১০ টাকা কেজিতে হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিক্রি পীরগঞ্জে সরকারী বিধি উপক্ষো করে তালিকা তৈরী

মামুনুর রশিদ মেরাজুল পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকেঃ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেন হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিক্রির জন্য তালিকা তৈরিতে সরকারী বিধিবিধান উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি আর চালবাজীর কারনে প্রকৃত হতদরিদ্ররা সরকারের দেয়া সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হতদরিদ্রদের নাম বাদ দিয়ে এলাকার বিত্তশালী, ৩ থেকে ১৫ একর জমির মালিক, ইটের ঘরবাড়ী, ব্যবসায়ী, সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীজীবীর স্ত্রী, ইউপি সদস্য,ইটভাটার শেয়ারার, ডিলারের স্ত্রী, স্বামী-স্ত্রীর নামছাড়াও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি এমন কি মৃত্যু ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তালিকায়। ওই তালিকা দিয়েই  সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত চাল ক্রয় করেছেন কার্ডধারীরা । ২০ অক্টোবর এসব দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। 
জানা গেছে,  পীরগঞ্জ পৌরসভা ছাড়া উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে ৪৩ জন ডিলারের মাধ্যমে ২১ হাজার ৬’শ ৭৯ টি হত দরিদ্র পরিবারের সদস্য স্বল্পমূল্যে ১০টাকা কেজিতে চাল পাচ্ছে।  চাল বিক্রি তদারকির জন্য ১ জন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নানান কারনে  আগষ্ট মাস থেকে চাল বিক্রির কথা থাকলেও পীরগঞ্জে তা সম্ভব হয়নি। তবে সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি কার্যক্রম গত ১লা অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করা হয়। সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ  জানান, প্রতিমাসের শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট ডিলারগন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বিরতিহীন চাল বিক্রি করবেন। একজন সুবিধাভোগী কার্ডধারী  মাসে একবার চাল উত্তোলন করতে পারবেন। 
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল তালিকা প্রনয়নে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির রকমফের। ৬ নং টুকুরিয়া ইউনিয়নের উত্তোলনকৃত চালের তালিকায় একই জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরে ক্রমিকের ব্যবধান রেখে ২ থেকে  ৫ জনের নামের তালিকার কার্ড দিয়ে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। যেমন-৪৮২৩৪৫ নম্বরের জাতীয় পরিচয় পত্র  কার্ডের তালিকার ১০৪৭ ও ১০৫৯ ক্রমিকে এবং ৪৬৫৫৫১ নম্বরের জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের তালিকার ১২১৭, ১২১৯, ১২২১, ১২২৩  ও  ১২২৫ ক্রমিকে দেখানো হয়েছে। এভাবে শতাধিক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে বরাদ্দকৃত চালও উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়াও  ওই ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের আবু বকর  কার্ড নং ১০৫০ ও তার স্ত্রী ফাতেমা কার্ড নং ১০৯৮, বকরের একই অন্নের ছেলে রাজ্জাকুল কার্ড নং ১০৫১, অপরছেলে রুহুল আমিন কার্ড নং ১১১৫, রুহুল আমিনের ছেলে নুর মোহাম্মদ কার্ড নং১০৭৬, বর্তমান ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন কার্ড নং ১১১৪, তার স্ত্রী রোকসানা কার্ড নং ১০০১, তোজাম্মল কার্ড নং ১১০৪,  তার স্ত্রী আমেনা বেগম কার্ডনং ১১১০,ছেলে