পীরগাছায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার, সার্ভেয়ার যখন এসও, হাতিয়ে নিলেন মোটা অংকের অর্থ

ফজলুর রহমান, পীরগাছা(রংপুর)প্রতিনিধিঃ

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলীগণের যোগসাজোসে রংপুরের পীরগাছায় বিদ্যালয় সংস্কারের নামে ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে প্রায় সোয়া কোটি টাকা উত্তোলন সাপেক্ষে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ১ শত ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে সংস্কারের জন্য এসব টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে উপজেলার ৯ ইউনিয়নে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী-৩ এর আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ২১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় । বরাদ্দকৃত অর্থ বৃহত্তম মেরামতের জন্য ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। টয়লেট মেরামতের জন্য ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। বিদ্যালয় শিখন কার্যক্রম উন্নয়ন পরিকল্পনার(স্লিপ) জন্য ১শত ৭৯ টি প্রতিষ্ঠানে  ৭১ লাখ ৬০ হাজার। প্রাক-প্রাথমিকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১শত ৭৯ টি প্রতিষ্ঠানে ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও রুটিন মেরামতের জন্য ১শত ৩৬ টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরেজমিনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় প্রতিষ্ঠান গুলিতে কোন কাজ করা হয়নি। ৩০ জুনের মধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ভূয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ উত্তোলন করা হয়। কাজ না করেই সংশ্লিষ্ঠ কর্র্তৃপক্ষের যোগসাজোসে ৩০ জুনের মধ্যে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে এসব বরাদ্দ পাওয়া অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। রুটিন মেরামতের জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধান শিক্ষকগণ পরিকল্পনা পত্রের জন্য নিয়মিত উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে ঘুরে শেষ সময়ে পেলেও কাজ করতে পারেননি। টয়লেট সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের টয়লেট সংষ্কারের কাজ না থাকলেও বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ পাওয়া অর্থ  ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করে আতœসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহত্তর ও টয়লেট সংস্কার কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলীগণ প্রকাশ্যে মোট বরাদ্দের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উৎকোচ আদায় করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সরেজমিনে কান্দি ইউনিয়নের দিগটারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র, সেখানে বিদ্যালয়ে কোন কাজ না করলেও ৩০ জুন কতৃপক্ষ বিল প্রদান করেন। ওই বিদ্যালয়ের সংস্কার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এর সাথে মোবাইলে বিল দেওয়ার বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, অন্যান্য বিষয় কেটে দিয়ে শুধু রঙ্গের কাজ ও প্লাস্টার বাবদ বিল প্রদান করা হয়েছে। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক কাজ করে নিবেন। কিন্তুু প্রধান শিক্ষক বললেন আমি পুরো বিল উত্তোলন করেছি। রফিকুল ইসলাম সার্ভেয়ার হিসেবে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে যোগদান করলেও বর্তমানে তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা প্রকৌশলী কাজ অনুযায়ী বিল প্রদান করতে বললেও সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম তা কানে নেননি। সংস্কার না করলেও তিনি মোটা অংকের বিনিময়ে সকলকে বিল প্রদান করেন।
এদিকে ছাওলা ইউনিয়নের টয়লেট সংস্কার প্রাপ্ত ছাওলা , আদমপাড়া ও পশ্চিম কাশিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন কাজ না করলেও প্রধান শিক্ষকরা মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে বিল উত্তোলন করেন । অন্যদিকে বালাটারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গতকাল থেকে টয়লেটের কাজ চলছে। এবিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান এর সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, যারা কাজ করেনি তাদের বিল উত্তোলন করে অফিস একাউন্টে রাখা হয়েছে কাজ করলে পরে পে-অর্ডারের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। শিবদেব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ছোট কেচি গেট ও সামান্য গাথুনির কাজ করেই লাখ টাকা হজম করলেন প্রধান শিক্ষক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসান।
একাউন্টে টাকা রাখা হয়েছে এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, কোন একাউন্টে টাকা রাখা হয়েছে তা আমার জানা নাই।
অপরদিকে স্লিপের ৪০ হাজার টাকা এক সাথে প্রদান করা হলেও সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কাজ না করেই আতœসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন । উপজেলা প্রকৌশলীর কর্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে ৩০ জুনের মধ্যে প্রায় সোয়া কোটি টাকা উত্তোলন সাপেক্ষে আতœসাত করেন। ফলে সরকারের নেয়া এসব সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 509322850870571668

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item