সকল সুযোগ সুবিধা সত্বেও তিনটি আন্তনগর চলেনা চিলাহাটি পর্যন্ত

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১৬ ফেব্রুয়ারী॥
জেলা শহর,ডোমার উপজেলা ও চিলাহাটি সীমান্তবাসী তিনটি আন্তঃনগর ট্রেনের সেবা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছে। খুলনাগামী আন্তনগর সীমান্ত বা রূপসা এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী আন্তনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনটি নীলফামারী হয়ে ডোমার ও চিলাহাটি পর্যন্ত চলাচলা করছেনা। নীলফামারী জেলা হলেও ওই ট্রেনগুলো কে চালানো হচ্ছে সৈয়দপুর উপজেলা রেলস্টেশন থেকে।  নীলফামারী,ডোমার ও চিলাহাটি পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ ট্রেন  চলাচলে পাকা লাইন স্থাপন সহ চিলাহাটি রেলস্টেশনে ট্রেনের কোচ মেরামত, ট্রেন ধৌতকরন ও পানি নেয়ার সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও কেন ট্রেন তিনটি চিলাহাটি পর্যন্ত চালানো হচ্ছে এমন প্রশ্ন উঠেছে এলাকাবাসীর।
জানা যায়  সস্প্রতিকালে সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী হয়ে ডোমার ও চিলাহাটি পর্যন্ত  ৫৩ কিলোমিটার রেলপথটি সংস্কার করা হয় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করে। এছাড়াও সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনে সাতটি রেলস্টেশন আধুনিকায়ন, চিলাহাটি স্টেশনে পরিদর্শন ঘর ও ওয়াশপিট স্থাপনে পৃথক আরেকটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়। 
এলাকাবাসী জানায়  নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি থেকে বর্তমানে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন সরকারীভাবে চলাচল করছে। এর ফাকে চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী একটি মেইল ট্রেন সকালের দিকে বে-সরকারী ভাবে দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে। চিলাহাটি ডোমার নীলফামারীসহ পার্শবর্তী পঞ্চগড় ও ঠাকুগায়ের ট্রেন যাত্রীরা চিলাহাটি হয়ে ট্রেনে দীর্ঘদিন যাবত যাওয়া আসা করে। চিলাহাটি রেল স্টেশন থেকে সপ্তাহে ৬দিন রাজশাহী গামী তিতুমীর এক্সেপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১.৪৫ মিনিটে চিলাহাটিতে প্রবেশ করে এবং ২.২০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে চলে যায়।
অপরদিকে ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টায় ঢাকা ক্যান্টম্যান রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে এসে  সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটে চিলাহাটিতে প্রবেশ করে। এখান থেকে আবার  রাত ৯.২০ মিনিটে ঢাকা পথে ছেড়ে যায়।
ডোমার উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বসুনিয়া জানান সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ সংস্কারের পর এখান থেকে আন্তঃনগর খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস রাতে  এবং সকাল  আন্তঃনগর খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ও ভোরে রাজশাহীগামী আন্তনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল করার কথা ছিল।  কিন্তু এই পথে শুধুমাত্র ঢাকাগামী আন্তনগর নীলসাগর ও রাজশাহীগামী তিতুমির ট্রেন চলাচল করছে। বাকী তিন ট্রেন গুলো   নীলফামারী জেলা  সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলছে। এতে করে জেলা শহরবাসী, ডোমার উপজেলা শহর ও চিলাহাটি সীমান্তবাসী ওই তিন ট্রেনের সেবা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে রয়েছে। অথচ সকালে রাজশাহী  বা সকালে কিংবা রাতের ট্রেনে খুলনা যেতে চাইলে তাদের চরম ভোগান্তির মাধ্যমে সৈয়দপুর গিয়ে ট্রেন ধরতে হয়। তাই তিনি ট্রেন তিনটি অচিরেই চিলাহাটি পর্যন্ত চলাচলের দাবি করেন।
 এদিকে রেলের একটি সুত্র জানায় আন্তনগর ট্রেনে যেসব চালক, গার্ড, এটেনডেন্স, ট্রেন পরিস্কারকারী ও লাইনম্যান রয়েছে তারা সকলে পরিবার পরিজন নিয়ে সৈয়দপুরের পরের রেলস্টেশন পার্বতীপুর বসবাস করে। তারাই আন্তনগর সীমান্ত,রূপনা ও বরেন্দ্র ট্রেনে ডিউটি করে। ট্রেন তিনটি চিলাহাটি থেকে চলাচল করলে তাদের চিলাহাটির রেলওয়ে বাসভবনে থাকতে হবে। কিন্তু তারা কেউ চিলাহাটি যেতে চায়না। তাদের এক ধরনের ম্যানেজ সিস্টেমে ট্রেন তিনটি চিলাহাটি যেতে পারছেনা।
আরেকটি সুত্র জানায় খুলনাগামী রূপনা ও সীমান্ত ট্রেনের জ্বালানী নিয়েও ব্যবসা হয়ে থাকে। এটি সৈয়দপুর থেকে করা হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে ওই ট্রেন দুটিতে যাত্রীদের ওঠানামা করতে হচ্ছে।অন্তত তিন ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে ঝাঁপিয়ে নেমে, আবার চার ফুট উঁচু সিঁড়ি বেয়ে ট্রেনে ওঠা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বয়স্ক ও শিশুরা এভাবে ট্রেনে ওঠানামা করতে পারে না। অসুস্থ ট্রেনযাত্রীর জন্য এভাবে ট্রেনে ওঠা খুবই কষ্টকর।
সীমান্ত ও রূপসা ট্রেন দুটি চলাচল করে সৈয়দপুর-খুলনা রেলপথে। ওই ট্রেন দুটির শেষ গন্তব্য সৈয়দপুর হওয়ায় এখানে সারতে হয় যান্ত্রিক খুঁটিনাটি (টিএক্সআর ফিটিং)। ফলে ওই ট্রেন দুটিকে দাঁড় করাতে হয় দুই পাশেই প্ল্যাটফর্ম নেই এমন লাইনে। ফাঁকা রেলপথে ট্রেন দাঁড় করালে সহজে রেলকর্মীরা ট্রেনটির বগির (চাকার) নিচে ঢুকে যান্ত্রিক রণাবেণ করতে পারেন। আর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড় করালে রেলকর্মীদের ট্রেনের বগির নিচে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে এক কর্মচারী বলেন, ট্রেনগুলো প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে যাত্রী নামানোর পরও টিএক্সআর ফিটিং দেওয়া যায়। কিন্তু এমন কাজ করতে ওই ট্রেনটিকে কয়েক দফা এক লাইন থেকে অন্য লাইনে নিতে হবে। এর ফলে জ্বালানি খরচ হয়। যদিও রেলওয়ে কর্তৃপ জ্বালানি সংক্রান্ত ওই বরাদ্দ দিয়ে থাকে। তবে ট্রেনের লোকো মাস্টাররা (ট্রেনচালক) জ্বালানি তেল সাশ্রয় করে তা চুরি করেন বলেই তাঁরা ট্রেন দুটি স্টেশন ডকে আনা-নেওয়া করেন না।
রেলওয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ সাধারন সম্পাদক ও সৈয়দপুর রেলকারখানার সাধারন সম্পাদক মোকসেদুল মোমিন বলেন আমরা সকল ট্রেন   নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে চালানোর জন্য বারবার দাবি করে আসছি। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রনালয়ে চিঠিও দেয়া হয়। তিনি রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 1733284458346344393

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item