রংপুর অঞ্চলের কৃষিতে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

হাজী মারুফ :

রংপুরে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্ষেতের মধ্যে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি এই পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকেরা সহজে বুঝতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন কৃষকের অর্থের অপচয় কম হয় অন্যদিকে ক্ষেতের মধ্যে উপকারী পোকার উপস্থিতি জানা যায় এবং নিরাপদ ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। ক্ষেতের মধ্যে ক্ষতিকর পোকা কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা, সবুজ গাছ ফড়িং ইত্যাদি পোকার উপস্থিতি বুঝতে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি কৃষকেরা ব্যবহার করে থাকে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত পণ্যগুলো হাতের কাছে খুব সহজে মিলে, বিধায় খরচ তেমন হয় না। এ পদ্ধতিতে ব্যবহারের জন্য একটি টর্চ লাইট (হ্যাজাক লাইট), কিছু সাবানের গুড়ার পানি ও একটি বালতির প্রয়োজন হয়। সাবান মিশ্রিত পানি বালতির মধ্যে রেখে তার উপর হ্যাজাক লাইট বা টর্চ লাইট বেধে রাখলে সাবানের পানির মধ্যে ক্ষতিকর পোকা এসে পড়ে। সন্ধার পর থেকে এশার নামাজের আগ মুহূর্ত এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে উক্ত পরীক্ষাটি করলে সহজে কৃষকরা বুঝতে পারে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি। বাছুরবান্ধা গ্রামের কৃষক অমৃত চন্দ্র, গিরিশ চন্দ্র, গোপাল চন্দ্রসহ একাধিক কৃষক জানান, আগে আমরা এই পদ্ধতির ব্যবহার সম্মন্ধে জানতাম না, উপজেলা কৃষি স্যার রেজাউল করিম আমাদের হাতে কলমে এই পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছে ফলে আমরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, কোন পোকাটি বন্ধু পোকা আর কোন পোকাটি ক্ষতিকর পোকা। তারা আরো বলেন- আগে আমরা ক্ষেতে পোকা থাকুক আর নাই থাকুক জমিতে পোকা নিধনের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতাম। ফলে উপকারী ও অপকারী পোকা সব নিধন হতো কিন্তু এখন এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আমরা ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি জেনে তারপর ব্যবস্থা গ্রহন করি। ইকরচালী ইউনিয়নে বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত তুহিন জানান, আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করার কারণে আমি ক্ষেতে সুফল পেয়েছি। যেখানে ক্ষেতে ঔষধ ব্যবহার করার জন্য আমার ৮ থেকে ১০,০০০/- টাকা লাগত, সেখানে আলোক ফাদ ও পার্চিং করার কারনে অর্ধেক খরচ কমে এসেছে। গতকাল আলোক ফাঁদ পদ্ধতি সরেজমিনে দেখার জন্য রংপুর জেলার অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষিবিদ্ শাহআলম ও রংপুর জেলার উপ পরিচালক, শ.ম. আশরাফ আলী, রংপুর মেট্রো পলিটন এলাকার গঙ্গাহরি ও সদর রংপুরের দেবীপুর মাঠে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। এরপর তারা তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বাছুরবান্ধা গ্রামে স্থাপিত আলোক ফাঁদ পদ্ধতি পরিদর্শন এবং স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহারের সুফল সম্মন্ধে বিস্তাড়িত আলোচনা করেন। অতিরিক্ত পরিচালক জনাব, কৃষিবিদ শাহ্ আলম উপস্থিত কৃষকদের বলেন- ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহন করেছিল তার মধ্যে কৃষিই অন্যতম। কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের কাছে নতুন নতুন প্রযুক্তি কৃষকদের দোড় গোড়ায় সহজে পৌছে দিয়ে আসছেন। আলোক ফাঁদ পদ্ধতি তারই একটি অংশ। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কৃষকরা ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি জানতে পারে। পরে সে অনুযায়ী ক্ষেতে ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে। শ.ম. আশরাফ আলী, ডিডিএই রংপুর, বলেন যে, ক্ষেতের মধ্যে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা থাকে। আলোক ফাঁদ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি জানতে পারি এবং সে মোতাবেক তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারি। মেট্রো পলিটন কৃষি অফিসার ড. শাইখুল আরেফিন, সদর রংপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন ও তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আমন ফসলে ক্ষতিকর পোকা বিশেষ করে বাদামী গাছ ফড়িং যাকে আমরা কারেন্ট পোকা বলি। এর আক্রমন থেকে কৃষকের ক্ষেত রক্ষা করতে আমরা কৃষকদের আগাম প্রস্তুতি গ্রহন করার জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষতিকর পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য এই পদ্ধতিটি সকল কৃষক যাতে গ্রহন করে সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3716016238343424462

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item