সৈয়দপুরে ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে বিধবা মাকে স্বামীর ভিটেবাড়ি ছাড়া করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

 সৈয়দপুর শহরে ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে এক বিধবাকে তাঁর স্বামীর ভিটেবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল গতকাল শুক্রবার দুপুরে গর্ভধারিণী  এক মা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলন করে বিধবা সাফিয়া খাতুন তাঁর লিখিত অভিযোগ ও বক্তব্য তুলে ধরেন।
শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়া এলাকায় দারুল উলুম মসজিদ সন্নিকটের বাসিন্দা  ছোট ছেলে মুস্তাফিজ আলীর বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিধবা বলেন, তাঁর স্বামী  ছিলেন ডা. মুর্ত্তজা আলী। তিনি শহরের মুন্সিপাড়া খেঁজুরবাগ এলাকায় বিগত ১৯৮৪ সাল থেকে স্বামীর নামে কেনা জায়গায় স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বিগত ২০০৯ সালে তাঁর স্বামী ৬ ছেলে ও এক মেয়ে  সন্তান রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা সাফিয়া খাতুনের ঠাঁই হয় তাঁর আদরের ছোট ছেলে মো. মুস্তাফিজ আলীর সংসারে। জীবন সায়াহেৃ এসে ছোট ছেলের সংসারে থেকে তাঁর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের সেবা যতœ, ¯েœহ ও মায়া মমতা পেয়ে মুগ্ধ হন বিধবা সাফিয়া খাতুন। তাই মায়ের প্রতি ছোট ছেলের দায়িত্ব কর্তব্য ও ভালবাসায় সন্তষ্ট হয়ে প্রতিদান স্বরূপ বিধবা রাজবাড়ী জেলা সদরে তাঁর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া  কিছু জমি তাকে  (ছোট ছেলেকে) হেবাবিল দলিল করে দেন। আর এতেই গর্ভধারিনী মায়ের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিধবার গর্ভে জন্ম নেওয়া ৩য় পুত্র ব্যবসায়ী মোফাক-খার আলী স্বপন, ষষ্ঠ পুত্র মো. মুজতাহিদ আলী বাবু এবং এক মাত্র কন্যা সন্তান সাবিহা আরজুমান্দ বানু নাজনীন।
  সংবাদ সম্মেলনে বিধবা সাফিয়া খাতুন বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে আমার ওই তিন সন্তান জোটবদ্ধ হয়ে আমাকে স্বামীর ভিটেবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য নানা রকম হুমকিধমকি দেয়। পরবর্তীতে আমার বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় সাধারণ ডায়েরীও (জিডি) করে। এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে বৈঠক বসে। ওই বৈঠকেও তারা আমকে স্বামীর ভিটেবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করে। বৈঠকে বিধবা তাঁর জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকু স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেবাড়িতে থাকার আকুতি জানান। তাঁর কথায় বিধবার ২ ছেলে ও মেয়ে আরো উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এ সময় তাকে গলা ধাক্কা নতুবা পুলিশ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জামাতার উপস্থিতি তাকে অশ্লীল ভাষায় ব্যাপক গালমন্দ করেন। এ সময় বিধবার আহাজারিতে পাড়া প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলেও ছেলে স্বপন ও বাবু’র গুন্ডাবাহিনী ভয়ে সকলেই সরে পড়েন। পরবর্তীতে পাষন্ড ছেলেরা বিধবাকে তাঁর স্বামীর ভিটেবাড়ি ছাড়া করেন। সেই থেকে ছোট ছেলে মুস্তাফিজ আলীর সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার বাড়িতে আশ্রয় হয়েছে বিধবা সাফিয়া খাতুন।
 সংবাদ সম্মেলনে বিধবা সাফিয়া খাতুন ছেলেদের অত্যাচার নির্যাতনে বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা পাষন্ড দুই ছেলে আমাকে শুধুমাত্র স্বামীর ভিটেবাড়ি ছাড়া করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা আমাকে ও আমার আদরে ছোট ছেলেকে নানা রকম হয়রানি ও হেনেস্তা করতে ফন্দি ফিকির করছে। এরই মধ্যে তারা আমাকে মানসিক ভারসাম্যহীন আখ্যা দিয়ে সুদূর রাজবাড়ী জেলায় একটি মামলাও দিয়েছেন আমাকে জড়িয়ে। তারা এখন আমাকে পাগল হিসেবে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিধবা আক্ষেপ করে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমার গর্ভের ওই ছেলেরা আমাকে ভরন- পোষন ও চিকিৎসা সেবা দেয়নি, নেয়নি ভালমন্দ খোঁজ-খবর। অথচ তারাই আজ আমাকে ৮৫ বছর বয়সে এসে মায়ের ভালবাসার প্রতিদান হিসেবে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে চাইছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি ওই সব বিবেকহীন সন্তানদের হাত থেকে বাঁচতে এবং তাদের বিচারের জন্য দেশের বিকেবান মানুষ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বিধবার ষষ্ঠ ছেলে দিনাজপুরের বসবাসকারী ব্যবসায়ী মো. মুজতাহিদ আলী বাবু’র সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর মা এখন অশীতিপর বৃদ্ধা। নিজে থেকে ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি বর্তমানে ব্রেইন হেমারেজের রোগী।  তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই। আর  আমরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি। তিনি নিজেই ছোট ছেলের বাড়িতে চলে গেছেন। এখন ছোট ছেলে তাকে যা বলাচ্ছেন তিনি তাই বলছেন। ইতোমধ্যে আমার ওই ভাই পৈত্রিক অনেক সম্পদ নষ্ট করেছেন। এখন মায়ের বিপুল টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে আমাদের ছোট ভাই মাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবসার করছে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 712271509585347737

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item