বেদে সস্প্রদায়ের জীবনে সৌর বিদ্যুতের আলো

 ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১৯ ফেব্রুয়ারী॥
বেদে সম্প্রদায়ের যাযাবর জীবনের অস্থায়ী বসবাসের খুপড়ি ঘরেও এখন সৌর বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। ওরা দেশের বিভিন্ন এলাকার পথে পথে ঘুরে সাপ ধরে বিক্রি করা, সাপের খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগানো, তাবিজ-কবজ বিক্রি করে তাদের  প্রধান পেশা ধরে রেখেছে। ঢাকার সাভারের অমরপুর, পোড়াবাড়ি, কাঞ্চনপুর ও বক্তারপুর এলাকার বেদে পল্লীর ¬একটি দল এসেছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর তিস্তা নদী  বিধৌত ডিমলা উপজেলায়।  এখানকার দশটি ইউনিয়নে তারা পেশার কাজ চালাতে তাদের আস্তানা গেড়েছে খুপড়ি ঘর বানিয়ে। দিন শেষে সন্ধ্যা নামলে তাদের অস্থায়ী খুপড়ি ঘরে জ্বলে উঠছে সৌর বিদ্যুতের আলো। সেই সাথে সৌর বিদ্যুতের খুপড়ি ঘরে  চলছে টেলিভিশন, চার্জ হচ্ছে মোবাইল।
 কথা হয় ডিমলায় আসা বেদে সম্প্রদায়ের  সর্দার কাজল মিয়া (৬৫) বললেন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের জীবনধারা পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন পেশা হিসাবে  বিষধর সাপের খেলা দেখিয়ে ও মেয়েরা সিংগা দিয়ে (পা হতে বিষাক্ত রক্ত রেব করে বাতের ব্যথা কমানোর একটি পদ্ধতি), দাঁতের পোকা বের করা, তাবিজ-কবজ বিক্রি ও যাদু দেখিয়ে সামান্য আয় রোজগার করলেও  জীবনকে আলোকিত করতে জীবনে আধুনিকতার ছোয়া লাগাতে নিজেদের অর্থায়নে সৌর প্যানেল ব্যবহার করছে। আমরা এখন দেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের এক ডিজিটাল যাযাবর সম্প্রদায়ে পরিনত হতে পেরেছি।তিনি আরো বলেন আগের জীবনে অন্ধকারে ঢেরা (অস্থায়ী খুপড়ি ঘরে) পেতে থাকতো হতো। এখন  ঢেড়ায় রাত্রী কালীন নিরাপত্তা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, মোবাইল ফোন ব্যবহারে চার্জিং সুবিধা, সোলার টিভি, সোলার ফ্যান ব্যবহার করে জীবনকে আধুনিক ভাবে উপভোগ করতে পারছি।যাযাবর দলের বিভিন্ন সদস্য হোসেন আলী (৪৪) সাধু মিয়া (৬০) সোহেল  (১৮) ছাইদুল (৩২) রজব আলী (১৮) জাহাঙ্গীর (২৮) শরিমিয়া (৪০) শহিদুল্যা (৭৫) বলেন এই ডিজিটাল যুগে তারা আর কষ্টের যাযাবর জীবন যাপন  থেকে রক্ষা পেয়েছে। বেদে কন্যা বৈশাখী আক্তার বলেন, আমার দাদী গ্রামে গ্রামে গাওয়াল করে সিঙ্গা লাগিয়ে, দাঁতের পোকা তুলে,তাবিজ-কবজ বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাড় করতেন। আর আমার বাবা শাহজাহান সাপুড়ে এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপের খেলা দেখান। গ্রামে ছোট একটি গালামালের দোকান দিয়েছি। এরপর বাপ দাদার পেশার টানে  আমি ডিমলা এসেছি। সাথে  মা উকিলা বেগম রয়েছে।  তিনি বলেন, জীবনমানের পরিবর্তনে সৌরবিদ্যু তাদের উপকারে এসেছে।  আরেক বেদে খয়ের উদ্দিন বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষের পেশা ত্যাগ করে গৃহস্থদের সঙ্গে মিলেমিশে চলার চেষ্টা করছি। আমাদের সন্তনরা পড়াশোনা করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে;  এখন চাকরিও করছে। তিনি বলেন বাপ দাদাদের পেশা ধরে রাখা হলেও অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যেমন আদিকাল থেকে বেদে নারীরা চুড়ি-ফিতা-খেলনা বিক্রি, শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা তোলা, তাবিজ-কবজ বিক্রি, সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসা, সাপের খেলা দেখানো, সাপের ব্যবসা করা, আধ্যাতিক স্বাস্থ্যসেবা দান, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, মৃত পশুর শরীরের অংশ এবং গাছগাছড়ার ওষুধ তৈরি করে বিক্রি, বানর খেলা ও জাদু দেখানো, মাছ ধরা, পাখি শিকার ইত্যাদি হরেক উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে অনেক বেদে নারী বিকল্প পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন স্থানীয় বাজারে দোকান করা, হাঁস-মুরগি বা কবুতর পালন, মাছ চাষ ও কাঁথা-কাপড় সেলাইয়ের মতো গৃহস্থ ঘরের কাজ। কেউ কেউ চলচিত্রের শুটিংয়ের জন্য সাপ ভাড়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রকৃতির দেয়া নিজেদের সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পাচ্ছেন। ছেলেদের এই প্রজন্মের বেশির ভাগই লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। তাদের পাশের গ্রাম বাড্ডায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে তিনি   দুঃখ করে বলেন তারা দীর্ঘদিন নিজস্ব একটি কবরস্থানের জন্য জায়গা চেয়েও পাচ্ছে না। তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করলে বর্তমানে বাড্ডা এলাকায় তাদের দাফন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ টাকা তাদের গুণতে হয়। তারা চায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা।                                

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4577057460314856501

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item