সৈয়দপুরের ঝুট কাপড়ের তৈরি পোষাক অর্থনীতিতে সাফল্য এনেছে

মোঃ জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে ঃ

ঝুট কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের প্রায় সহ¯্রাধিক পরিবার। দেশের বাজার দখল করে এসব পোশাক এখন যাচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে। নীলফামারী জেলার সৈযদপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, মুন্সিপাড়া, পুরাতন বাবুপাড়া, গোলাহাট, ঘোড়াঘাট, বাঁশবাড়ি, নিয়ামতপুরসহ আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ২২টি ক্যাম্পে বাড়ি বাড়ি গড়ে উঠেছে ুদ্র পোশাক কারখানা। প্রতিটি কারখানায় সর্বনিু ২টি থেকে সর্বোচ্চ ৪৫টি মেশিন রয়েছে।
পুঁজিবিহিন খুব ছোট্ট পরিসরে বাড়ী সংলগ্ন সৈয়দপুর গার্ডপাড়ায় মাত্র দুটো সাধারন মেশিন দিয়ে ১৯৯৮ সালে দু’ভাই মিলে কাজ শুরু করেছিলাম। হাসি মুখে কথাটি বললেন রপ্তানিমূখী ক্ষুদ্র রিতিসা গার্মেন্টেসের স্বত্বাাধিকারী মো: শাহীন আকতার। তিনি এবং তার বড় ভাই রেয়াজ আলম বাবু দুজনে মিলে গার্মেন্টস এর উচ্ছিষ্ট ছাট কাপড়গুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগাড় করে এনে মোবাইল থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও জ্যাকেট তৈরী করে এলাকার গ্রাম-গঞ্জের চাহিদা মেটাতেন। পরবর্তীতে যখন এর ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়, তখন দুটি আরো মেশিন কিনে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমে লেগে যায় দু’ভাইসহ আরো দুজন কারিগর। ধীরে ধীরে ছোট্ট এ সেলাই কারখানার চাহিদা বাড়তে থাকে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তৈরীকৃত এ মোবাইল প্যান্ট পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মুম্বাই শহর, কোলকাতার শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িসহ নেপাল এবং ভূটানে এ পোষাক রপ্তানি শুরু করে।
সৈয়দপুরের এ উৎপাদিত পন্য ওইসব দেশে যখন ব্যাপক চাহিদা দাঁড়ায়, তখন এ মিনি গার্মেন্টসগুলো পুঁজির অভাবে দিক বেদিক হতে থাকে। ঠিক তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড: আতিয়ার রহমানের চোখে পড়ে। ২০১১ সালে তিনি তার অনান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সৈয়দপুরের এ কারখানাটি পরিদর্শন করেন। ওই সময় সৈয়দপুরে এ রকম আরো অন্যান্য কারখানার উদ্যোক্তাদের নিয়ে তিনি কথা বলেন এবং তাদের সমস্যার কথা শুনেন। কারখানাগুলো পরিদর্শনের অল্পকিছুদিনের মধ্যেই তিনি সুদ শতকরা ৯ টাকা হারে মডগেজ ছাড়াই ৩৫জন উদ্যোক্তাদের মাঝে এসএমি ফান্ড থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিতরন করেন। এ সময় শাহীন এবং বাবুসহ অনান্যরাও সাধারন মেশিন সরিয়ে একাধিক আটো মেশিনের ব্যবস্থা করে এবং মহিলাদের কর্মসংস্থানও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঝুট কাপড় ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন দেখে সৈয়দপুর রপ্তানিমূখী ুদ্র মালিক গ্র“পের মধ্যে আরো ছোট ছোট  উদ্যোক্তাকে একত্রিত করে ৮০জনের মধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরন করেন।
ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি পোষাক ও রপ্তানিমূখী ক্ষুদ্র মালিক মো: শাহীন আকতার বলেন, আমরা ঝুট কাপড়কে রিসাইকিং এর মাধ্যমে নিজেদের ডিজাইনে মানসম্পন্ন পোষাক তৈরী করে সস্তা দামে লোকাল চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে আছি গর্বের সাথে। তিনি একটি সরকারি জরিপের উদ্ধৃত দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ হতে যত পোষাক ভারতে রপ্তানী হয় তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী সৈয়দপুরের তৈরি পোষাক রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যে পরিমান বিদেশ হতে দেশে রেমিটেন্স আনছি বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের আরো একটু নজর দেয়া উচিৎ বলে অনান্য ব্যবসায়ীরাও মনে করেন। বর্তমানে এ দুভাইয়ের প্রত্যেকের নিজস্ব একটি করে আলাদা কারখানা প্রয়োজন এবং প্রত্যেকটি কারখানায় ৫০টি করে আটো মেশিন রয়েছে। যেখানে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশী। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আমাদের এ সময় কমপে ১০ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দেয় তাহলে আমাদের আরো অনান্য ুদ্র উদ্যোক্তা সাধারন মেশিন পরিহার করে আটো মেশিনে পোষাক তৈরী করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাফল্যের অবদান দ্রুত রাখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, এ সমস্ত পোষাক কারখানা সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সরকার যদি এদের নির্দিষ্ট একটি বড় জায়গা স্থায়ী বরাদ্দ দিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন, তাহলে অর্থনীতির মান উন্নয়নের সাথে পরিবেশেরও উন্নয়ন সাধিত হবে। এটি হলে বিদেশী বায়ার সরাসরি এ ঝুট কাপড় তৈরী কারখানায় এসে তাদের মনমত পোষাকের র্অডার দিতে পারবে বলে তিনিসহ অনান্য ব্যবসায়ীগণ মনে করেন।
সৈয়দপুর রফতানিমুখী ুদ্র গার্মেন্টস মালিক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান দুলু জানান, তারা ঢাকার মিরপুর, কালিগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, টঙ্গী, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বড় বড় পোশাক কারখানাগুলো থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে এনে ট্রাউজার, জ্যাকেট, টি-শার্ট, শর্ট প্যান্ট, মোবাইল প্যান্ট ইত্যাদি তৈরি করে দেশের বাজার দখল করে নিয়েছে। এমনকি তৈরিকৃত এসব পোশাক পাঠানো হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে।  তিনি বলেন, সৈয়দপুরের বাণিজ্যিক শহরে প্রায় ২৫টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এসব ব্যাংক সহজ শর্তে ঋন প্রদান করলে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিকরা উপকৃত হবে এবং এর সম্প্রসারণ আরও ঘটবে বলে আশা করেন তিনি।

পুরোনো সংবাদ

কৃষিকথা 6513259921326896181

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item