নীলফামারীর ৫ ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হলো সুষ্ঠু নির্বাচন
https://www.obolokon24.com/2016/03/nilphamari_39.html
বিশেষ প্রতিনিধি,নীলফামারী॥
উৎসব মূখর পরিবেশে নীলফামারী সদরের ৫টি ইউনিয়নে পরিষদের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ)সকাল ৮টা থেকে ভোটারদের দীর্ঘ সাড়িতে দাড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়। কোন প্রতিদ্বন্দীপ্রার্থী ভোট গ্রহনের কোন অনিয়ম বা কারচুপি কিংবা জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ করেননি। বরং অবাদ সুষ্ঠ নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসককে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিকাল ৪টায় ভোট শেষে ভোটগননা শুরু করা হয়।
আমার ভোট আমি দিয়েছি, দেখে শুনে বুঝে দিয়েছিল। এইবার হামরা ভোট দেখুনি ও দিনো বাহে। ভোট কেন্দ্র কায় (কে) দখল করিবে। গুন্ডা পান্ডা সন্ত্রাসী- ওমার খাওয়া নাই। পিঁপড়া মাছিও সেন্দাবার (প্রবেশ) পারে নাই। শেখের ব্যাটি শেখ হাসিনার সরকার এইবার দেখে দিলে অবাধ সুষ্ঠ ভোট হবার লাগছে। নির্বাচন চলাকালিন এই কথা গুলো বলেন লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের শীশাতলি বাজারে রূপাকান্ত রায় নামের এক ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। বিগত সকল নির্বাচনকে হার মানিয়ে দিয়েছে এবারের ইউপি নির্বাচন। ম্যাজিষ্ট্রেট,পুলিশ বিজিবি,র্যাব,আনসার বাহিনীর যে কড়াকড়ি ছিল তাতে কারো বাপের সাধ্য ছিলনা ভোট ডাঙ্গে নেয়।
ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারাও বললেন এবার সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে সাধারন ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়ের লাইন অভিভুত করেছে। ধারনা করা হচ্ছে এবার নীলফামারীর ওই ৫ ইউনিয়নে গড়ে প্রায় ৮০/৮৫ ভাগ ভোট পড়েছে। ভোট চলাকালিন সকাল ৯টার দিকে সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের কাছারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। এসময় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন বলেন, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭০৭। ভোটারদের ভিড়ে বুথ বৃদ্ধি করে ভোট গ্রহন শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে ৬০০ ভোট পড়ে। সারে নয়টায় পলাশবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একই চিত্র দেখা যায়। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা গাওছুল আযম বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২০৩৭। এরই মধ্যে এখানে ৬০০ ভোট পড়েছে।
দুপুর সারে ১২টায় লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছড়ি দখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাহফুজুল হক জানান এই কেন্দ্রে ১৩৬১ ভোট। সে সময় ভোট পরে ১০০৬। তিনি মন্তব্য করে বলেন এবার ােটের দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছন্নবোধ করছি। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোটাররাও দলে দলে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট প্রদান করেছে। কোন হুমকী,হামলা, ছিলনা। প্রশাসনের কঠোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভোটার সহ আমাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেছে ।
একই ইউনিয়নের ককই বড়গাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি কম। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, ভোটার উপস্থিতি সকালের দিকে বেশি ছিল। দুপুরের পর আবারও বাড়তে পারে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬৬০। এবং ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা চালাতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যায় একজন। লক্ষ্মীচাপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে কাকাতো ভাইয়ের ভোটটি দেয়ার চেষ্টা করছিল কলেজ ছাত্র সবুজ (১৭)। না দিতে পারেনি। ধরা পড়ে যায় সে। নিজেই ঘটনাটি স্বীকার করায় নির্বাচনের ভ্রাম্যমান আদালত তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। সেই সাথে সবুজ মুচলেকাও লিখে দিয়েছে জীবনের জাল ভোট দেয়ার চেস্টা করবেনা কোন দিন। শুধু তাই নয় অবৈধ ভাবে ভোট কেন্দ্রের এলাকায় মোটর সাইকেল ব্যবহার করায় ৪ ব্যাক্তিও আটক হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। পরে তাদেরও ভ্রাম্যমান আদালত দুই হাজার ২শত টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেত আলী। প্রশাসনের কড়কড়ি এমন নজরদারিতে স্বাগত জানায় সাধারন ভোটাররা।
দুপুর দুইটার দিকে চওড়া বড়গ্ছাা ইউনিয়নের উত্তর চওড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি কম। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এহছানুল হক বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২২৯১। এর মধ্যে ১৬০০ ভোট গ্রহন করা হয়েছে।
আড়াইটার দিকে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের কিত্তনিয়া পাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় একই চিত্র। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. রেশম আলী বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২১২৬। এখন পর্যন্ত ১৮০০ ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে।
তবে ভোট গ্রহনে কোনো কারচুপির অভিযোগ করেননি কোনো প্রার্থী। লক্ষ্মিচাপ ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী আশরাফ আলী বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায় টহলে সক্রিয় ছিল পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু মারুফ হোসাইন সহ সহকারি পুলিশ সুপারগণ সহ নীলফামারী সদর থানার ওসি শাহজাহান পাশা। বিজিবির ৫৬ ব্যাটালিয়ানের প্রধান লেঃ কর্ণেল সারোয়ার হোসেন কেও দেখা যায় নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। ওসি শাহজাহান জানান অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত ছিল সার্বিকভাবে।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ,জে,এম এরশাদ আহসান হাবিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুজিবুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেত আলী, সহকারি কমিশনার (ভুমি) ফখরুল আলম, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফুয়ারা খাতুন,মৌসুমী আফরিদা ছিল ভ্রাম্যমান টিমে নিয়ে সর্বদা টহলে ছিলেন।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন জানান সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ৫টি ইউনিয়নে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে।
নীলফামারী সদরের যে ৫টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, সেগুলো হলো, চওড়া বড়গাছা, গোড়গ্রাম, পলাশবাড়ি,লক্ষ্মীচাপ ও পঞ্চপুকুর।৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৮০ হাজার ৫৬৫ জন। ভোট কেন্দ্র ৪৫টি।
পাঁচটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে ২৪ জন প্রতিদ্বন্দীতা করেন। এ ছাড়া সাধারন সদস্য পদে ১৫৬ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৫২ জন প্রার্থী ছিল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই পাঁচ ইউনিয়নের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।