তিস্তায় ত্রানের জন্য হাহাকারের অপপ্রচারে একটি মহল

বিশেষ প্রতিনিধি ৬ আগষ্ট॥
তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের মাঝে সরকারের বরাদ্দ দেয়া ত্রান বিতরন অব্যাহত রয়েছে। অথচ একটি সুবিধামহল সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে অপপ্রচারে মাঠে নেমেছে। অনেকে গণমাধ্যম কর্মীদের মোবাইলে ত্রানের জন্য হাহাকার,ত্রান বিতরনে অনিয়ম, বিশুদ্ধ পানির অভাব, পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করছে। এমনকি অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চলেছে এই সব অপপ্রচার।
এই সবের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গনমাধ্যমের কর্মীরা সরেজমিনে গেলে তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজন ওইসব  প্রচারকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেন। তারা বলেন এর আগেও বন্যা হয়েছে কিন্তু এতো ত্রান আগে পাইনি। শুধু ত্রান নয় বাঁধে নলকুপ,স্যানিটেশন ল্যাট্রিন পর্যন্ত স্থাপন করে দিয়েছে সরকারি লোকজন। প্রতিনিয়িত প্রশাসনের লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের খোঁজ খবর নিয়ে চলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ,প্রানী সম্পদ বিভাগ ক্যাম্প স্থাপন করে স্বাস্থ্য সেবা ও গবাধী পশুর চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। কোন পরিবারের কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষনিকভাবে তথ্য কেন্দ্রে অবগত করতে তার সমস্যা মিটিয়ে দেয়া হচ্ছে।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের  ফজল শেখ (৭৫) কলিম শেখ (৪৫), আনোয়ারা বেগম (৪৮) , জয়ফুল বেওয়া (৫৫), আবুল কাশেম (৪৫), মকদুম আলী (৮০) সহ  অনেকে বলেন, আমরা সরকারের নিকট আর ত্রাণ চাই না । ম্যালা ত্রান পাইছি। আমাগো  বাঁধ করি দাও। বাঁধ বানেয়া  দিলে জমি-জমা সব ফেরত পামো। তারা বলেন শুধু সরকারী ভাবে নয় এলাকার এমপি, ছাত্রলীগ ,রেডক্রিসেন্ট,ব্যাংক, বিভিন্ন
সংগঠন ত্রান দিয়েছে এবং দিচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানায় টেপাখড়বাড়ির এক সুবিধাবাদী ব্যাক্তি ও তার পক্ষের লোকজন এই সব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ  নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এ পর্যন্ত ত্রান দেয়নি। একজন তো প্রশাসনের কাছে ২০ মেট্রিক চাল চেয়েছিল। ওই সুবিধাবাদী ব্যাক্তিকে প্রশাসন ব্যাক্তিগতভাবে ত্রান দেয়নি। প্রশাসন বলেছে আপনি কোথায় ত্রান পায়নি দেখিয়ে দিয়ে বলেন সেখানে গিয়ে প্রশাসনের লোকজন ত্রান বিতরন করবে। কিন্তু ওই ব্যাক্তি তার জবাব দিতে পারেনি। আর এখন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায় আজ শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত  টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে তিস্তার  ৫৩৫টি পরিবারকে আরো ৩০ কেজি করে চাল বিতরন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, সহকারী কমিশনার ভুমি মিল্টন চন্দ্র রায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ, ট্যাক কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, ও পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন সহ পরিষদের সদস্যরা।
সংশ্লিস্ট সুত্র মতে তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গনে গত ২৪ দিনে ডিমলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায়  এক হাজার ৮৬৩ পরিবার বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আজ শনিবার পর্যন্ত  প্রতিটি পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ৪ দফায় ৭০ কেজি করে চাল, শুকনো খাবার প্যাকেট ও নগদ এক হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও,ব্যাংক, সংগঠন সহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ফলে ত্রান নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবর গুলোর নেই কোন অভিযোগ।
এ ছাড়া বাঁধে আশ্রিতদের জন্য বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকুপ ও স্যানিটেশন ল্যট্রিন স্থাপন করে দেয় প্রশাসন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন, তথ্য কেন্দ্র ও প্রানী সম্পদ বিভাগের টিম ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে একটি মহল সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ফেসবুকে ত্রানের জন্য হাহাকার, বিশুদ্ধ পানি নেই কিংবা পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে স্ট্যাটাস দিচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (২ আগষ্ট) ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে তিস্তার ডালিয়া হেলিপ্যাড মাঠে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ এক হাজার করে টাকা বিতরণ করেন।
সেই সাথে বন্যায় নিঃস্ব পরিবারের অতি দ্রুত তালিকা তৈরি করে প্রতিটি পরিবারের জন্য দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন ও নগদ ছয় হাজার করে টাকা প্রদানের জন্য নীলফামারী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেন।
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গনে  বাঁধসহ উঁচু স্থানে এক হাজার ৮৬৩টি পরিবার  আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুতসহ সহযোগিতার জন্য সাতটি তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
তথ্য কেন্দ্রে সূত্রে জানা যায়, তিস্তার সিলট্রাপে ৫১৬টি পরিবার, কলম্বিয়া বাধে ১৪৭টি পরিবার, তেলির বাজার বাঁধে ১২০টি, চেয়ারম্যানপাড়া বাঁধে ১৩২টি, যৌথ বাঁধে ২৩৬টি, সানিয়াজান বাঁধে ২১৭টি, ফ্লাড ফিউজ সংলগ্ন বাঁধে ১৮৭টি পরিবার, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দোহলপাড়া বাঁধে ৫০টি পরিবার, কালীগঞ্জ যৌথ বাঁধে ৪০টি পরিবার, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা ৩৪৫টি পরিববার আশ্রয় নিয়েছে।
ডিমলা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন, খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন, ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যার আমিনুর রহমান ও পূর্বছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি ও বেসরকারীভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন  ত্রান বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ত্রান মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মোট চার দফায় ৩৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও শুকনো খাবারের আড়াই হাজার প্যাকেজ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5291149031694284540

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item