সরাসরি অলিম্পিকে : ইতিহাস গড়লেন গলফার সিদ্দিকুর

ডেস্কঃ
সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নতুন ইতিহাস গড়ে ফেললেন বাংলাদেশে কৃতি গলফার সিদ্দিকুর রহমান। দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলেন সরাসরি অলিম্পিকে খেলার। এত দিন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির দেয়া ওয়াইল্ড কার্ডেই কেবল বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের এ মহাযজ্ঞে নিজেদের শামিল করতে পেরেছেন বাংলাদেশের এথলেটরা। তাতে অলিম্পিকের যে মূল মন্ত্র অংশগ্রহণ- সেটি পূরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু লাল-সবুজের পতাকা ওড়েনি গর্বভরে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ পারফরম্যান্স দিয়ে নিজের জায়গা করে নিলেন এ বিশ্ব আসরে। সোমবার প্রকাশিত অলিম্পিক (গলফ) র‌্যাংকিংয়ের চূড়ান্ত তালিকায়ও নিজের অবস্থান ধরে রেখে এ যোগ্যতা অর্জন করলেন তিনি। সারা বিশ্ব থেকে রিও আসরে যে ৬০ গলফার অংশ নিতে যাচ্ছেন, সিদ্দিক তাদের মধ্যে ৫৬তম। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) একটি সূত্রও নিশ্চিত করেছে খবরটি।
বিশ্ব গলফে অবশ্য আমেরিকানদের আধিপত্য সার্বাধিক। শীর্ষ ৫০ গলফারের তালিকা করলে দেখা যাবে আমেরিকানই আছেন ৩০ জন। অলিম্পিকে বেশি দেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে তাই র‌্যাংকিংয়ের প্রচলন। যেখানে প্রথম শীর্ষ ৬০ জনের ১৫ জন গলফারের মধ্যে এক দেশ থেকে কেবল ৪ জন সুযোগ পেতে পারেন, পরের ৪৫ জনে সুযোগ পাবেন দুজন করে। তাতেই বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৩০৪ নম্বরে থেকেও অলিম্পিকের দুয়ারটা খুলে গেছে সিদ্দিকুরের।
সেই ১৯০০ সালে আধুনিক অলিম্পিকের দ্বিতীয় আসরে প্রথম ও শেষবারের মতো আয়োজিত হয়েছিল গলফ। এবার রিওতে সে গলফ ফিরছে এক শতাব্দীরও বেশি সময় পার করে। বাংলাদেশকে এ ইতিহাসেরই সাথী করছেন সিদ্দিকুর। এখনো পর্যন্ত অলিম্পিক পদক পায়নি এমন দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশই শীর্ষে। তার চেয়েও আক্ষেপের হলো অলিম্পিকের গত ৮টি আসরে এই বাংলাদেশের যে ৩২ জন এথলেট নাম লিখিয়েছেন তাদের কেউই নিজের যোগ্যতায় সে সুযোগ পাননি, প্রত্যেকেই গিয়েছেন আইওসির ওয়াইল্ড কার্ড নামক সুবিধায়, পদক জয় তাই ছিল আকাশকুসুম কল্পনাই। এত দিন যে যোগ্যতা অর্জনই ছিল সোনার হরিণ পাওয়ার মতো ব্যাপার, সিদ্দিক এত দিনে সে অপ্রাপ্তিই পূরণ করলেন।
২০১০ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ধ্রুবতারার মতো আবির্ভাব সিদ্দিকের। গলফে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু সেখানে যে শিরোপা জেতার মতো কা- ঘটানো সম্ভব, ২০১০-এর ব্রুনাই ওপেন জয় সেই সত্যটাই নাড়িয়ে দিয়ে যায় পুরো ক্রীড়াঙ্গন। গত ৬ বছরে সিদ্দিক সেই উচ্চতা থেকে নামেননি একবারের জন্য। বরং নতুন নতুন অর্জনে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভারতে ২০১৩ সালে জেতেন নিজের দ্বিতীয় পেশাদার শিরোপা। এর মধ্যে গলফ বিশ্বকাপে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন, ইউরেশিয়া কাপে এশিয়ার করেছেন উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স। সর্বশেষ ইউরোপিয়ান ট্যুর টুর্নামেন্ট মরিশাস ওপেনে শিরোপা থেকে নিঃশ্বাস দুরত্বে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত রানার্স-আপ হয়েছেন।
অলিম্পিক স্বপ্নে সিদ্দিকুরের পথচলা শুরু হয় গত বছর থেকে। গত এপ্রিলে প্রকাশিত প্রথম অলিম্পিক র‌্যাংকিংয়ে তিনি ৫৭তম স্থান পান। ২০১৪ থেকে পারফরম্যান্স বিচার করে সেই র‌্যাংকিং হয়, এর পর থেকে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রতি সপ্তাহের রদবদলের মাধ্যমে কাল চূড়ান্ত হয় সেই তালিকা, যেখানেও সিদ্দিক ৫৬ নম্বরে। এ দুই বছরে সিদ্দিকের পারফরম্যান্সে উত্থান-পতন গেছে। এ বছরের গোড়ার দিকে তো তালিকা থেকে ছিটকে অনেক পিছিয়েও পড়েছিলেন। তার ফেরার আশাই ছিল না, যদি না গত মেতে ইউরোপিয়ান ট্যুরের আসরে তিনি রানার্স-আপ হতেন। এ পারফরম্যান্সই তাঁকে অলিম্পিক র‌্যাংকিংয়ে আবার ফিরিয়েছে।
৫ জুলাই প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে তিনি ৫৩তম। এরপর থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, অবশেষে চূড়ান্ত তালিকায়ও থাকল তার নাম। বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে যোগ্যতার মাধ্যমে জায়গা পেলেন তিনি অলিম্পিকে। এ অর্জন কতটা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত তাঁর কণ্ঠই, ‘এখন বাংলাদেশের মানুষই বিচার করবে, গলফ আমাদের কোথায় নিয়ে গেছে, গলফ কী দিতে পেরেছে। সারা বিশ্বে প্রায় ২০০টি দেশে গলফ হয়, সবার নিজস্ব পেশাদার টুর্নামেন্ট আছে, বিশ্বে মোট পেশাদার গলফারই ১০ লাখ। সেখান থেকে আমি অলিম্পিকে যাচ্ছি ৬০ জনের মধ্যে থেকে- এতেও তো বুঝে নেয়া যায় অর্জনটা কতখানি।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 2277044277818129904

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item