আধিপত্য দেখায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ক্রমেই যেন উইকেটের আচরণ বদলায়! দলীয় ১ রানে ইমরুল কায়েসকে (১) হারালেও মুমিনুল হককে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে শক্ত ভিত গড়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল।
প্রথম ইনিংসে তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং সত্ত্বেও বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২২০ রানে। শুরুটা বাঘের মতো হলেও মিডঅর্ডারের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ গড়া হয়নি। চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট যেন ফিরে আসে মিরপুরে। বল মন্থর হয়ে ব্যাটে আসার সঙ্গে টার্নও বাড়তে থাকে। এর পুরো সুবিধাই কাজে লাগায় বোলাররা। শেষ ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ ৩০ রানে আট উইকেট। ভাবা যায়! রীতিমতো ধসই নামের টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপে। ব্যাটিংয়ে হতাশার দিনে উজ্জ্বল ছিলেন তামিম ও মুমিনুল। অন্যদিকে, ইংলিশদের হয়ে একাই পাঁচ উইকেট দখল করেন অফস্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলী।
ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম (১০৪)। ৪২তম ওভারে মঈনের বলে এলবিডব্লুর শিকার হন দেশসেরা এ ওপেনার। মঈনের বলেই বোল্ড হয়ে ৬৬ রান করে আউট হন মুমিনুল। আর কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। বাজে শট খেলে একে একে সাজঘরে ফেরেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৩, সাকিব আল হাসান ১০, অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৪, সাব্বির রহমান ০, শুভাগত হোম ৬, কামরুল ইসলাম রাব্বি ০ ও মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১। ৫ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়ে ইংলিশরা। দলীয় ১৪৪ রানেই হারিয়ে ফেলে ৮ উইকেট। সেখান থেকে আদিল রশিদ এবং ক্রিস ওকস দলকে টেনে তোলার পথে নবম উইকেট জুটিতে ৯৯ রানের পার্টনারশিপ করেন। ক্রিস ওকস ৪৬ রানে বিদায় নিলেও আদিল রশিদ ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন। কুক ১৪, ডাকেট ৭, জো রুট ৫৬, ব্যালান্স ৯, মঈন আলী ১০, বেন স্টোকস ০, বেয়ারস্টো ২৪, জাফর আনসারি ১৩ রান করেন। পক্ষান্তরে অভিষেক টেস্টের মতোই বল হাতে এবারও উজ্জ্বল ছিলেন মিরাজ। ২৮ ওভারে ৮২ রান খরচায় তুলে নেন ৬টি উইকেট। ৩টি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। আর একটি উইকেট দখল করেন সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২২০, ৬৩.৫ ওভার
তামিম ১০৪, ইমরুল ১, মুমিনুল ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাকিব ১০, মুশফিক ৪, সাব্বির ০, শুভাগত ৬, মিরাজ ১, তাইজুল ৫*, কামরুল ০; মঈন ৫/৫৭, ক্রিস ওকস ৩/৩০, বেন স্টোকস ২/১৩।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ২৪৪, ৮১.৩ ওভার
অ্যালিস্টার কুক ১৪, ডাকেট ৭, রুট ৫৬, ব্যালান্স ৯, মঈন ১০, স্টোকস ০, বেয়ারস্টো ২৪, আনসারি ১৩, ওকস ৪৬, রশিদ ৪৪*, ফিন ০; মিরাজ ৬/৮২, তাইজুল ৩/৬৫, সাকিব ১/৪১।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২৯৬, ৬৬.৫ ওভার
তামিম ৪০, ইমরুল ৭৮, মুমিনুল ১, মাহমুদুল্লাহ ৪৭, সাকিব ৪১, মুশফিক ৯, সাব্বির ১৫, শুভাগত ২১*, তাইজুল ৫, মিরাজ ২ এবং রাব্বি ৭; আদিল রশিদ ৪/৫২, বেন স্টোকস ৩/৫২, জাফর আনসারি ২/৭৬ এবং মঈন আলী ১/৬০।

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ১৬৪, ৪৫.৩ ওভার
অ্যালিস্টার কুক ৫৯, বেন ডাকেট ৫৬, জো রুট ১, ব্যালেন্স ৫, মঈন ০, স্টোকস ২৫, বেয়ারস্টো ৩; মিরাজ ৬/৭৬ সাকিব ৪/৪৯।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 6496817534512619332

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item