মুক্তিযোদ্ধার হাতে ভিক্ষার ঝুলি

মোঃ জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে -

লেখক সাংবাদিক ও সম্পাদক মোঃ রেজানুর রহমান দুদুর মতে জাগো বাহে কোন্ঠে সোবায়? দ্যাস স্বাধীনের সময় যে মানুষটার হাতোত রাইফেল আছিলো, দ্যাস স্বাধীন করার জন্যে যায় জীবন দিবার রাজি আছিলো এ্যারপর হাতোত আছিলো বিজয়ের পতাকা, সেই হাতোত আইজ ভিক্ষার ব্যাগ। না, এটা কোনো কাল্পনিক সংলাপ নয়, একবারে বাস্তব চিত্র। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে আনছার আলী নামের যে ব্যাক্তিটি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেই ব্যক্তির হাতে আজ ঝুলছে ভিক্ষার ঝুলি। দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছরেও তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারী সাহায্য সহযোগিতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোরের সদর উপজেলার কারবালা ধোপাপাড়ার মৃত দৌলতের ছেলে আনছার আলী ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল একই এলাকার ১৭ জন যুবকে নিয়ে চলেযান ভারতের বনগা ক্যাম্পে। তার ভারতীয় সার্ভিস নং- ১০৮০০, ভলিয়ম নং-৪। সেখানে ১১ দিন প্রশিক্ষণের পর ফাস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হিসেবে তাকে পাঠানো হয়েছিল মেঘালয় রাজ্যের তেলধালী ক্যাম্পে। সকল প্রশিণ শেষে দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন আনছার আলী। মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টরের আওতাভুক্ত জামালপুর জেলার কামালপুরে যুদ্ধ করার সময় পাকহানাদার বাহিনীদের হাতে নিহত হন ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন। কমন্ডার সালাউদ্দিন এর মরদহ উদ্ধার করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন আনছার আলীও। ভারতের লখনও হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসা শেষে আনছার আলী আবারও যোগদেন মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘদিন যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে আনছার আলী বাড়ি ফিরেন ১৯ ডিসেম্বর। নিজ গ্রাম কারবালায় তিনি প্রথম উত্তোলন করেন বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকা। ৩ দিন বাড়ীতে থাকার পর একই গ্রামের সহকর্মী আবু বক্কর সিদ্দিক উরফে বাকাসহ ২৩ ডিসেম্বর যোগদেন ঢাকার ফাস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। সেখানে তার সার্ভিস নম্বর হয় ৩৯৫০৮৪৫। ১ বছর পর তাকে বদলী করা হয় চট্টগ্রামের এইট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে আনছার আলীকে বদলী করা হয় কুমিল্লা, ময়নামতি ফাইভ বেঙ্গল রেজিমেন্টে।
দাম্পত্য জীবনের মোহ আর পারিপার্শ্বিক কারণে ১৯৭৪ সালের শুরুর দিকে চাকুরী ছেড়ে আনছারী আলী চলে আসেন যশোরে। বিয়ে করেন একই গ্রামের আফরোজা বেগমকে। তাদের সংসারে একে একে জন্ম নেয় তিন ছেলে ও এক মেয়ে। চাকুরী ছাড়ার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তার খোজ খবর না নেয়ায় আনছার আলী ১৯৯০ সালে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে।
দেশ বাঁচাতে আনছার আলী যে হাতে একদিন অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, জীবন বাঁচাতে ওই হাতে ধরেন রিক্সার হাতল। সৈয়দপুর রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন জাতীয় শ্রমিক পার্টি কার্যালয়ের পিছনে একটি কুঁড়ে ঘরে বসবাস শুরু করেন তিনি। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে কোন মতে দিনাতিপাত করে আসছেন। কিন্তু গত ২ মাস যাবত বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হওয়ায় ছেড়ে দেন রিক্সা চালানো। কিন্তু সংসার চলা বন্ধ হয়ে যায়। শেষে বাধ্য হয়েই শুরু করেন ভিাবৃত্তি।
গুলি বিদ্ধ হাতটি দেখিয়ে আনছার আলী বলেন মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত চিহ্নের ওপর আজ ভিার ঝুলি ঝুলছে। এরচেয়ে মরাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা রাজাকার ছিল স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল যারা, তারাই আজ সেজেছেন মুক্তিযোদ্ধা। অনেক খোজাখুজি করার পরও মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকায় তার নাম না দেখে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
সৈয়দপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, আনছার আলী প্রায় ২০ বছর ধরে রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন একটি কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে আসছেন কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগেই তিনি জানতে পেরেছেন আনছার আলী একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন আনছার আলীর মতো দেশের আনাচে-কানাচে অনেক প্রকৃত গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারের উচিত আনছার আলীর মতো গর্বিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান করে প্রকৃত সম্মানে ভূষিত করার পাশাপাশি সম্মানি ভাতা প্রদান করা।

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 2430792767162855236

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item