স্বামীর দাবিকৃত যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে মেরে ফেলার চেষ্টা

মো. জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

স্বামীর দাবিকৃত যৌতুক প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় ফাহমিদা মল্লিক (২০) নামের একজন গৃহবধূকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই বধূর সর্বশরীর থেতলে দিয়েছে। গতকাল এ ঘটনাটি ঘটেছে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া হাজী কলোনী মহল্লায়। বধূর ভাই সাংবাদিক তন্ময় মল্লিক গুরুতর অবস্থায় বোনকে স্থানীয় ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ার মৃত আজগার মল্লিকের মেয়ে ফাহমিদা মল্লিকের সাথে নতুন বাবুপাড়া হাজী কলোনীর শেখ আমানতের ছেলে মাসুদ রানা মুকুলের বিয়ে হয় ২০১২ সালের ২৫ মে। বিয়ের সময় মাসুদ রানা ফুলপাত্র ও মেয়ের সুখের কথা ভেবে ফাহমিদার বাবা জামাতাকে নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের গহনা দেন। বিয়ের মাত্র ৩ মাস যেতে না যেতেই যৌতুকলোভী মুকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা আরও ২ লাখ টাকা আনার চাপ দেয়। স্বামী ও তার পরিবারের ওই অন্যায় দাবি তৎক্ষনিক পূরণ করতে না পারায় শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। কিন্তু এরপরেও সব সহ্য করে সংসারে রয়ে যায় ফাহমিদা। এভাবে প্রায় ৪ মাস অমানসিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে ওই বধূ তার বাবাকে সব খুলে বলেন। এক পর্যায়ে মেয়ের উপর শারীরিক নির্যাতন বন্ধ ও সুখের কথা ভেবে ঋণ নিয়ে জামাতার হাতে নগদ আরও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু এতেও যৌতুকলোভী স্বামীর মন ভরে না। দাবিকৃত অর্থের বাকি ৭৫ হাজার টাকাও তার চাই। বাবার সংসারের অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ায় ওই টাকাটা দিতে পারেনি ফাহমিদা। এ কারণে গতকাল স্বামী মুকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই বধূর সর্বশরীর থেতলে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। খবর পেয়ে সাংবাদিক তন্ময় মল্লিক বোন ফাহমিদাকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায় স্থানীয় ১০০ শয্যা হাসপাতালে। বর্তমানে ওই বধূ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
সাংবাদিক তন্ময় মল্লিক জানান, এর আগেও যৌতুকের জন্য তার বোন ফাহমিদাকে শারীরিক নির্যাতন চালানো হলে ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর যৌতুক আইনে নীলফামারী আদালতে মামলা দেয়া হয়েছিল। আসামী করা হয়েছিল ওই বধূর স্বামী মাসুদ রানা (৩৪), ভাসুর মাসুদ আক্তার বকুল (৩৬), ননদ মোছা. লতা বেগম (৪০) ও ননদের মেয়ে জেসমিন আবেদীন রুমা সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় গত ১৬ মার্চ ছিল মামলার ধার্য্য দিন। ওইদিন জেলে যাওয়ার ভয়ে মুকুল তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাবে না এবং স্ত্রীকে পুনঃমর্যাদা দিয়ে সংসার করবে বলে আদালতে অঙ্গীকারনামা দিয়ে নিজ সংসারে নিয়ে আসে। এরপর ওই পরিবারের সদস্যরা পুনরায় চড়ায় হয়ে ফাহমিদাকে এলোপাতারি মারডাং সহ চুলের মুঠি ধরে ঘরের বাইরে বের করে দেয়। এরপরেও ওই বধূ তার স্বামীর ঘরে ঢুকার চেষ্টা করলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা চালায়। ওই সময় বধূর আত্মচিৎকারে মহল্লাবাসী ছুটে এলে ফাহমিদাকে উদ্দার করে পুলিশের এসআই মো. নজরুল ইসলামকে খবর দিলে তার ওই বধূকে মারাত্মক গুরুতর অবস্থায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উপজেলার কুন্দল এলাকার নাজমা আখতার বুলি জানান, মাসুদ রানা মুকুলের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল প্রায় ১৭ বছর আগে। স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা তাকেও যৌতুকের জন্য নির্যাতনসহ মাথার চুল কেটে দিয়েছিল। পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এছাড়া উপজেলার পাটোয়ারী পাড়ার মজিবরের কন্যা মুক্তি ও শ্বাষকান্দর এলাকার মইনুদ্দিনের মেয়ে দুলালীরও বিয়ে হয় লম্পট মুকুলের সাথে। নিজেকে ফুলপাত্র ও বিনা যৌতুকে বিয়ে করার কথা বলে সরল শান্ত মেয়েদের বিয়ে করে পরবর্তীতে চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন।
এসব ব্যাপারে কথা বলতে গেলে মুকুল জানায়, মেয়ে মানুষ হলো পায়ের জুতা। পুরাতন হলে ফেলে দেয়াই ভালো। মামলা করে কেউ তার কিছুই করতে পারবে না। কারণ টাকা থাকলে মামলার ঝামেলা পকেটে থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যৌতুকলোভী স্বামীর অত্যাচারে শিকার ফাহমিদা বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। অভিযোগ মিললে দেখা যাবে টাকা দিয়ে মামলা ঝামেলা কোন পকেটে থাকে। অচিরেই ওই লম্পট স্বামীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3185011224173038062

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item