স্ত্রী সন্তান হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না বৃদ্ধ রুহুল্ল্যাহ মিয়া

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ৯ জুলাই॥
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারি মাঝাপাড়া গ্রামটি শোকের সাগরে ভাসছে। এই  গ্রামের রুহুল্ল্যাহ মিয়া এক সাথে হারিয়েছে স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৫১), ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৫), পুত্রবধু দুলালি বেগম (২২), নাতি মহতাসিন হোসেন (৪),মেয়ে জলঢাকা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী  শাহানাজ পারভিন (২২) সহ ৫ জনকে। এরা সহ একই গ্রামের জামিয়ার রহমানের ছেলে ব্যাটারী চালিত অটো চালক সেকেন্দার আলী প্রাণ হারায়। এরা সকলে শুক্রবার বিকাল পনে ৫টায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। শনিবার সকালে নামাজে জানাজা শেষে জলঢাকার গ্রামে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। নামাজে জানাজা ও দাফনে কয়েক হাজার মুসল্লি অংশ নেয়। সেখানে এক হৃদবিদারক দৃশ্য ফুটে উঠে। এরআগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দাফন সম্পন্ন হয় অটোরিকসা চালক সেকেন্দার আলীর।  শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধ রুহুল্ল্যাহ মিয়া স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধু আর নাতিকে হারিয়ে মুর্ছা যাচ্ছেন বারবার। স্বজনসহ স্থানীয়রা তাকে সমবেদনা জানালেও একই সাথে পাঁচজনের মৃতদেহ দেখে কোনভাবে যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছেন না তিনি। কষ্টের মাঝেও তিনি বারবার আক্ষেপ করে বলছেন, আমার কি হলো, সবাইকে হারালাম। বাঁচবো কিভাবে।
শুক্রবার বিকালে রংপুর -দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ওই বৃদ্ধার স্ত্রী রওশন আরা, ছেলে শহিদুল ইসলাম, পুত্রবধু দুলালি বেগম, মেয়ে শাহনাজ পারভিন ও নাতি মোমতাকিন হোসেনকে(৪)। নিহত রওশন আরা বেগমের বড় ভাই সৈয়দপুর উপজেলার পুরাতন বাবুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের মেয়ে রোকসানা খাতুনের বিয়ের দিন ছিল আজ শনিবার(৯ জুলাই)। ওই বিয়েতে অংশ নেওয়ার জন্য একদিন আগে শুক্রবার রওশন আরাসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্য অটোরিকশা করে দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বিকেল পনে ৫টার দিকে তারাগঞ্জের জিগারতলা স্থানে পৌঁছালে অটোরিকশা পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে মিনিবাসটি পালিয়ে যায়।শুক্রবার রাতেই পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। রাতে অটোরিকসা চালক সেকেন্দার আলীর দাফন সম্পন্ন হলেও শনিবার সকালে দাফন করা হয় বাকি পাঁচজনের। জানাযা এবং দাফনে অংশ নেন হাজারো মানুষ।
নিহত পরিবারের নিকটাত্মীয় আসাদুল ইসলাম জানান, চ্যাঙমারী থেকে অটোরিকসা যোগে নয়জন মিলে সৈয়দপুর শহরের বাবুপাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তারা। পথিমধ্যে বাসচাপায় ঘটনাস্থলে মারা যান অটোরিকসা চালকসহ ছয়জন। পরিবারের বাকি তিনজন শফিকুল ইসলাম(৩০), তাহেরা বেগম(২২) ও শিশু তাহসিন ইসলাম(২) প্রাণে বেঁচে যান। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শাহনাজ পারভিন জলঢাকা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলো।
এদিকে অটোরিকসা চালক সেকেন্দার আলীর বয়স মাত্র ১৪। সে বিন্নাকুড়ি ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো। গেলো রমজানে স্থানীয় মসজিদে তারাবী পড়াতো সে।
নিহতের ভাই সোহান আলী জানান, বাবা-মা আর তিন ভাইয়ের মধ্যে মেঝ ছিলো সে। আর্থিক সংকটের কারণে বাবার পাশাপাশি অটোরিকসা চালিয়ে সংসারে যোগান দিতো সেকেন্দার কিন্তু ঘাতক বাস তার জীবন কেড়ে নিলো।
নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসা জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী জানান, একই পরিবারের এক সাথে পাঁচজনকে হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর যাতে একটিও দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি জানান, রাতে তারাগঞ্জ থানা থেকে পরিবারের সদস্যরা নিহতের মৃতদেহ গ্রহণ করেন। শনিবার সকালে চ্যাঙমারী ঈদগাহ ময়দানে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
নিহতের জানাযায় উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও জলঢাকা পৌরসভা মেয়র ফাহমিদ ফয়সাল কমেটসহ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4902305259557891777

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item