আলমগীর কার্ড নং ১০৯৪। এ ছাড়াও ওই গ্রামের স্বচ্ছল ও বিত্তশালী ১২ জনের ( কার্ডের ক্রমিক নং- ১০৭০, ১১৮০, ১০৫৭, ১০৬০, ১০৪৫,  ১০৬৯, ১০৬১, ১০৬৭ ও ১০৮০থেকে ১০৮৩) নামে কার্ড হয়েছে এবং সেপ্টে¤র মাসের বরাদ্দকৃত চালও উত্তোলন করা হয়েছে। টুকুরিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান মন্ডল বলেন, ভূলের উর্ধে  কেউ নয়, অনিচ্ছাকৃতভাবে আইডিকার্ডের নম্বর ভুল হয়েছে কিন্তু লোকগুলো সঠিক। যখন এ তালিকা করা হয়েছে তখন ভিজিএফের চালেরও তালিকা হয়েছে। আমি তখন ওই কমিটির সদস্য ছিলাম মাত্র। ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকায় আমরা ভুল সংশোধন কার্যক্রম শুরু করেছি। আমার প্রতিপক্ষরা অন্যায় প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
রায়পুর ইউনিয়নের  ডিলার রায়পুর গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম । একই গ্রামের পারুল বেগম ও  তার স্বামী বয়েন, ওই গ্রামের মাজেদা বেগম, ও তাঁর স্বামী-আবু বক্কও,  বড় নিজামপুর গ্রামের মমতাজ ও তার স্ত্রী আনোয়ারা।  এছাড়াও রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবার রহমান, সাইদুর রহমান এবং চক করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছাবর রহমান ও ১ স্বাস্থ্য পরিদর্শকের স্ত্রীর নামেও তালিকা দিয়ে চাল উত্তোলন করা হয়েছে বলে একটি সুত্র দাবী করেছে।  এছাড়াও  একই ইউনিয়নে ৯৭০,৯৭১,৯৭২,৯৭৪ নং কাডধারীরা চানপুর গ্রামের বিত্তবান প্রভাবশালী ব্যক্তি। ৯২০ নং কার্ডধারী সোবহান মারা গেছে অনেক দিন আগে। ৩ নং বড়দরগাহ ও ৪ নং কুমেদপুর ইউনিয়নেও ওই কর্মসুচির অবস্থা তথৈবচ। মামার সাথে ইটভাটর শেয়ারের ব্যবসা, ইটের ঘর বাড়ী ও  ২/৩ একর জমির মালিক বড়দরগাহ ইউপির  শাহাজাদপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে মনজুর হোসেন, প্রায় ১০ একর জমির মালিক গুর্জ্জিপাড়া বন্দরের সার ও বীজের ব্যবসায়ী পারবর্তীপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ,ওই ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতির ছেলে শামীম,  ২০/২৫ বিঘা জমির মালিক ও মহিলা মেম্বরের স্বামী  আমবাড়ী গ্রামের নুরুন্নবী, গুর্জ্জিপাড়া কেপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনের স্ত্রী রেশমী, চাপাবাড়ী গ্রামের ইটের ঘরবাড়ী ও ২০/২৫ বিঘা জমির মালিক মজিবুলের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে।
প্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের অনেকের ঘর-বাড়ী পাকা, কেউ ব্যবসায়ী ,কেউবা  ৩ থেকে ১৫ একর জমি-জমার মালিক, কারো স্বামী চাকুরীজীবী ।  সরকারের জন কল্যানমুলক এ কর্মসুচিকে বাধাগ্রস্থকরতে একটি স্বার্থন্বেসী গোষ্ঠি হতদরিদ্রদের নাম বাদ দিয়ে তালিকায় সুকৌশলে  প্রভাবশালী ও স্বচ্ছল ব্যক্তি, স্বামী-স্ত্রীর ও সন্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুবিধাবঞ্চিত প্রকৃত হতদরিদ্ররা।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক  ইউপি  চেয়ারম্যান  বলেন, তালিকায় ভুলত্র“টি হতে পারে, আর এ সবভুল ত্র“টি হয়েছে নানামুখী কারনে ।  আমরা তো তালিকা করিনা।  অথচ দোষ দেয়া হয় আমাদেরকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শহীদুল্লাহ  বলেন,  তালিকায় কোনো ধনী বা স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম দেয়ার নিয়ম নেই। এ রকম হয়ে থাকলে সংশোধনেরও ব্যবস্থা আছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 7829310352830881642

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item