সুইফটের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের আড়াই লাখ ডলার চুরি
https://www.obolokon24.com/2016/05/sonali-bank.html
ডেস্কঃ
এবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের আড়াই লাখ ডলার চুরির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
পুলিশের তদন্তে ২০১৩ সালে সুইফট কোর্ড ব্যবহার করে এই টাকা লোপাটের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। সে সময়ে সুইফট কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনা বাংলাদেশ জানিয়েছিল। তবে তুরস্কে পাচার ওই অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার এক বছর পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তখনকার সচিব এম আসলাম আলম সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে ওই ঘটনা প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অজানা ছিল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত বার্তা সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরি হয়ে তুরস্কে প্রবেশ করে। এ ব্যাপারে তখন সুইফট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু ওই অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আর এ ব্যাপারে তেমন জানাজানিও হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই বিষয়ও পর্যালোচনা করে দেখছে বাংলাদেশ পুলিশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সুইফটের মাধ্যমে যেভাবে ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়েছে, ঠিক একই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের অর্থ লোপাটের সময়ও। হয়তো অর্থ চুরির দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। ওই ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা উদ্ঘাটনে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের আইটি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, ওই ঘটনায় হ্যাকাররা ব্যাংকের কোনো একটি কম্পিউটারে কি লগার সফটওয়্যার বসিয়ে পাসওয়ার্ড চুরি করে। পরে সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠানো হয়।
বিষয়টি ধরা পড়ার পর অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু পরে আর তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, ছেড়ে দেয়া হয়েছিল দুজনকেই।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুইফটের সংযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে চারটি অর্থ চুরির ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ঘটেছে দুটি ঘটনা। সোনালী ব্যাংকের ঘটনায় সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও বিষয়টি অনেকটা বিস্মৃত হয়ে গেছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে ইকুয়েডরে বাংকো ডেল অস্ট্রো থেকে এক কোটি ২০ লাখ ডলার এবং ভিয়েতনামের তিয়েন ফোং ব্যাংক থেকে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটে।
বিশ্বের ১১ হাজারের বেশি ব্যাংক সুইফটের সংযোগ ব্যবহার করে। কিন্তু হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটায় বিশ্বাসযোগ্য হারাতে বসেছে সুইফট।
সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় সুইফটের মুখপাত্র নাতাশা দে তেরান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, আমরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে আমরা ওই ধরনের দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছি।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সঞ্চিত ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার যায় শ্রীলঙ্কায়। বাকি অংশ প্রবেশ করে ফিলিপাইনে।
হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুইফটের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁত নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়। তবে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের মেরুদণ্ডে পরিণত হওয়া এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।