উত্তরাঞ্চলে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকার আক্রমণ


ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী, ৭ এপ্রিল॥


ম্যাংগো মিলিবাগ বা জায়ান্ট মিলিবাগ পোকার আক্রমনে ছেয়ে গেছে রংপুর বিভাগের নীলফামারী সহ আট জেলার কাঁঠাল ও আমগাছে। বিশেষ করে গরমে এই পোকার বংশ বেশী করে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই পোকার  আক্রমনে আম ও কাঠাল বাগানের চাষিরা পড়েছে বিপাকে। কৃষিবিভাগের পক্ষে গাছে ফানেল ট্রেপ বা বেশী বেশী পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এই পোকা মানব দেহের ক্ষতি কারক কিনা এ নিয়ে আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কীটতত্ত্ববিদ  বলছে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এই পোকা জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো হুমকি নয়। তবে সংবেদনশীল মানুষের শরীরের সং¯পর্শে এলে চুলকানি হতে পারে।  

বাগান চাষী সহ বিভিন্ন বাসাবাড়ির ভুক্তভোগীরা জানায় কাঁঠাল ও আমগাছের শিকড়ের ওপরের অংশ থেকে গা বেয়ে উঠে আঠার মতো লেগে আছে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা। এসব পোকা কাঁঠাল ও আমগাছগুলোর শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগের কচি পাতা, কুশি, ডগা, ফলের বোঁটায় দলবদ্ধভাবে বসে চুষে খাচ্ছে অঙ্কুরিত ফলের রস। এতে কাঁঠালের মুচি, আমের মুকুল ও নতুন পাতাগুলো কালো বর্ণ হয়ে ঝরে পড়ছে। এ ছাড়া জায়ান্ট মিলিবাগ বিভিন্ন ফলদ গাছেও দেখা গেছে। চাষীরা বলছে গরম যত পড়ছে এই পোকার হার  তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
আক্রান্ত গাছসংলগ্ন ঘরের দেয়াল, মেঝে, দরজা, জানালায় এই পোকা দেখা যাচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, এই পোকা যে বাড়ির কাঁঠাল ও আমগাছে দেখা যাচ্ছে, সেই বাড়ির লোকজন অ্যালার্জিসহ নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এই পোকা থেকে রেহাই পেতে নানা প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রয়োগ করছেন তাঁরা। এরপরও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা । 
সুত্র মতে প্রতিবছর এই মৌসুমে এদের বেশি দেখা যায়। আবার দাবদাহ যত বাড়বে, এর বৃদ্ধি তত বাড়বে। তবে বর্ষা এলে আর এগুলো দেখা যায় না।
 উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুনীল কুমার দাসের মতে, এই পোকাটি দমনে ফানেল ট্রেপ ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ট্রেপ ও গাছের মাঝামাঝি বাকলের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় মোম দিয়ে বন্ধ করে কীটনাশক ছিটিয়ে ও আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটি শোধন পদ্ধতির মাধ্যমে এই পোকা প্রতিরোধ করা যায়। আর এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে আক্রান্ত গাছের মালিকদের দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। 
নীলফামারী কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক গোলাম মোঃ ইদ্রিস বলেন কাঁঠাল ও আমগাছে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকার আক্রমণ-সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে গাছে একবার আক্রমণ করে, আবার পরের বছর সেই গাছেই ওঠে। তবে এটি দমন করা সম্ভব। এই পোকা দমনে সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো পানি ¯েপ্র করা।
জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক  নিয়ে আতঙ্কেরও সৃস্টি হয়েছে।  মানুষজনের মাঝে।তবে  এই পোকা জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো হুমকি বা আতংঙ্কা নয় বা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। তবে সংবেদনশীল মানুষের শরীরের সং¯পর্শে এলে চুলকানি হতে পারে বলে জানান বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মোছা. নূর মহল আখতার বানু। তিনি জানান এ পোকার মরফোলজি, জীবন বৃত্তান্ত, পোষক, বাংলাদেশে বিস্তৃতি, মৌসুমভিত্তিক প্রার্দুভাব, রাসায়নিক দমন, বোটানিক্যাল দমন, এবং সমন্বিত দমন বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম এ পোকা নিয়ে গবেষণা করেন। এই পোকা নিয়ে দীর্ঘ ৪ বছর গবেষণা করে পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তিনি জানান, এ পোকার বৈজ্ঞানিক নাম ড্রসিকা ম্যানজিফেরি। পরিবার মনোফ্লেবিডি এবং বর্গ হোমপ্টেরা।নূর মহল আখতার বানু বলেন, ২০০৩ সালে শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পোকা প্রথম দেখা যায়। তবে তখন প্রাদুর্ভাব অনেক কম ছিল। ধীরে ধীরে পোকার পরিমাণ বাড়ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও চীনে এ পোকার বিস্তার রয়েছে অনেক আগে থেকে। 
এই পোকার ক্ষতিকর দিক স¤পর্কে ড. নূর মহল বলেন এর নিম্ফ এবং পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা গাছের বিভিন্ন অংশ থেকে রস চুষে নেয়। গাছের পাতা, শাখা, পু®পমঞ্জুরী, ফল থেকে রস চুষে খাবার ফলে এই অংশগুলো শুকিয়ে যায় এবং পাতা, ফুল ও ফল ঝড়ে পড়ে। খুব বেশি মাত্রায় আক্রমণ হলে গাছে কোনো ফল আসে না এবং পুরো গাছটি মারা যেতে পারে। এছাড়া এই পোকা হ্যানিডিও সিক্রেশন করে এবং সেখানে সুটি মোল্ড ফার্নগাছ জন্মে । যার ফলে সালোক সংশে¬ষণের পরিমাণ কমে গিয়ে ফলনের মারাতœক ক্ষতি হয়। গাছে আক্রমণ প্রকট হলে স¤পূর্ণ গাছ পোকায় ছেয়ে যায়। এটি প্রধানত আম গাছের পোকা তবে এরা পেপে এবং কাঁঠাল গাছকেও মারাতœকভাবে আক্রমণ করে।
ড. নূর মহল বলেন, জায়ান্ট মিলিবাগ পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে এপ্রিল মাসে গাছের কান্ডের গোড়ায় পলিথিন পেঁচিয়ে উপরের অংশ খুলে রাখলে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা সেখানে জমা হবে। পরে সেখান থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে কিংবা মাটির ১ মিটার গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। এছাড়া মে-জুন মাসে গাছের মাটিগুলো সারিয়ে রোদে রাখতে হবে যাতে এ পোকার ডিম নষ্ট হয়ে যায় কিংবা পাখি খেয়ে ফেলে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5743302863153043015

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item