জঙ্গি মেজর জিয়ার নেটওয়ার্ক অক্ষত!

ডেস্কঃ
জঙ্গি তামিম চৌধুরীর নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়লেও জঙ্গি মেজর জিয়ার নেটওয়ার্ক এখনও অক্ষত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার পর তার আরও দুই শীর্ষ সহযোগী জঙ্গি মেজর জাহিদ মিরপুরে ও করিমর আজিমপুরের অভিযানে নিহত হয়। এছাড়া কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জ অভিযানে তামিমের নীতি নির্ধারক আরও কয়েক সহযোগী নিহত হয়। এতে তামিমের ‘চ্যাপ্টার’ শেষ হয়ে গেছে বলেও মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যা পরে আনসার আল ইসলাম নামে আত্মপ্রকাশ করে, সেই জঙ্গি সংগঠনের আরেক শীর্ষ নেতা জঙ্গি মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক এখনও ধরা পড়েনি। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা এখনও চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না। তবে জিয়া ধরা পড়বে এবং তার চ্যাপ্টারও শেষ হবে বলে আশাবাদী তারা।

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বেশ কয়েকটি সফল অভিযান চালায় পুলিশ। রাজধানীর কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া, মিরপুরের রূপনগরে এবং সর্বশেষ আজিমপুরে অভিযানের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশ ফুরফুরেই মনে হয়েছে। কারণ এসব অভিযানে তামিম চৌধুরীর শীর্ষ সহযোগীদের অনেকেই মারা গেছেন। রূপনগরে নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদ ও আজিমপুরে নিহত জঙ্গি করিম ছিলো তামিমের নীতি নির্ধারকদের অন্যতম। আজিমপুরে নিহত জঙ্গির প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী।

গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর জঙ্গিবিরোধী কয়েকটি সফল অভিযানে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। ঈদের দিন দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় চার সহকর্মীর প্রাণদান গত ঈদুল ফিতরে আমাদেরকে ভরাক্রান্ত করেছিল। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা আগাছা পরিষ্কার করে আমার যেসব প্রিয় সহকর্মী এবারের ঈদে আমাদেরকে নিরুদ্বেগ করেছে তাদেরকে আমি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘তামিম ও তার দুই শীর্ষ সহযোগীরা পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়ার কারণে পুরোপুরি না হলেও জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পেরেছি। তবে তামিমের অন্যান্য সহযোগী ও জঙ্গি মেজর জিয়াসহ অন্যদের ধরতে পারলে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।’

গুলশান হামলার পর চারটি অভিযানেই তামিমের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত ১৩ সহযোগী নিহত হয়েছে। তামিমের আরেক শীর্ষ সহযোগী নুরুল ইসলাম মারজানসহ আরও এক ডজনের বেশি সহযোগীকে ধরতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে আবু সুলেমানসহ তামিমের কয়েকজন সহযোগী ভারতে অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মুসার কাছ থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তামিমের অনেক সহযোগীর নাম জানতে পেরেছেন। এছাড়াও শরিফুল ইসলাম খালিদ, মামুনুর রশিদ রিপন, ওয়াসিম আজওয়াদ আব্দুল্লাহ ওরফে আসিফ আজওয়াদ, আবু ইউসুফ মোহাম্মদ বাঙ্গালী, রাজীব, মানিক, ইব্রাহিম হাসান খান ও তার ভাই জুনায়েদ খান এবং রাহুলসহ তামিমের আরও কিছু সহযোগী দেশেই অবস্থান করছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

আজিমপুর অভিযানে তামিম গ্রুপের তিন শীর্ষ জঙ্গির স্ত্রী ও সন্তানদের ধরা সম্ভব হয়েছে। যাদের মধ্যে মারজানের স্ত্রী আফজান ওরফে প্রিয়তিও রয়েছে। করিমকে জীবিত ধরা না গেলেও তার স্ত্রী শারমিন ও ১৪ বছর বয়সী ছেলে তাহরিম কাদেরী ওরফে রাসেলকে আটক করেছে পুলিশ। একই অভিযানে তামিমের আরেক সহযোগী জঙ্গি বাশারুল্লাহ ওরফে চকলেট ওরফে রাহুলকে ধরা না গেলেও তার স্ত্রী শায়লা আফরিনকে শিশু কন্যাসহ আটক করা হয়েছে।

জঙ্গি দমনে গঠিত পুলিশের বিশেষায়িত টিম কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা মনে করেন, তামিম ও তার শীর্ষ কয়েকজন সহযোগী নিহত হওয়ার কারণে জঙ্গিদের নাশকতা ও হামলা থেকে  দেশ হয়েছে ঝুঁকিমুক্ত এবং মানুষ হয়েছে নিরাপদ। কিন্তু তামিম চৌধুরী ও মেজর জিয়ার নেটওয়ার্ক পুরোপুরি না ভাঙা পর্যন্ত তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। তামিমের নেটওয়ার্ক তছনছ করা সম্ভব হলেও মেজর জিয়ার নেটওয়ার্ক এখনও পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয়নি। জিয়াকে ধরা সম্ভব হলে তার নেটওয়ার্কও দ্রুত ভেঙে ফেলা সম্ভব হতো। তামিম ও জিয়ার নেটওয়ার্ক ভিন্ন হলেও তাদের আদর্শ অভিন্ন। যে কারণে তামিমের নেটওয়ার্ক ভাঙা সম্ভব হলেও জিয়ার নেটওয়ার্ক না ভাঙা পর্যন্ত স্বস্তি পাওয়ার কারণ নেই।

জঙ্গি দমনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ‘বর্তমানে যে গতিতে জঙ্গি দমনে কাজ হচ্ছে আগামী ১০ বছর একই গতিতেই কাজ চালাতে হবে। তখন পুরোপুরি না হলেও দেশ জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে পারে। একইসঙ্গে আদর্শিক লড়াইও চালাতে হবে। কারণ, ভ্রান্ত হলেও জঙ্গিরা একটা আদর্শ ধারণ করে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর প্রতিষ্ঠিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম তথা আনসার আল ইসলামের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে কাজ করছেন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া মেজর জিয়া। ব্লগার ও লেখক হত্যার পেছনে রয়েছে এই আনসার আল ইসলাম। আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন মতাদর্শী হত্যার পেছনে পুরাতন ও নব্য জেএমবি জড়িত বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। দু’টি গ্রুপই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও আইএস-এর ভারতীয় উপ-মহাদেশীয় জঙ্গি সংগঠন একিউআইএস-এর অনুসারী বলে দাবী করে। তবে গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনা এই তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন নব্য জেএমবির কাজ।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 1241702898911178002

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item