জলঢাকায় মাদ্রাসার চাঁদা উত্তোলনে প্রাণ গেল শাকিলের

বিশেষ প্রতিনিধি ৮ জুন
শাকিলকে(১৪) কোরআনে হাফেজ করার ইচ্ছা ছিল অসহায় মা হালিমা বেওয়ার। কিন্তু  মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের জোড় করে  চাপিয়ে দেয়া মাদ্রাসার জন্য সাহার্য্যরে চাঁদা তুলতে গিয়ে মহেন্দ্র ট্রাক্টরের  ধাক্কায় নিহত হয়েছে শাকিল। মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে এ ঘটনাটি ঘটে নীলফামারীর জলঢাকা -ডোমার সড়কের মুছার মোড় নামক স্থানে। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লাগে মাদ্রাসা কর্র্র্তৃপক্ষ। অভিযোগ মতে আজ বুধবার  প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে থানা পুলিশ ছাড়াই  ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফাদফা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শাকিলের পরিবার পায় ৩০ হাজার টাকা ও প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নেয় ২০ হাজার টাকা। এরপর বুধবার দুপুরে শাকিলের লাশ দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে চাঁদা উত্তোলন বন্ধের দাবি করেছে।
নিহত মাদ্রাসা ছাত্র শাকিল জলঢাকা উপজেলার কাঁঠালী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়াডের পশ্চিম কাঁটালী গ্রামের রমজান আলীর ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। গত আড়াই বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় শাকিলের বাবা।
 জানা যায় ছোট ছেলে শাকিলকে কোরআনের হাফেজ বানাতে শাকিলকে  মা হালিমা বেওয়া জলঢাকা উপজেলা গোলনা ইউনিয়নের ভাদুরদরগাঁ রফিকিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন শাকিলকে। সেখানে আবাসিক ছাত্র হিসাবে শাকিল থাকতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই মাদ্রাসায় আবাসিক হিসাবে ১৭ জন ও অনাবাসিক হিসাবে ১০ সহ ২৭ জন ছাত্র রয়েছে। সরকারের সমাজসেবার রেজিষ্ট্রেশনে মাদ্রাসাটি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে অনুদানও পেয়ে থাকে। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুল আলম কবির। শিক্ষক হিসাবে রয়েছে হাফেজ আনোয়ার হোসেন ও মানিক মিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাদ্রাসার বেশ কিছু ছাত্র জানায়,  ছাত্রদের দিয়ে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা তোলানো হয়। রমজান মাসের পহেলা রোজায় সেহেরীর পর ফজরের নামাজ শেষে ঘন্টাখানেক ছাত্রদের কোরআন পাঠ করানো হয়। এরপর সকাল ৮টায় রোজা অবস্থায় ছাত্রদের জোড়পূর্বক  চাঁদা বা সাহার্য্য  তোলার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় গ্রামে গ্রামে। ঘটনার দিন মঙ্গলবার একটি বাইসাইকেলে শাকিল ও অপর ছাত্র মাজাহারুল(১৫) সহ পাঙ্গা মটকপুর গ্রামে পাঠিয়ে দেয় মাদ্রাসার হুজুর আনোয়ার হোসেন। ওই দুই ছাত্র গ্রামে ঘুরে ঘুরে ১০ কেজি চাল ও এক মন ধান সংগ্রহ  করে। তা নিয়ে বাইসাইকেলে ফেরার পথে মহেন্দ্র ট্রাক্টরের ধাক্কায় শাকিল গুরুত্ব আহত হয়। শাকিলের  সাথে থাকা মাজাহারুল ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। এ সময় ট্রাক্টরটি পালিয়ে যায়। পথচারীরা শাকিলকে ডোমার হাসপাতালে নিয়ে যায় । হাসপাতালে নেয়ার আগেই শাকিল মারা যায়।  খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আনোয়ার হোসেন হাসপাতালে আসেন। এরপর একটি মাইক্রোবাসে বিকাল ৬টায় শাকিলের লাশ পাঠিয়ে দেয়া হয় তার পশ্চিম কাঠালীর বাড়িতে। এলাকাবাসী মাইক্রোটি আটক করে রাখে। রাত শেষে বুধবার সকালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ঘটনাটি ৫০  হাজার টাকায় দফা রফা করেন এবং  পুলিশ কে বিষয়টি অবগত না করে  লাশ দাফনে সক্ষম হয়।
নিহত শাকিলের এক চাচা নাম প্রকাশ না করার সত্বে জানান শাকিলের পরিবারকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেয়। আর ঘটনা সমাধানের জন্য এক প্রভাবশালী হাতিয়ে নেন ২০ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে কাঁঠালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন তুহিন জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মিমাংসা করেছে। নিহত শাকিলের পরিবারের কোন আপক্তি না থাকায় লাশ দাফন করা হয়। বিষয়টি এখন পরিত্যাক্ত ঘটনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে ওই মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি কামরুল আলম কবিরের সাথে মোবাইলে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইলে কল হলেও রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জলঢাকা থানার ওসি দিলওয়ার হাসান ইনামের সাথে কথা বলা তিনি জানান এমন ঘটনার খবর তার জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 610948360502951353

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item